রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
এগিয়ে গেল জুনেদ-ইমরান

মানবিক হোন সাহসী হোন

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

মানবিক হোন সাহসী হোন

সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে কলেজছাত্রী খাদিজার ওপর বর্বর হামলার ঘটনার পর ‘বদরুল’ নামটি যেন পরিণত হয়েছে গালিতে। প্রকাশ্য দিবালোকে এমন পৈশাচিক ঘটনায় ঝড় উঠেছে নিন্দার। এ ঘটনার জন্য অনেকেই দায়ী করছেন দেশের যুবসমাজের অবক্ষয়কে। বদরুল নামক ‘বদের’ পাষণ্ডতার বিরুদ্ধে মানবিকতার পক্ষের প্রতীক কলেজছাত্র  জুনেদ ও ইমরানের সাহসিকতা। তাদের জন্য পালাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বদরুল, আর খাদিজাকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল হাসপাতালে। এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে কলেজছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসকে যখন এলোপাতাড়ি কুপিয়ে যাচ্ছিলেন বদরুল আলম নামক নরপশু, তখন সে দৃশ্য কেউবা দেখছিলেন দূরে দাঁড়িয়ে, আবার কেউ ভিডিও করছিলেন মোবাইল ফোনে। চাপাতি হাতে বেপরোয়া বদরুলের কাছ ঘেঁষতে সাহস হচ্ছিল না কারোরই। এ সময় এগিয়ে যান এমসি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী জুনেদ আহমদ জনি। বাধা দিতে গেলেই বদরুল চাপাতি দিয়ে ধাওয়া করেন তাকে। এ সময় পুলিশ এলে তাদের ওপরও আক্রমণের চেষ্টা চালান বদরুল। এ সুযোগে পেছন থেকে লাথি দিয়ে মাটিতে বদরুলকে ফেলে দেন জুনেদ। এর পরই শুরু হয় গণপিটুনি। চাপাতি হাতে উদ্যত বদরুলকে আটকাতে ভয় পাননি? এমন প্রশ্নের জবাবে জুনেদ বলেন, ‘তখন আমার মনের মধ্যে কোনো ভয় কাজ করেনি। খাদিজার জায়গায় আমার বোনও হতে পারত। সেজন্যই আমি বদরুলকে ধরতে এগিয়ে যাই।’

বর্বর বদরুল আলমের ধারালো চাপাতির একের পর এক আঘাতে রক্তাক্ত খাদিজা বেগম নার্গিস অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকেন ধুলোমাটিতে। তার শরীর থেকে তখন বেরোচ্ছিল রক্তের স্রোত। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে না গেলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মারা যাবেন খাদিজা— এমন প্রবল শঙ্কার মধ্যেও তার দিকে মানবিকতার হাত বাড়াচ্ছিলেন না কেউ। তখন এগিয়ে আসেন সিলেট সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা ইমরান কবির। তার চিৎকারে এগিয়ে আসেন এমসি কলেজের ছাত্র মাহফুজ ও আল আমিন। সিএনজি অটোরিকশা করে খাদিজাকে তারা নিয়ে যান হাসপাতালে। সেখানে নিজের শরীর থেকে খাদিজাকে রক্ত দেন ইমরান। এরই মাঝে ফার্মেসিতে দৌড়াদৌড়ি করে এনে দেন ওষুধও। অবশ্য ইমরান কবিরের শরীরের অবস্থা দেখে ডাক্তাররা রক্ত নিতে চাইছিলেন না। কিন্তু নাছোড়বান্দা ইমরান রক্ত দেবেনই। ইমরান বলেন, ‘ডাক্তাররা যখন রক্ত নিতে চাচ্ছিলেন না, তখন আমি বললাম, আমার যা হয় হবে, আপনারা রক্ত নিন।’ জুনেদ ও ইমরানের এমন মানবিকতা ও সাহসিকতার প্রশংসা কুড়িয়েছে সিলেটের সুশীলসমাজে। সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজনের সিলেট সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ কে এম শমিউল আলম বলেন, ‘জুনেদ-ইমরানরাই হচ্ছে আমাদের দেশের যুবসমাজের প্রতিচ্ছবি। বদরুলের মতো পাষণ্ডরা নন, দেশে জুনেদ-ইমরানদের মতো যুবকের সংখ্যাই বেশি। পৈশাচিকতা ও বর্বরতার বিরুদ্ধে যুবসমাজ এগিয়ে এলে বদরুলের মতো দুর্বৃত্তরা এ দেশে অপকর্ম করতে সাহস পাবে না।’ এদিকে, খাদিজার ওপর হামলা ঘটনার পর জুনেদ-ইমরানের সাহসিকতা যুবসমাজ নিয়ে সাধারণ মানুষকে আশার আলো দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সমাজবিজ্ঞানী এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ফারুক উদ্দিন। তিনি বলেন, যুবসমাজের অবক্ষয় রোধে প্রয়োজন তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা। এজন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর