শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

৪০০ দিনে ৯ কোটি স্মার্টকার্ড ব্যয় ৮০ কোটি টাকা

গোলাম রাব্বানী

আগামী বছর ডিসেম্বরের মধ্যে ৪০০ দিনে ৯ কোটি নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার কার্ড বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ কোটি টাকারও বেশি। দেশজুড়ে চার ধাপে এ বিতরণ কার্যক্রম চালাবে ইসি। প্রথম ধাপে ঢাকার দুই সিটি ও কুড়িগ্রামে। দ্বিতীয় ধাপে খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় স্মার্টকার্ড বিতরণ      করা হবে। এরপর তৃতীয় ধাপে ৬৪টি জেলার সদর উপজেলা এবং চতুর্থ ধাপে বাকি সব উপজেলায় স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। নির্ধারিত সময়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, মাইকিং, ব্যানার, ফেস্টুনের মাধ্যমে কবে, কোথায়, কীভাবে বিতরণ করা হবে তা নাগরিকদের জানিয়ে দেবে নির্বাচন কমিশন। ইসি সূত্র জানিয়েছে, দেশের ৯ কোটি নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়ার সময় ল্যামিনেটেড কার্ডটি ফেরত নেওয়ার পাশাপাশি ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিসের প্রতিচ্ছবি সংগ্রহ করা হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উত্তরা থানার ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৩-২২ অক্টোবর ও রমনা থানার ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ৩-২৭ অক্টোবর বিতরণ কেন্দ্রে বিতরণ চলবে। নির্দিষ্ট সময়ে যেসব কার্ড অবিতরিত থাকবে সংশ্লিষ্ট ভোটার স্ব স্ব উপজেলা/থানা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিস দিয়ে এবং ল্যামিনেটেড কার্ড ফেরত দিয়ে স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করে নিতে পারবেন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, যাদের ল্যামিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তারা নির্ধারিত স্লিপ দিয়ে এনআইডি নম্বর জেনে বিতরণ কেন্দ্রে গেলেই স্মার্টকার্ড পাবেন। উন্নতমানের এ স্মার্টকার্ড তৈরিতে প্রায় ২ ডলার ব্যয় হচ্ছে। প্রথমবার এ স্মার্টকার্ড বিনামূল্যে বিতরণ হচ্ছে। পরে যে কোনো ধরনের সংশোধন ও হারানো কার্ড তুলতে নির্ধারিত ফি নিয়ে সেবা দেওয়া হবে।

সম্ভাব্য ব্যয় ৮০ কোটি টাকার বেশি : আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৪০০ দিনে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণের কর্মপরিকল্পনা ও সম্ভাব্য ব্যয় নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরেছে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ। সেই ব্যয় বিবরণীতে দেখা গেছে, ৯ কোটি ভোটারের বিপরীতে অপারেটরদের কার্ডপ্রতি ৫ টাকা করে সম্মানী হিসেবে ৪৫ কোটি, সব ধরনের প্রচারণায় ১০ কোটি ও বিতরণ টিমের যানবাহনে ১০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এ ছাড়া টেকনিক্যাল এক্সপার্ট ৭৫ জনের দৈনিক ১ হাজার করে ৩ কোটি টাকা। টিম অ্যাসিস্ট্যান্টের সম্মানী ৫০০ টাকা করে দেড় কোটি টাকা। থানা-উপজেলা (৫১৬ উপজেলা/থানা) পর্যায়ে কো-অর্ডিনেশনের জন্য ১ লাখ টাকা করে প্রায় দেড় কোটি। বিতরণ কেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যয় দৈনিক ৭৫০ করে সাড়ে ৩ কোটি টাকার বেশি; বিতরণ কেন্দ্র ফিট আউটের জন্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। জেলা পর্যায়ে কো-অর্ডিনেশন ব্যয় প্রায় ১০ লাখ, আঞ্চলিক পর্যায়ে কো-অর্ডিনেশনের জন্য ১০টি কার্যালয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জ্বালানি ও অন্যান্য ব্যয় প্রায় ২ কোটি, বিতরণকারীদের প্রশিক্ষণে (প্রশিক্ষক, প্রশিক্ষণার্থীর সম্মানী, ভেন্যু, আপ্যায়ন, স্টেশনারি) অর্ধ কোটি, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ের ব্যয় ৫ লাখ ও অপ্রত্যাশিত ব্যয় প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। সব মিলে প্রায় ৮০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি উপজেলা/থানা পর্যায়ের সার্ভার স্টেশনের নিরাপত্তা ও উপজেলা পর্যায়ে একাধিক টিম ব্যবহারসাপেক্ষে ব্যয় বরাদ্দে তারতম্য হতে পারে বলে মত দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সব মিলে প্রতিটি স্মার্টকার্ড বিতরণে প্রায় ৯ টাকা ব্যয় হচ্ছে। স্মার্টকার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের লক্ষ্যে ফ্রান্সের অবার্থুর টেকনোলজিস নামে এক সংস্থার সঙ্গে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার চুক্তি করে ইসি। ইসি সচিবালয় বাস্তবায়নাধীন ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহেন্সিং এক্সেস টু সার্ভিসেস—আইডিইএ’ প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

চার ধাপে দেশজুড়ে বিতরণ পরিকল্পনা : জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশজুড়ে স্মার্টকার্ড বিতরণ সম্পন্ন করা হবে। এ লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে উদ্বোধন কার্যক্রম শেষে ৩ অক্টোবর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এবং প্রত্যন্ত এলাকা কুড়িগ্রামে বিতরণ শুরু হবে। মোট চার ধাপে সারা দেশে মোট ৯ কোটি স্মার্টকার্ড বিতরণ হবে। এতে বিতরণ টিম ৭৫টি (১টি টিমে ২০ জন অপারেটর, দেশজুড়ে ১৫০০ অপারেটর) এবং প্রতি টিমে একজন করে টেকনিক্যাল এক্সপার্ট কাজ করবেন। বিতরণ কেন্দ্র থাকবে ৫ হাজার ২৫০টি (সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়, পৌরসভা ও ইউপি কার্যালয়। সে হিসাবে ৩৮৬টি সিটি ওয়ার্ড, ৩২০টি পৌরসভা ও ৪ হাজার ৫২৭টি ইউপি কার্যালয়)। প্রতিদিন ২ লাখ ২৫ হাজার কার্ড বিতরণ হবে। দৈনিক একজন অপারেটর ১৫০টি করে কার্ড বিতরণ করবেন। সে হিসাবে ৭৫টি টিমের ২০ জন করে অপারেটর দৈনিক সোয়া ২ লাখ বিতরণ করতে পারবেন। এজন্য ৯ কোটি ভোটারের জন্য ৪০০ দিন সময় ব্যয় হবে।

সর্বশেষ খবর