বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রার্থী হতে সমর্থন লাগবে জনপ্রতিনিধির

জেলা পরিষদ নির্বাচনের বিধিমালা প্রস্তুত করছে ইসি

গোলাম রাব্বানী

দ্রুত জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিধিমালা প্রস্তুত করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ ভোটার নয়, স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরাই কেবল ভোট দিতে পারবেন। আর প্রার্থীর প্রস্তাবক-সমর্থক হতে হবে তাদেরই। জেলা পরিষদ নির্বাচনের বিধিমালার খসড়ায় এমন বিধান রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসি সচিবালয়ের একটি সূত্র। এদিকে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজনে সরকারের গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় থাকতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সংকেত পাওয়ার পর নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করবে ইসি। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের জন্য বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা ইসির হাতে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী নির্বাচনবিধি ও আচরণবিধির খসড়া তৈরির কাজ চলছে। অক্টোবরের প্রথমার্ধে খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিধিমালা প্রস্তুতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যে দুই দফা পর্যালোচনা হয়েছে। ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কিছুদিনের মধ্যে খসড়া উপস্থাপনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

সূত্র জানিয়েছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য জেলার স্থানীয় সরকারের সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করা হবে। আর জেলা পরিষদের প্রার্থীদের প্রস্তাবক-সমর্থক হবেন তারাই। বিধিমালায় জনপ্রতিনিধিদের ভোটার রাখা হলেও তারা কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না বলে বিধি থাকছে। সেই সঙ্গে প্রতি জেলায় একটি করে ভোট কেন্দ্র, ভোট গ্রহণের সময় ও স্থান, ভোটার তালিকাসহ সামগ্রিক নির্বাচন পরিচালনার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বিধিমালায় থাকবে। প্রথমবারের মতো ভোটের আয়োজন করায় সরকার জেলা পরিষদ নির্বাচনের তারিখ বেঁধে দেবে। নির্ধারিত ওই সময়ের মধ্যে ভোটের তফসিল দেবে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি। ৫ সেপ্টেম্বর জারি হওয়া জেলা পরিষদ সংশোধন অধ্যাদেশের আওতায় স্থানীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানে নির্দলীয় নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনও নির্দলীয়ভাবে এর বিধিমালা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটার হন সংসদ সদস্যরা এবং তাদের প্রস্তাব ও সমর্থন ছাড়া কেউ প্রার্থী হতে পারেন না। জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীর প্রস্তাবক ও সমর্থকের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান অনুসরণ করা হচ্ছে। ২৫ বছর বয়সী বাংলাদেশের যে কোনো ভোটার জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারলেও ভোট দিতে পারবেন না। আর জনপ্রতিনিধিরা ভোটার হলেও প্রার্থী হতে পারবেন না। আইন অনুযায়ী প্রতিটি জেলায় স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের ভোটেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচিত হবেন। প্রতিটি জেলায় ১৫ জন সাধারণ ও ৫ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য থাকবেন। ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, ইতিমধ্যে জেলা পরিষদের সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচনের জন্য ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণের কাজও চলছে। আর এ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হবে জেলা সদরে। জেলা পরিষদের ১৫টি ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্র থাকবে ওই মূল কেন্দ্রেই। সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ এ নির্বাচন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা। সে ক্ষেত্রে নভেম্বরে তফসিল করতে হবে ইসিকে। বিদ্যমান অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, পরিষদ প্রথমবার গঠনের ক্ষেত্রে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে যে তারিখ নির্ধারণ করবে সে তারিখে ভোট হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, তফসিল ঘোষণার ক্ষমতা ইসির হাতে রয়েছে, কমিশনই তফসিল দেবে। প্রথমবার পরিষদ গঠনের পর সরকার ভোটের জন্য সময় নির্ধারিত করে না দিলে বরং অসুবিধা হবে। একবার ভোট হয়ে গেলে পরে মেয়াদ শেষের আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা ইসির হাতে দিলেও তফসিল ঘোষণার ক্ষমতা রাখা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের যে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রথমবার গঠনের পর সরকারের পক্ষ থেকে একটা সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ওই সময়ের মধ্যে আমরা ভোটের বিস্তারিত সময়সূচি (তফসিল) দিই। পরে আর তার প্রয়োজন হয় না; মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আমরা তফসিল করি। নির্বাচনবিধি ও আচরণবিধির খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর অক্টোবরের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশ হলে ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট করা সম্ভব হবে।’ উল্লেখ্য, তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার।

সর্বশেষ খবর