বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
আওয়ামী লীগ নেতা গামাসহ চারজনকে হত্যা

খোঁজ নেই দুই শুটারের

আলী আজম

রাজধানীর বাড্ডায় আওয়ামী লীগ নেতাসহ চারজনকে হত্যায় সরাসরি জড়িত জুয়েল ও নয়ন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ জানিয়েছে, চার খুনে চারজন শুটার অংশ নেন। এর মধ্যে দুজন গ্রেফতার হয়েছেন। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত চারটি অস্ত্রের মধ্যে দুটি।

গত বছরের ১৩ আগস্ট রাতে বাড্ডার আদর্শনগর পানির পাম্প এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ৬ নম্বর ওয়ার্ড  আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামসুদ্দিন মোল্লা ও ব্যবসায়ী ফিরোজ আহমেদ মানিক। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান গামা চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মারা যান। ২৩ আগস্ট রাতে মৃত্যু হয় গ্যারেজ মালিক ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা আবদুস সালামের। এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় গামার বাবা অজ্ঞাত পরিচয় ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে তা ডিবিতে স্থানান্তরিত হয়। মামলাটি তদন্ত করছেন ডিবির (উত্তর) পরিদর্শক ফজলুল হক। গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, চার খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। একজন জামিনে বেরিয়ে এসে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয়েছেন। এ ছাড়া মামলার তদন্তে আরও ছয়জনের নাম এসেছে; যার মধ্যে সোহেল ও বিজয় নামে দুই শুটার রয়েছেন। বর্তমানে এ মামলায় গ্রেফতার তিনজন জামিনে। সূত্র বলছে, হত্যাকাণ্ডের এক বছর পর গত ২৭ আগস্ট ছয় আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন জুনায়েদ হোসেন ওরফে হারুনুর রশীদ ওরফে জুয়েল, মোজাহিদুল ইসলাম নাহিদ, সাফায়েত উল্লাহ সোহাগ, রাহাত হোসেন কাব্য, ইকবাল আহমেদ রানা ও শাহ পরান হোসেন রাজু। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা ঘটনার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। আদালতে জুয়েল, নূর মোহাম্মদ নুরু ও নয়ন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিন আসামি জানিয়েছেন, গার্মেন্টের ঝুট ও স্টকলট ব্যবসার ৯ লাখ টাকার জন্যই হয় খুনোখুনি। যুবলীগ নেতা বাউল সুমনের মৃত্যুর পর গামা এ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন। সুমনের অনুসারীরা তাকে পছন্দ করতেন না। এ কারণে অন্তত তিন দফা বৈঠক করে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুধু গামা টার্গেট হলেও ঘটনাচক্রে তার সঙ্গে থাকা আরও তিনজন মারা যান। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ফারুক মিলন এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী কিলিং মিশনে অংশ নিয়ে গুলি ছোড়েন জুয়েল, সোহেল, নয়ন ও বিজয়। গুলি ছোড়ার পর অস্ত্রগুলো অন্যদের কাছে রেখে পালিয়ে যান শুটাররা। জানা গেছে, ২৭ আগস্ট পৃথক স্থান থেকে দুটি অস্ত্র উদ্ধারের পর অস্ত্র আইনে দুটি মামলা হয়। একটি মামলায় জুয়েল ও নাহিদ এবং অন্য মামলায় জুয়েল, নাহিদ, রাজু, কাব্য, সাহাগ ও ইকবালকে আসামি করা হয়েছে। ২৭ সেপ্টেম্বর এ দুটি অস্ত্র মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যা মামলায় অজ্ঞাত আসামি থাকলেও তদন্তে ১৬ জনের নাম বেরিয়ে আসে। এর মধ্যে নুরু, ফারুক মিলন, নয়ন, সৈয়দ মামুন, শাওন বাবু, পারভেজ (জামিনে বেরিয়ে এসে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন), শাহজাহান, ফারুক মোল্লা, মিতা সুমন ও জুয়েলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ফারুক মিলন, শাওন বাবু ও সৈয়দ মামুন জামিনে আছেন। এ ছাড়া হত্যা মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সোহেল, পাভেল, বিজয়, ফাহাদসহ ছয়জনকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এ মামলার চার্জশিট দ্রুতই আদালতে দাখিল করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর