বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বগুড়ায় দুই জঙ্গির আত্মসমর্পণ

অন্ধকার জগতে কেউ যেন না আসে

আলী আজম, বগুড়া থেকে

‘আমরা ভুল করে যে পথে গিয়েছিলাম, তা ছিল অন্ধকারের পথ। সে পথে কোনো আলো নেই। কোনো আশা নেই। আমাকে তারা ইসলামী জিহাদের কথা বলে উৎসাহিত করেছিল। দিনে তিনবার স্যারেরা আমাদের প্রশিক্ষণ দিতেন। পরে হলি আর্টিজানে হামলার খবর দেখে খারাপ লাগে। আমি ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এসেছি। আমি জঙ্গিবাদ  এ পথ থেকে সবার ফিরে আসা উচিত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণায় সবার সাড়া দেওয়া উচিত।’ জঙ্গিবাদ থেকে সদ্য ফিরে আসা আবদুল হাকিম গতকাল সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এরপর আরেক জঙ্গি মাহমুদুল হাসান বিজয় বলেন, ‘আমি যেখানে গিয়েছিলাম, তারা শিয়া, হিন্দু ও খ্রিস্টানদের হত্যার কথা বলত। আমি ফিরে এসেছি। আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি যেন দেশের জন্য কাজ করতে পারি সে জন্য দোয়া করবেন।’ কথা বলতে বলতে চোখ মুছতে থাকেন এই তরুণ। আর কোনো তরুণ যেন তাদের মতো সর্বনাশা পথে ভুলেও পা না বাড়ান সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করেন তিনি। বিজয় বলেন, ‘আমাকে নেতারা হিজরত করতে বলেন। তারপর আমাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।’ গতকাল দুপুরে র‍্যাব-১২-এর আয়োজনে বগুড়ার শহীদ টুিট মিলনায়তনে জঙ্গিবিরোধী সুধী সমাবেশ ও জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে দুই জঙ্গির হাতে পুরস্কারের চেক তুলে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বরণ করে নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন র‍্যাব-১২ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি শাহাবুদ্দিন খান। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় অংশ নিয়ে নিহত খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েলের দুই অনুসারী ছিলেন আত্মসমর্পণকারীরা। এরা হলেন বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার কামারপাড়া গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে আবদুল হাকিম (২২) ও গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার হাটভরতখালী এলাকার মৃত সেকান্দার আলীর ছেলে মাহমুদুল হাসান বিজয় (১৭)। আবদুল হাকিমের বড় ভাই আবদুল আলিম বলেন, ‘আমার ভাই তার ভুল বুঝতে পেরে নিজের কুকর্মের কথা আমাদের কাছে বলে। পরে আমরা তাকে র‍্যাব-১২ অফিসে নিয়ে যাই।’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিদের পুনর্বাসনের স?ুযোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তাদের সুযোগ দিতে চাই। সুযোগ পেয়েও যারা আলোর পথে আসবে না, তাদের নির্মূল করা হবে। ইতিমধ্যে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে অনেকেই আত্মসমর্পণ করতে শুরু করেছে। অন্যরাও করবে। তবে মদদদাতা যারা ঘাপটি মেরে আছে, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।’ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘যারা ধর্মের ব্যানার ব্যবহার করে অশান্তি সৃষ্টি করছে, তাদের ডানা ছিঁড়ে ফেলা হবে। জেল-ফাঁসি নয়, ভালোবাসা দিয়ে আমরা জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে চাই। ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, কোনো সন্তান যদি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যায়, আপনারা তাদের আত্মসমর্পণ করতে উৎসাহ দিন। কেউ আলোর পথে ফিরে আসতে চাইলে আমাদের দরজা খোলা রয়েছে।’ তিনি বলেন, বিনা কারণে রক্তপাত ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলাম রক্তঋণ পরিশোধে খুনের ধারা বন্ধ করতে বলেছে। শান্তির ব্যানার ব্যবহার করে যারা দেশে অশান্তি করছে, সেই শকুনদের ডানা ও কলিজা ছিঁড়ে ফেলা হবে। দু-একটি পিস্তল, গ্রেনেড, একে-ফোরটি রাইফেল নিয়ে এলে জীবন নিয়ে ফিরে যেতে পারবে না। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘আমরা দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই, ইসলাম কখনো জঙ্গিবাদ পছন্দ করে না। কোরআনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ভুল পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কিছু তরুণকে। জঙ্গিবাদ রুখতে আলেমসমাজ বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।’ আত্মসমর্পণকারী আবদুল হাকিম আলিম পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করছেন। আর বিজয় বগুড়া পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ছাত্র। হাকিমের বড় ভাই আলিম তার ভাইয়ের জঙ্গিবাদ থেকে ফিরে আসার গল্প তুলে ধরেন। এর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘোষণা দিয়েছিল, কেউ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলে তাকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হবে। সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তাদের পাঁচ লাখ করে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। র‍্যাব জানায়, আত্মসমর্পণকারী দুজন গুলশান হামলায় নিহত খায়রুলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তারা একসঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাদের সখ্য ছিল একাধিক জেএমবি নেতার সঙ্গে। তবে ওই সব বড়ভাই সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি তারা। জেএমবির সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে তারা সক্রিয়ও ছিলেন। তবে তারা গুলশান হামলার সঙ্গে জড়িত নন।

সর্বশেষ খবর