রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইউজিসির সামনে অবৈধ স্থাপনা ময়লার ভাগাড়

আকতারুজ্জামান

ইউজিসির সামনে অবৈধ স্থাপনা ময়লার ভাগাড়

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারকের দায়িত্বে রয়েছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সরকারি ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি ৯৬টি বিশ্ববিদ্যালয় দেখভাল ও নিয়ন্ত্রণেরও দায়িত্ব এই সংস্থার। উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভিভাবকের দায়িত্বে রয়েছে এই ইউজিসি। অভিভাবকের ভূমিকায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখার মান নিয়ন্ত্রণ ও সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে তাগিদ দেওয়া নিয়ে তত্পর থাকলেও বেহাল পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের। ইউজিসির ভবনের সামনের সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে বস্তি এলাকা,  নানা অবৈধ স্থাপনা। আর পাশ ঘেঁষেই ময়লার ভাগাড়। এ ছাড়া আশপাশের সরকারি জায়গাগুলোও স্থানীয় রাজনীতিকরা জবরদখল করে দোকানপাটসহ নানা অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। ইউজিসি কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও কাউন্সিলরসহ এমপি-মন্ত্রীদের কাছে ধরনা দিলেও এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণের কোনো সুবাতাস পাননি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের গলার কাঁটা এখন অবৈধ এইসব দোকানপাট, ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, শিক্ষা প্রশাসক, পরিকল্পনাবিদ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রায়ই বিভিন্ন কাজে ইউজিসিতে আসেন। কিন্তু এ সংস্থার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বিব্রত করে তোলে তাদের। ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে সিটি করপোরেশন, পুলিশ প্রশাসনের কাছে লিখিত চিঠির মাধ্যমে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আবেদন জানিয়ে আসছে মঞ্জুরি কমিশন। স্থানীয় এমপিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী ও বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ইউজিসি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অফিস ভবনের সামনে, পাশে ও সংশ্লিষ্ট এলাকার প্লট-ই ১৯-এ অবৈধভাবে বেশ কিছু টংঘর, ভাঙারির দোকানপাট ও অস্থায়ী স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এসব স্থাপনা ঘিরে এলাকার রাস্তাঘাট নোংরা ও আবর্জনাযুক্ত হয়ে পড়েছে। নির্বিঘ্নে চলাচল বিঘ্নিত এবং পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ইউজিসি কর্তৃপক্ষও এসব অভিযোগ উল্লেখ করে মে মাসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা বরাবর লিখিত আবেদন করে নানা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছে। ইউজিসির সচিব ড. মো. খালেদ চিঠিতে বলেন, আশপাশের গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে ফেলা এবং ময়লা-আবর্জনা জরুরি ভিত্তিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে। এর আগেও পাঁচ দফা চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছে ইউজিসি। কিন্তু এসব অবৈধ স্থাপনা, বস্তি উচ্ছেদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সরকারি জমি দখল করে আরও অবৈধ দোকানপাট গড়ে উঠেছে। ইউজিসি ভবনের পূর্বে একটি জায়গা দখল করে টংঘর তৈরি করে সেখানে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সন্ধ্যার পরই ইউজিসির সামনে বসে মাদকের জমজমাট আড্ডা। সন্ধ্যার পর এ এলাকায় চলাফেরা করলে অনেক ক্ষেত্রে ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়তে হয়। কিন্তু সব জেনেও কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন। আর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়ায় পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এসব বিষয়ে জানতে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে নানা অভিযোগের ঝাঁপি মেলে ধরেন তিনি। আবদুল মান্নান বলেন, ‘দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, গুণী ব্যক্তি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তাব্যক্তিরা এখানে আসেন। কিন্তু যথাযথ পরিবেশ তাদের জন্য করে দিতে পারিনি। আশপাশের দূষিত, নোংরা পরিবেশের কারণে সবাই বিব্রত। দফায় দফায় চিঠি দিয়েও প্রতিকার মিলছে না। ইউজিসি ভবনের পাশের প্লটগুলো প্রতিনিয়তই দখল হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই প্রায় দুই হাত দখল হয়ে যায়। পুকুর ভরাট হয়ে সেখানে অবৈধ দোকানপাট গড়ে উঠছে। অবৈধ বস্তি গড়ে তুলে পরিবেশ নষ্ট করে ফেলছে। সন্ধ্যা হলেই এখানে বসে মাদকের হাট। সরকারের কাছে নিবেদন, ইউজিসির আশপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে শিক্ষা ব্যবস্থাপনার পরিবেশ ফিরিয়ে দিন।’ ইউজিসি সূত্র জানায়, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দাফতরিক কাজেরও ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান ভবনে (আগারগাঁও ই-১৮/এ প্লট) স্থান সংকুলান না হওয়ায় মঞ্জুরি কমিশনের পাশের প্লট (প্লট-ই ১৯) বরাদ্দ চায় সরকারের কাছে। গণপূর্ত অধিদফতরের মালিকানায় থাকা শূন্য দশমিক ৯৬ একরের এই জায়গা বরাদ্দ চেয়ে ২০১৪ সালের ১৬ মার্চ সরকারের কাছে আবেদন জানান সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। এ প্রসঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বর্তমানে ইউজিসির কার্যক্রমের পরিধি বেড়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি এই প্লটটি মঞ্জুরি কমিশনকে বরাদ্দ দেওয়া হলে দেশের উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম ত্বরান্বিত, শিক্ষার মানোন্নয়নসহ নানা কার্যক্রমের সহায়ক হবে।

সর্বশেষ খবর