মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

এফবিসিসিআইতে ভোটাধিকার খর্ব হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষিত

রুহুল আমিন রাসেল

দেশে আবারও ভোটাধিকার খর্ব করা হচ্ছে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কাছে মিনি পার্লামেন্ট খ্যাত শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন  এফবিসিসিআইর সাধারণ পরিষদের সদস্যদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন অধিকতর সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক করতে সভাপতিসহ সব পদে সরাসরি ভোটে নির্বাচন আয়োজনে এফবিসিসিআই সংস্কারের নির্দেশনা দিলেও এতে আপত্তি উঠেছে। এফবিসিসিআই বোর্ডসভায়ও পক্ষে-বিপক্ষে মত এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে মনোনীত পরিচালক প্রথা বাতিল করে সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সব পরিচালক পদে সরাসরি ভোট চেয়েছেন ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা। তথ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানা গেছে, বিগত বিএনপি সরকারের আমলে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) নির্বাচনে সভাপতি, প্রথম সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে ভোটাধিকার হারান সংগঠনটির সাধারণ পরিষদের সদস্যরা। তখন যুক্ত করা হয় মনোনীত পরিচালক প্রথা। কোন কোন বাণিজ্য সংগঠন থেকে মনোনীত পরিচালক হবেন, এটা ঠিক করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর পর থেকে এফবিসিসিআইর প্রতিটি নির্বাচনে সাধারণ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত পরিচালক ও মনোনীত পরিচালকদের ভোটে নির্বাচিত হন সভাপতি ও দুই সহ-সভাপতি। এই পদ্ধতির নির্বাচনব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকেই সরকারের তল্পিবাহকে পরিণত হন ব্যবসায়ী নেতারা। ফলে সরকারের লেজুড়বৃত্তি বাড়িয়ে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত থাকেন তারা। আর সাধারণ ব্যবসায়ীদের দাবি আদায়ের বিষয়টি থাকে প্রায় উপেক্ষিত। সাধারণ ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ সংকট উত্তরণে গত এক দশকে কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।

