বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রবাসী ফয়সলের যারা পা কেড়ে নিয়েছে তারা এবার প্রাণ চায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রবাসী ফয়সলের যারা পা কেড়ে নিয়েছে তারা এবার প্রাণ চায়

বাহরাইন প্রবাসী ফয়সল আহমদ মালিকের পা নিয়েই সন্ত্রাসীরা সন্তুষ্ট নয়, তারা এবার প্রাণ চায়। সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করা ফয়সল এখন নিজ পরিবার নিয়ে দিশাহারা। বাহরাইন মানামা যুবলীগের সহসভাপতি এই ফয়সল পা হারানোর পর মন্ত্রী- এমপিসহ সরকারদলীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন বিচারের আশায়। সবাই তাকে আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু বিচার পাননি। পুলিশও গ্রেফতার করে না আসামিদের। উপরন্তু নিজ এবং পরিবারের সদস্যদের জীবন নিয়েই এখন তিনি শঙ্কিত। ফয়সল মালিক তার পা হারানোর ঘটনা বলতে গিয়ে বার বার নিজেই শিউরে উঠছিলেন। সেই দিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তার চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি ছিলাম পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। পা হারিয়ে এখন আমি উল্টো পরিবারের বোঝা হয়ে গেছি। কী দোষ ছিল আমার। দেশে ফিরেই আমি সন্ত্রাসীদের পৈশাচিকতার শিকার হলাম।’ সিলেটের ওসমানীনগরে সাদীপুর ইউপির ইব্রাহিমপুর গ্রামের প্রবাসী ফয়সল আহমদ মালিক বাহরাইন থেকে দেশে ফিরেন গত ৮ ফেব্রুয়ারি। পাঁচ মাসের মাথায় গত ১৫ জুলাই তিনি হামলার শিকার হন নিজ বাড়ির সামনে। স্থানীয় কবির বাহিনীর প্রধান কবির উদ্দিন, মুসলেহ উদ্দিন, সুমন মিয়া, বাদল মিয়া, মাহিসহ আরও ১৭ থেকে ১৮ জন সন্ত্রাসী তাকে ঘিরে ধরে। প্রথমে মারধর ও পরে ডান পায়ে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে পর পর দুই রাউন্ড গুলি চালায়। এতে তার হাঁটুর উপরের দিকের মাংস ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়ে। তার বাবা ও ভাইয়েরা তাকে রক্ষায় এগিয়ে আসলে তাদের ওপরও হামলা করে সন্ত্রাসীরা। এতে তার এক ভাইয়ের মাথা ফেটে যায়। হামলা চালিয়ে কবির বাহিনী ফাঁকা গুলি করতে করতে ত্রাস সৃষ্টি করে গাড়িতে উঠেই চলে যায়। গুলিবিদ্ধ ফয়সলকে প্রথমে সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অপারেশন করে ডান পা কেটে ফেলতে হয়েছে। এতে করে দেশে ফিরেই টগবগে এই যুবক ফয়সলকে ডান পা হারিয়ে সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করতে হলো। এ সময় হাসপাতালে সরকারদলীয় অনেত নেতা-কর্মী তাকে দেখতে যান। আশ্বাস দেন কবির বাহিনী ও তার দলবলকে গ্রেফতারের। কিন্তু হত্যাচেষ্টার এই ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। ফয়সলের পারিবারিক সূত্র জানায়, ঘটনার পর থানায় তারা মামলা করতে গেলেও পুলিশ প্রথমে গড়িমসি করে। এরপরেও এজাহারে কবিরের নাম দেওয়া হলেও কৌশলে নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে কোর্টের নির্দেশে কবিরের নাম আবারও যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে কবির বাহিনীর সুসম্পর্ক থাকায় তারা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে ফয়সল ও তার পরিবারকে। জানা গেছে, ফয়সল যখন দেশে ফিরে আসে তখন ওসমানীনগরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণা চলছিল। আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয় কবির উদ্দিন। কবির উদ্দিনের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন ফয়সল। কিন্তু নির্বাচনে পরাজিত হন কবির উদ্দিন। আর এই নির্বাচনে হেরে তার নিজ দলের লোকজনের ওপর দোষারোপ করে কবির। কবির উদ্দিন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালাতে থাকেন। তার বাহিনীর নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছেন অনেকেই।

কবির বাহিনীর টার্গেটে ছিল ফয়সল। আর এই টার্গেট পূরণেই তাকে হত্যার জন্য হামলা চালায়। হামলার সময় অনেক অনুনয়-বিনয় করেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি ফয়সল। কবির ও তার ছেলে ভাতিজাসহ সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা করে হত্যার চেষ্টা চালায়।

বর্তমানে ফয়সল তার নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। তিনি গতকাল বলেন, কবির বাহিনীর অত্যাচারে এলাকার লোকজন এখন দিশাহারা। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ স্থানীয় লোকজন সংবাদ সম্মেলন করেছে। কিন্তু সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে কবির বাহিনী। বর্তমানে পুরো এলাকা এখন জিম্মি হয়ে আছে এই বাহিনীর কাছে।

তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরাফেরা করলেও রহস্যজনক কারণে তাদের গ্রেফতার করছে না। কবির বাহিনীর সন্ত্রাসীরা যেসব অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে, আজ পর্যন্ত একটি আগ্নেয়াস্ত্র পুলিশ তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করতে পারেনি। তাদের হামলায় আমি আমার ডান পা হারিয়েছি। এই অস্ত্র দিয়ে এখনো আমাদের হত্যা করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তাদের ভয়ে এলাকার অনেক নিরীহ মানুষ ঘরছাড়া। মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, নদী দখল, চাঁদাবাজির কারণে সাদিপুরবাসীসহ জিম্মি হয়ে পড়েছে। তাদের হাত থেকে প্রবাসীরা ছাড় পাচ্ছে না। কবির বাহিনীর সদস্য সুমন, বাদল, মাহি, জুবেল, সাহেদ, ইমন, শ্যামল আরও কয়েকজন প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে আমাদের হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর