শিরোনাম
রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
চট্টগ্রামে মাদক আগ্রাসন ১

নারীদের অনেকেই এখন শূন্য থেকে লাখপতি

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে মাদক ব্যবসায় জড়িত নারীরা অপ্রতিরোধ্য। তাদের অনেকেই এখন ইয়াবা, ফেনসিডিল, চোলাই মদসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি করে খুব দ্রুত শূন্য থেকে লাখপতি।

এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাদক ব্যবসায় পুলিশি ঝামেলা এড়াতে পাচার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নারীদের। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ব্যবসায় নারী সংশ্লিষ্টতা বাড়ছে। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক আলী আসলাম বলেন, ‘নারীরা অধিকাংশ সময় সন্দেহের বাইরে থাকে। তাই মাদক  ব্যবসা ও পরিবহনে নারীদের ব্যবহার করা হয়।’ অধিদফতরের গোয়েন্দা শাখার সহকারী উপপরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘নারী মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতার করতে অভিযান শুরু হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েকজন নারী মাদক ব্যবসায়ীকে।’ পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের নগরীর তালিকাভুক্ত ১২০ মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে অর্ধেকই নারী। এই নারীরা এলাকা ভেদে নিয়ন্ত্রণ করছে মাদক ব্যবসা। তাদের একেকজনের অধীনে রয়েছে পাঁচ থেকে ১০ জন খুচরা নারী মাদক বিক্রেতা। নগরীর পাহাড়তলী, ডেবারপাড় ও আকবর শাহ এলাকায় রয়েছে চারজন করে নারী মাদক ব্যবসায়ী। পাহাড়তলী রেলস্টেশন বাজার ও স্টেশন কলোনি, রাহাত্তারপুল, মিয়া সওদাগর পুল এলাকায় রয়েছে তিনজন করে, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, বিআরটিসি মার্কেট, ধোপার মাঠ বস্তি, আইস ফ্যাক্টরি এবং গোসাইলডাঙ্গায় রয়েছে দুজন করে নারী মাদক ব্যবসায়ী। হাজারী গলি, কাপ্তাই রাস্তার মাথা ৮ নম্বর পুল সংলগ্ন এলাকা, নতুন রেলস্টেশন আরএনবি ব্যারাক, স্টেশন রোডের জঙ্গিশাহ মাজারের সামনে, হালিশহর থানার ঈদগাহ এলাকা, হালিশহর স্ক্র্যাপ কলোনি, ছোটপুল কাঁচাবাজার এলাকা, মাদারবাড়ী পানির ট্যাংকি এলাকা, এনায়েতবাজার ও কদমতলী শুভপুর রেললাইন এলাকায় একজন করে নারী মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর উল্লেখযোগ্য নারী মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে আছে রহিমা, সুফিয়া, লাইলি, শানু, মনোয়ারা, ইদুলী, মুফিয়া, সোহাগী, হাসিনার মা, রুমা, সেলিমের বৌ, হিরুণী, পুলিশের সোর্স আবদুল জলিলের মেয়ে আলো, দীপ্তি বেগম, আলো আক্তার, নিলুনী, পুলিশের সোর্স শাহাজাহানের স্ত্রী সীমা বেগম, কদুনী বেগম, নুনি বেগম, মোমেনা বেগম, মনেকা বেগম, নুর জাহান, পেয়ারা বেগম, পাখি, মরিয়ম বেগম, বানু বেগম এবং শুকতারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত এসব নারী মাদক ব্যবসায়ীর একেকজনের রয়েছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এদের প্রত্যেকের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। অনেকেই মাদকসহ একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে। কারাভোগও করেছে। অনেকে জামিনে মুক্ত হয়ে ফের ফিরেছে পুরনো ব্যবসায়। পুলিশের খাতায় তারা ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ বলে পরিচিত।

বায়েজীদ থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘আইনি ঝামেলা এড়ানোর কৌশল হিসেবে অনেক মাদক ব্যবসায়ী স্ত্রী ও মেয়েকে দিয়ে এখন মাদক ব্যবসা করায়। এ ছাড়া অনেক নারী নিজে থেকে এ ব্যবসা পরিচালনা করে। নগরীতে এক বছরে অনেক নারীকে মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর আদালতে সোপর্দ করার সময় দেখা যায় তারা ছোট বাচ্চা নিয়ে যায়। তাদের দেখিয়ে তারা আদালত থেকে সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করে।’

সর্বশেষ খবর