শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কর্ণফুলী টানেল বদলে দেবে চট্টগ্রাম

সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ পরিকল্পনা শুক্রবার নির্মাণ কাজ উদ্বোধন, পৌঁছে গেছে সরঞ্জাম

শিমুল মাহমুদ

কর্ণফুলী টানেল বদলে দেবে চট্টগ্রাম

দেশের বহুল প্রতীক্ষিত সুড়ঙ্গপথ কর্ণফুলী টানেল নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ১৪ অক্টোবর। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে সঙ্গে নিয়ে গণভবন থেকে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই অনুষ্ঠানে প্রকল্পের অর্থনৈতিক চুক্তিও সম্পন্ন হবে। এরই মধ্যে নির্মাণকাজের সরঞ্জাম নিয়ে এসেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার চিন্তা থেকেই কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর এ পরিকল্পনা এখন বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। একই দিন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় প্রস্তাবিত ‘চাইনিজ ইকনোমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন’ প্রকল্পেরও উদ্বোধন করবেন। এর প্রাথমিক কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট ১৪ অক্টোবর সকালে ১৮ ঘণ্টার সফরে ঢাকায় পৌঁছবেন।

কর্ণফুলী টানেল বাস্তবায়ন নিয়ে ঢাকায় সেতু ভবনে প্রকল্প কর্মকর্তাদের বিরতিহীন ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী-প্রতিশ্রুত এ প্রকল্পকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী ইফতেখার কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১৪ অক্টোবর উদ্বোধনের পরই টানেল নির্মাণকাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যে নির্মাণকাজের ডাম্প ট্রাক, এস্কেভেটরসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম চট্টগ্রামে পৌঁছে গেছে। যমুনা সেতু মেরামতের সময় যেসব উপকরণ আনা হয়েছিল সেগুলোও টানেল নির্মাণের কাজে যাচ্ছে। এ ছাড়া এক-দেড় মাসের মধ্যে চীন থেকে জাহাজে করে আরও সরঞ্জাম ও জনবল চলে আসবে। সব মিলিয়ে আগামী ডিসেম্বরে পুরোদমে টানেলের কাজ শুরু হবে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণের মাধ্যমে কর্ণফুলীর অন্য পার দক্ষিণ চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম মহানগরীর চেয়ে বড় একটি শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছিল। এরপর বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনায় চট্টগ্রামের সঙ্গে মিয়ানমার হয়ে চীন পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়টি চিন্তায় নিয়ে টানেল নির্মাণের প্রকল্প নেয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালের মধ্যে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণকাজ শেষ করার কথা রয়েছে। টানেলটির মাধ্যমে এশিয়ান হাইওয়ে হয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হবে। কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে পানির ১৫০ ফুট নিচ দিয়ে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ টানেল নির্মাণ করবে চীন সরকার মনোনীত প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ ইতিমধ্যে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করে। এতে টানেলের বিস্তারিত সুপারিশে বলা হয়, নদীর তলদেশে টানেল হবে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার। পূর্ব প্রান্তের ৪ দশমিক ৯৫২ কিলোমিটার ও পশ্চিম প্রান্তে ৭৪০ মিটার সংযোগ সড়কসহ টানেলের মোট দৈর্ঘ্য হবে ৯ দশমিক ০৯২ কিলোমিটার। এ ছাড়া টোল বুথ ও টোল প্লাজা নির্মাণ করা হবে ৭২০০ বর্গমিটার। চার লেনের টানেলে উভয় পাশে দুটি টিউব থাকবে। প্রতিটি টিউবের ব্যস হবে ১০ দশমিক ৮ মিটার। এর অবস্থান হবে নদীর তলদেশের ১২ থেকে ৩৬ মিটার গভীরে। টানেলের ভিতরে যানবাহন ছাড়া মানুষ চলাচলের কোনো সুযোগ থাকবে না। প্রথম পর্যায়ে শহর অংশের কাজ শেষ করে পরে নির্মাণ হবে বাকি অংশের কাজ। টানেল ও অ্যাপ্রোচ রোডসহ প্রকল্পটির জন্য ব্যয় হবে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা; যার মধ্যে ৫ হাজার ৬০০ কোটি দেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক। বাকি অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার। শুক্রবার এ অর্থনৈতিক চুক্তিও স্বাক্ষর হবে। কর্ণফুলী টানেলের মধ্য দিয়ে বদলে যাবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের উন্নয়নের গতিধারা।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, কর্ণফুলী টানেলের মাধ্যমে কক্সবাজার, বান্দরবান ও টেকনাফের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। তারই ধারাবাহিকতায় কর্ণফুলীর দক্ষিণ পারে আনোয়ারায় ‘চাইনিজ ইকনোমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন’ প্রকল্পটি গড়ে তোলা হচ্ছে। ৭৭৪ একর জমিতে এ প্রকল্পে ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বাস্তবায়নকারী সংস্থা চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। এতে ৩৭১টি শিল্প কারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে ৫৩ হাজারের বেশি মানুষের। কর্ণফুলী টানেল এবং চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চলটি বাস্তবায়ন হলে আনোয়ারা-কর্ণফুলী এলাকা ঘিরে শিল্পায়নে নতুন বিপ্লব আসবে। টানেল ও বিশেষ শিল্পাঞ্চল পাল্টে দেবে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের বর্তমান চিত্র।

সর্বশেষ খবর