বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নভেম্বরের মধ্যে অর্ধশত জেলায় কাউন্সিল

বিএনপির ‘রুদ্ধদ্বার’ বৈঠকে সিদ্ধান্ত

মাহমুদ আজহার

দীর্ঘ ছয় মাস পর আজ থেকে ফের শুরু হচ্ছে বিএনপির তৃণমূল সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। এরই অংশ হিসেবে মানিকগঞ্জ জেলার আংশিক কমিটিকে আজ বেলা ১১টায় কেন্দ্রে ডেকে পাঠানো হয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে অর্ধশত জেলার কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল দুপুরে দলের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ের নেতাদের এক ‘রুদ্ধদ্বার’ বৈঠকে চেয়ারপারসনের এ বার্তা পৌঁছে দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিএনপির সাংগঠনিক জেলা ৭৫টি। ইতিমধ্যে অন্তত ১২টি জেলার কমিটি হয়েছে। অবশ্য কয়েকটি জেলার কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি হয়েছে। আংশিক কমিটিও দেওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি জেলায় আহ্বায়ক কমিটিও হয়েছে। জানা যায়, তৃণমূল পুনর্গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের সভাপতিত্বে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয়ে সোয়া তিন ঘণ্টা এই বৈঠক চলে। বৈঠকে ‘এক নেতার এক পদ’ বিধি কার্যকর, জেলাগুলোর সমস্যা ও করণীয়, তৃণমূলের কাউন্সিল প্রক্রিয়াসহ সাংগঠনিক নানা বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। বৈঠকের শেষ পর্যায়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অংশ নিয়ে চেয়ারপারসনের ‘বার্তা’ পৌঁছে দেন। এ সময় সাংগঠনিক সম্পাদকরাও একমত হয়ে মির্জা ফখরুলকে জানান, ‘নির্ধারিত সময়সীমার আগেই তারা জেলার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চেষ্টা চালাবেন।’ মো. শাহজাহান গত সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘সাংগঠনিক পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। তারপরও একটি টাইমফ্রেম দেওয়া হয়। আমরা চেষ্টা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সাংগঠনিক জেলাগুলোতে কাউন্সিল করে কমিটি গঠন করার। এ নিয়ে সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের মতামত নেওয়া হয়েছে।’ গত বছরের ৯ আগস্ট তৃণমূলে চিঠি পাঠিয়ে এক মাসের মধ্যে জেলা কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ দেয় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এরপর রাঙামাটি, সিলেট জেলা ও মহানগর, কুড়িগ্রাম, ঝিনাইদহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নীলফামারী এবং সৈয়দপুর জেলায় কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়। এর আগেই অবশ্য নেত্রকোনো জেলায় কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠনের পর সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগর, দিনাজপুর ও ঢাকা জেলার আংশিক কমিটি দেওয়া হয়। গত ১৯ মার্চ দলের জাতীয় কাউন্সিল সামনে রেখে জেলা পুনর্গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়। ওই সময় খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, নোয়াখালী, খুলনা জেলা ও মহানগর, চুয়াডাঙ্গা, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নওগাঁ, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ অন্তত ১৪টি জেলা কাউন্সিল উপযোগী ছিল। পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বিএনপি এখন ওই সব জেলাগুলোকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে কয়েকটি জেলার বর্তমান কমিটি ভেঙে দেওয়াও হবে বলে বিএনপি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কয়েকটি জেলার সরাসরি কমিটি গঠন হতে পারে। বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির একাধিক নেতা জানান, তৃণমূলে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের চেষ্টা চালাবে বিএনপি। কোনো কারণে সংশ্লিষ্ট জেলায় কমিটি ঘোষণা না করতে পারলে ঢাকায় কমিটি ঘোষণা করা হবে। আবার কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে কাউন্সিল ছাড়াই কিছু জেলার কমিটি ঘোষণা হতে পারে। সবকিছুই পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সর্বশেষ বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জেলা ও মহানগরে সাংগঠনিক কমিটির আকার নির্ধারণ করা হয়। প্রতিটি ওয়ার্ডে ন্যূনতম ১০০ জন করে সদস্য করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয়, ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন কমিটি হবে ৫১ সদস্যের। থানা বা উপজেলা পর্যায়ের কমিটি হবে ৭১ সদস্যের। জেলা বা মহানগর কমিটি হবে ১৫১ সদস্যের। এর মধ্যে ৭৪টি হবে কর্মকর্তা পর্যায়ের পদ, বাকি ৭৬টি সদস্য পদ। অবশ্য জেলা-মহানগর ১৭১ সদস্যের কমিটি করার ব্যাপারেও স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃণমূলে কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সব কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে করতেও বলা হয়। মো. শাহজাহানের সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, আসাদুল হাবিব দুলু, ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, আনোয়ারুল আজিম, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান, মাহবুবুল হক নান্নু, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আবদুল আওয়াল খান, আবদুল মমিন তালুকদার খোকা, শাহীন শওকত, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কলিম উদ্দিন মিলন, মোস্তাক মিয়া, ওয়ারেস আলী মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম জানান, ‘চেয়ারপারসনের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের চেষ্টা করব। পদ জাহির করা নয়, সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনই আমাদের সবার লক্ষ্য। দলকে সুচারুভাবে গুছিয়ে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা আজ ঐক্যবদ্ধ।’ বৈঠকে অংশ নেওয়া আরেক নেতা জানান, ‘যেসব জেলায় সাংগঠনিক সংকট রয়েছে, অবিলম্বে তার নিরসন করতে সাংগঠনিক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই পকেট কমিটি করা যাবে না। মাঠপর্যায়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের কমিটিতে রাখতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়। চলতি মাসেই বেশ কয়েকটি জেলায় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রে যেসব জেলাগুলোকে কেন্দ্রে ডাকা হবে, ওই সব জেলার কাউন্সিল কবে হতে পারে— তারও একটি সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে।’ বরিশাল বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, বৈঠকে তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে সুবিধাবাদী নেতাদের থেকে দলকে বের করে নিয়ে আসতে আমি পরামর্শ দিয়ে বলেছি, ‘সেখানে আন্দোলন সংগ্রামে পরীক্ষিত নেতাদের পদায়ন করতে হবে।’

সর্বশেষ খবর