বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

ইতিহাসের সাক্ষী ভাঙা মসজিদ

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

ইতিহাসের সাক্ষী ভাঙা মসজিদ

কবে কখন কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মসজিদটি তা আজ আর কেউ সঠিকভাবে বলতে পারেন না। প্রকৃত ইতিহাসও নেই মসজিদটির। এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে। মসজিদটি নওগাঁ পৌরসভার কোমাইগাড়ী মহল্লার দেওয়ানপাড়ায় অবস্থিত। সবাই চেনে কোমাইগাড়ী দেওয়ানপাড়া ভাঙা মসজিদ নামে।

মসজিদের ইতিহাস সম্পর্কে নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কমিশনার দেওয়ান আবদুস সালাম বলেন, তার পিতা মৃত দেওয়ান রিয়াজ উদ্দিনের কাছে তিনি শুনেছিলেন তাদের পূর্বপুরুষ প্রায় ৪০০ বছর আগে সৌদি আরব থেকে এদেশে এসেছিলেন ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে। তারা ছিলেন দুই ভাই। গোলাম সরুফ আর গোলাম রসুল। তারা পরবর্তীতে কোমাইগাড়ীতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। দুই ভাই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদ তিন গম্বুজবিশিষ্ট। আছে ইমাম দাঁড়ানোর মিম্বর। মসজিদটি এক কাতারের। ৭-৮ জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারতেন। তখন এলাকায় মুসলমানের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। সম্ভবত সে সংখ্যা অনুযায়ী মসজিদ ছোট আকারে নির্মাণ করা হয়। জঙ্গল আর লতাপাতায় ঢেকে ফেলেছে মসজিদটি। এর মাঝেই দাঁড়িয়ে এখনো অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে মসজিদটি। কবে শেষবারের মতো নামাজ আদায় করেছিলেন মুসল্লিরা আজ তার কোনো প্রমাণাদি নেই।

মাটি থেকে প্রায় ১৬-১৮ ফুট উঁচু মসজিদটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট। খিলান করা প্রবেশ পথ। পাতলা ইটে চুন-সুরকি দিয়ে গাঁথুনি। পাশ দিয়ে এঁকে-বেঁকে চলে গেছে সরু পাকা সড়ক। তিনি বলেন, গোলাম সরুফের নাতি ফকির বক্স দেওয়ান ছিলেন একজন কামেল পুরুষ। মসজিদের পাশের সড়কের বিপরীত দিকে এখনো তার মাজার রয়েছে। সেই মাজারের একটি বড়ই গাছের ডাল সড়কের ওপর এসে পড়েছিল। আমি মিলাদ দিয়ে শিরনি বিতরণ করে ডাল কেটে মাজারের পাশে রেখে দিয়েছিলাম। পাড়ার বাচ্চু মোহরি সেই ডাল কাজে লাগানোর জন্য বাড়ি নিয়ে যান। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ডাল ফেরত দিয়ে মাজারে মাফ চেয়ে রক্ষা পেয়েছিলেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মসজিদে ওয়াকফ ভূ-সম্পত্তি কীভাবে ব্যক্তি মালিকানায় খতিয়ানভুক্ত হলো তা রহস্যজনক ব্যাপার। তবে মহল্লাবাসীর দাবি প্রাচীন মসজিদটি ভেঙে না ফেলে সংস্কার করে আগামী প্রজন্মের জন্য ইতিহাস সংরক্ষণ করে পাশে একটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হোক।

সর্বশেষ খবর