শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কনটেইনার জটে চট্টগ্রাম বন্দর

আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত না এলে ফের ধর্মঘট

রিয়াজ হায়দার ও মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

কনটেইনার জটে চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার জট থেকে মুক্তি এখনো সুদূর পরাহত। জটমুক্তির জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস ও ব্যাংকগুলোর শুক্র ও শনিবারও সেবা নিশ্চিত করাসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন দায়িত্বশীলরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বহির্নোঙ্গরে ভাসতে থাকা পণ্য বোঝাই ১৯ জাহাজকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বার্থিং দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে বন্দরে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আজ ঢাকায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠেয় বৈঠকের ওপরই নির্ভর করছে বন্দরের তথা দেশের অর্থনীতির গতি-প্রবাহের ভবিষ্যৎ— এমনটাই মনে করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। অন্যদিকে আজকের বৈঠকে সমাধান বের হয়ে না এলে আগামীকাল থেকে ফের ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিকদের একাংশ। অন্য একটি অংশ তা প্রতিরোধেরও ডাক দিয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক জাফর আলম বলেন, ‘পাঁচ দিনের লরি ধর্মঘটের পর সাময়িক সমঝোতার ভিত্তিতে লরি চলাচল শুরু হলে এখন প্রতিদিন ৬ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। গতকাল ছয় হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও সাড়ে তিন হাজার ডেলিভারি হয়েছে। স্মরণকালের ভয়াবহ এ কনটেইনার জট থেকে চট্টগ্রাম বন্দর মুক্ত হতে আরও কমপক্ষে ১০ দিন লাগতে পারে।’

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম পূর্ব ঘোষণা কিংবা আলটিমেটাম ছাড়াই এমন ধর্মঘটে উদ্বেগ জানিয়ে ফের যাতে চট্টগ্রাম বন্দর এমন কোনো জটিলতায় না পড়ে সেই লক্ষ্যে সবার সঙ্গেই আলোচনার ভিত্তিতে স্থায়ী সমাধান বের করে আনার দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘অপরিনামদর্শী ধর্মঘটের পথ কোনো সমাধানের পথ নয়। এখন যে স্টকলট হয়েছে তার দায়িত্ব কে দেবে?’

এদিকে লরি ও কাভার্ড ভ্যান চালকরা ধর্মঘট প্রত্যাহারের পরে গতকালও ওজন পরিমাপের নামে বাড়তি টাকা বা চাঁদা আদায় এবং চালক শ্রমিকদের হয়রানির অভিযোগ করেছেন। প্রাইম মুভার ঐক্য পরিষদ সদস্য সচিব আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তুলতে চালক-মালিক সব পক্ষেই সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ধর্মঘট পরিস্থিতিসহ যে কোনো জটিল পরিস্থিতিতে পোশাক প্রস্তুতকারক, ফ্রেইড ফরোয়ার্ডার শিপিং এজেন্টসহ সবারই মতামত প্রয়োজন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

পাঁচ দিনের লরি ধর্মঘটে প্রায় ৪১ হাজার কনটেইনারের জট তৈরি হয়। মহাসড়কে ৩৩ টনের অধিক পণ্য বহনকারী লরি চলাচলে বাড়তি টাকা আদায় ও হয়রানিকে ঘিরে ধর্মঘট পরিস্থিতি তৈরি হলেও লরির মাধ্যমে দৈনিক পরিবহনের মোট ২২-২৫ শতাংশের মধ্যে অর্ধেকেরও কম পরিবহনের ওজন নির্দিষ্ট পরিমাপেরও নিচে বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)-এর দায়িত্বশীলরা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের ২২ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত ১৬টি অফ ডকের পণ্য পরিবহনও যদি স্বাভাবিক রাখা যেত তবে এমন ভয়াবহ জট পরিস্থিতি হতো না বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক জাফর আলম।

অন্যদিকে বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া পণ্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুই স্থানে পরিমাপ না করে একটি নির্দিষ্টস্থানে করার দাবি তুলে ব্যবসায়ীরা বলছেন অতিরিক্ত টাকার ভিত্তিতে বাড়তি পরিমাপের পণ্য ছাড়ের বিষয়টিও নৈতিক নয়। মহাসড়কে অতিরিক্ত ওজন নিয়ে পণ্য পরিবহন রুখা না গেলে ভেস্তে যাবে আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কার্যক্ষমতা।

বন্দরের এ কনটেইনার জটের কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় তৈরি পোশাক খাতে। ধর্মঘটের কারণে তৈরি পোশাক খাতের প্রায় ৩ হাজার টিইইউএস রপ্তানি পণ্যের জাহাজিকরণ সম্ভব হয়নি। এদিকে বহির্নোঙ্গরে ভাসতে থাকা তৈরি পোশাক খাতে পণ্য বোঝাই ১৯ জাহাজকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বার্থিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরের ধারণ ক্ষমতা ৩৬ হাজার ৩৫৭ টিইইউএস। কিন্তু প্রাইম মুভার ধর্মঘটের কারণে জমে থাকে অতিরিক্ত প্রায় ৫ হাজার কনটেইনার। ফলে স্মরণকালের কনটেইনার জটের কবলে পড়ে এখনো প্রায় ৩৯ হাজার কনটেইনারের জট রয়েছে দেশের প্রধান এ সমুদ্রবন্দরে। যা ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ৩ হাজারেরও বেশি।

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন বেসরকারি ডিপোতে আটকেপড়া রপ্তানিমুখী গার্মেন্টসহ অন্যান্য পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরে পৌঁছাচ্ছে। পুরনো ও নির্দিষ্ট শিডিউলের কনটেইনার বিভিন্ন জাহাজের মাধ্যমে শিপমেন্ট দেওয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, কয়েকদিনের প্রাইমমুভার ও ট্রেইলর ধর্মঘটের ফলে পণ্যবাহী কনটেইনারে গার্মেন্টসের ও বিভিন্ন শিল্প-কারখানার কাঁচামাল ছাড়াও বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য এবং পচনশীল খাদ্যসামগ্রীও আটকে রয়েছে।

সর্বশেষ খবর