মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

অজানাতেই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীরা

হোসনি দালানে গ্রেনেড হামলার এক বছর

মাহবুব মমতাজী

গত বছর ২২ অক্টোবর মাঝরাতে রাজধানীর হোসেনী দালানে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে চালানো হয় গ্রেনেড হামলা। গ্রেনেড সঙ্গে সঙ্গে কেড়ে নেয় সাজ্জাদ হাসান সানজুর (১৫) তরতাজা জীবন। এ ঘটনায় ওই বছর নভেম্বরে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চলতি বছর এপ্রিলে তাদের মধ্যে চারজন জামিনে মুক্তি পান। জামিনপ্রাপ্তরা হলেন—ওমর ফারুক, হাফেজ আহসান উল্লাহ মাহমুদ, শাহজালাল ও চান মিয়া। তাদের জামিন মঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত।

এদিকে হোসেনী দালানে গ্রেনেড হামলার ঘটনাটি তদন্ত করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে ঘটনার এক বছর পার হলেও অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিতে পারেনি তারা। নিহতের পরিবারের কাছে এখনো হামলার মূল পরিকল্পনাকারীরা অজানার মধ্যেই থেকে গেছে। এমনকি হোসেনী দালানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরাও জানেন না ওই ঘটনার নেপথ্যে কারা এবং তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল। গতবারের হামলার ঘটনায় এ বছর মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ইমামবাড়া থেকে তাজিয়া মিছিলের জন্য তিন দিন সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আরেকটি আশুরা ফিরে এলেও এখনো ক্ষত শুকায়নি সানজুর পরিবারের। তারা সানজুকে হারিয়ে অনেকটা নিস্তব্ধ-নির্বাক। তাদের অভিযোগ, ‘আমরা জীবন্ত সানজুকে ফিরে পাইনি। তাকে ভালোভাবে দাফন করতে না পারায় আমাদের এখনো কষ্ট বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।’ তাজিয়া মিছিলটি শিয়া সম্প্রদায়ের হলেও সানজু ছিলেন সুন্নি সম্প্রদায়ের। সানজুর বড় ভাবি হ্যাপী আক্তার বলেন, ‘সানজুর স্বপ্ন ছিল সাকিব আল হাসানের মতো বড় ক্রিকেটার হওয়ার। সে ভালো খেলতো। সবাই চাইত তার স্বপ্ন পূরণ হোক। ভালো খেলতে পারায় বন্ধুদেরও উৎসাহের কমতি ছিল না। সব স্বপ্ন ভেঙে বাবা-মা-স্বজনদের মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে সে। আজ পর্যন্ত ঘটনার কোনো কিছু জানতে পারলাম না আমরা। কী দোষ ছিল তার। কেনই বা এ ঘটনা ঘটনো হলো।’ ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, ‘ওই দিন রাত আড়াইটায় বোমা বিস্ফোরণে মারা যায় সানজু। সে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চড়াইল উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। বাবা-মায়ের সাত ছেলে-মেয়ের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট। এর আগে রাত ১০টার দিকে তার আরেক ভাবি সুমী আক্তার, ভাতিজি ও ভাইয়ের শাশুড়ির সঙ্গে হোসেনী দালানে যায় সে। সানজু, তার ভাবি, তার ভাতিজি ও ভাই একসঙ্গে ছিল। কিছুক্ষণ পরপর শব্দ হয়। সবাই বলে, এটি আতশবাজির আওয়াজ। রাত আড়াইটায় বিকট শব্দে কী যেন কেঁপে ওঠে এলাকা। সবাই হুমড়ি খেয়ে পালাতে থাকে। সানজু মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ওঠানোর পর দেখা যায়, তার জ্ঞান নেই। তত্ক্ষণাৎ দালানের ভেতর নিয়ে শরীরে পানি ঢালতেই রক্তের বন্যা বয়ে যেতে থাকে। রিকশায় করে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পর জানা যায়, সানজু মারা গেছে।’ হোসেনী দালানে কর্মরত কবির হোসেন জানান, ‘এখানে শিয়ার চেয়ে সুন্নি সম্প্রদায়ের লোকের ভিড় বেশি দেখা যায়। আগের চেয়ে এবার অনেক ভিড় কমে গেছে। গতবারের হামলার সময় আমরা দালানের ভেতরে ছিলাম। কিন্তু ওই ঘটনার পরবর্তী বিষয় সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতে পারিনি।’ হায়দার আলী নামে শিয়া সম্প্রদায়ের একজন বলেন, ‘এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক বাড়ানো হয়েছে। আগে চারপাশে অনেক দোকান বসানো হতো। এবার সে অবস্থা নেই। আমাদেরও পাইক (রশি) বাঁধার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। মিছিলে থাকার বিষয়ে কার্ড পদ্ধতি চালু করা হয়েছে দালানের পক্ষ থেকে। তবে আগের মতো এবার আর বড় মিছিল হবে না।

সর্বশেষ খবর