তবে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার আলোকে চলতি বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বণিক সংগঠনসমূহ সংস্কারের লক্ষ্যে এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটিতে এফবিসিসিআইর বর্তমান ও সাবেক সভাপতিরাও আছেন। সংস্কার কমিটি ৩০ আগস্ট সভা করে মনোনীত পরিচালক প্রথা বাতিলসহ অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নেয়। সে সিদ্ধান্তের ওপর এফবিসিসিআইর মতামত নিয়ে সংস্কার কমিটি ১৫ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানাবে। এ প্রসঙ্গে সালমান এফ রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সংস্কার কমিটি সভাপতিসহ সব পদে সরাসরি ভোটের দিকে এগোচ্ছে। তবে মনোনীত পরিচালক প্রথা থাকবে না। কিন্তু অঞ্চল ও খাতভিত্তিক প্রতিনিধি রাখতে চাই আমরা।’ এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ দুই বছর থেকে বাড়িয়ে তিন বছর নির্ধারণের প্রস্তাব করে সংস্কার কমিটির সিদ্ধান্তে বলা হয়, ভবিষ্যতে এফবিসিসিআইতে যে ৬০ জন পরিচালক হবেন, তাদের ৩০ জন চেম্বার ও ৩০ জন অ্যাসোসিয়েশন থেকে। এই পরিচালকরাই সভাপতি, প্রথম সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সাধারণ পরিষদের অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বার গ্রুপের সব পদাধিকারী সভাপতি বা চেয়ারম্যান এবং নবনির্বাচিত ৬০ পরিচালকের উপস্থিতিতে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে সরাসরি সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে এ নির্বাচন হবে। এফবিসিসিআইর সভাপতির পদমর্যাদা নির্ধারণের প্রস্তাব করে সংস্কার কমিটি বলেছে, এফবিসিসিআই নির্বাচন অধিকতর সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক করতে সব চেম্বার অব কমার্সকে একই শ্রেণির সদস্য বিবেচনা করা হবে। বর্তমানে তিনটি ক্যাটাগরিতে চেম্বারগুলোকে মূল্যায়ন করা হয়। সব চেম্বারের সভাপতিরা পদাধিকারবলে এফবিসিসিআই সাধারণ পরিষদের সদস্য হবেন। এটা বর্তমানে নেই। ক্যাটাগরি অনুযায়ী চেম্বার মনোনীতরাই সদস্য হন। এ ছাড়া এফবিসিসিআই অধিভুক্ত সব চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন তাদের মনোনীত চারজনকে সাধারণ পরিষদের সদস্য করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এফবিসিসিআইর একটি যৌথ কমিটি বাণিজ্য সংগঠনের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করে তাদের কর্মকাণ্ডে কোনো অসঙ্গতি ও অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। এ সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ৬ অক্টোবর এফবিসিসিআইর পরিচালনা পর্ষদের বোর্ডসভায় ব্যাপক উত্তপ্ত বাগিবতণ্ডা হয়েছে বলে সূত্র জানায়। পরে ওই বোর্ডসভায় এফবিসিসিআই পরিচালক হেলাল উদ্দিনের উত্থাপন করা একটি নতুন প্রস্তাব আলোচিত হয়। এ প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমান পদ্ধতি বহাল রেখে প্রথম সরাসরি ভোটে ১৬ জন চেম্বার ও ১৬ জন অ্যাসোসিয়েশন থেকে পরিচালক নির্বাচিত হবেন। নির্বাচিত ৩২ জন পরিচালকের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সভাপতি, প্রথম সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবেন। এ প্রক্রিয়া শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনোনীত পরিচালকরা বোর্ডে সব কাজে অংশ নেবেন। অর্থাৎ মনোনীত পরিচালকরা এফবিসিসিআইর সভাপতি, প্রথম সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে আসতে পারবেন না। কিন্তু বোর্ডসভাসহ সংগঠনটির অন্যান্য কাজে সমানতালে তারা ভূমিকা রাখতে পারবেন। জানা গেছে, বোর্ডসভায় পরিচালকদের একটি অংশ সাধারণ ব্যবসায়ীদের সম্মান জানাতে সরাসরি ভোটের পক্ষে থাকলেও আরেকটি অংশ নেতাদের গুণগত মানের দিকটি বিবেচনায় নিয়ে মনোনীত পরিচালক প্রথা রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। এতে প্রস্তাব উঠেছে, সাধারণ পরিষদের সব সদস্য নয়, সব বাণিজ্য সংগঠনের সভাপতি বা চেয়ারম্যান ও নবনির্বাচিত পরিচালকদের ভোটে হবেন সভাপতি, প্রথম সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি। এই পরিচালকরাও নির্বাচিত হবেন অঞ্চলভিত্তিক চেম্বার ও খাতভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশনের। ফলে মনোনীত পরিচালক প্রথা, সাধারণ সদস্যদের ভোটবিহীন সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচন বহাল রাখা হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সভাপতিসহ সব পদে সরাসরি নির্বাচনের চেষ্টা করছি। মনোনীত পরিচালক প্রথা থাকবে না। তবে বিভিন্ন খাত ও অঞ্চলভিত্তিক পরিচালক নির্বাচনের চেষ্টা চলছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরিচালক নির্বাচিত হবেন, এটাই চাইছি। সবকিছু ঠিক থাকলে অক্টোবর মাসের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে।’ এফবসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, অনেক দিন সরাসরি নির্বাচনের দাবি আছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের। কারণ মনোনীত পরিচালকের সংখ্যা বাড়ছে। এতে ভারসাম্যহীনতা বাড়ায় ক্ষোভও বাড়ছে। তাই একই খাতে অনেক সংগঠন থাকায় সেগুলোর খাত ও অঞ্চলভিত্তিক সমন্বয় করার চিন্তাভাবনা চলছে। এফবিসিসিআইর আরেক সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘মনোনীত পরিচালক প্রথা নির্বাচিতদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ায়। আমরা এই অসন্তোষ দূর করতে চাই।

সর্বশেষ খবর