শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

থেমে আছে ১৫ বছর আগের হত্যা মামলা

ডাক্তার সাক্ষী হাজির হন না

তুহিন হাওলাদার

রাজধানীর তেজগাঁও থানায় করা ১৫ বছর আগের একটি হত্যা মামলায় ডাক্তার সাক্ষীর অসহযোগিতার কারণে বিচারকাজ থেমে আছে। এই সাক্ষীকে আদালতে হাজির করাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের মাধ্যমে বার বার তাগিদ দেওয়া হলেও, আদালতের আদেশ তোয়াক্কা না করে অনুপস্থিত থাকছেন ময়নাতদন্তকারী ওই ডাক্তার। ফলে সাক্ষীর অপেক্ষায় তারিখের পরে তারিখ দেওয়া হচ্ছে এবং মামলার বিচারিক কার্যক্রম থেমে আছে। এ কারণে মামলাটি নিষ্পত্তি হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

মামলার নথিসূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত মেডিকেল অফিসার ডা. মো. শাহজাহান আলীকে (কোড নম্বর-৩২৯৮২) বহুবার সাক্ষী হিসেবে হাজির হতে আদালত থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই সাক্ষীকে হাজির করাতে সর্বশেষ আদালতের আদেশের কপি চলতি বছরের ১০ জুলাই জিইপি-যোগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু আদালতের আদেশ পাওয়ার পর ডা. মো. শাহজাহান আলীকে হাজির করার কোনো উদ্যোগ বা পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। কিন্তু মহাপরিচালকও আদালতের আদেশ অমান্য করেন। এ কারণে সর্বশেষ ২৫ সেপ্টেম্বর আবারও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে হাজির হয়ে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর আদেশ দেন বিচারক। আদেশে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আদালতের আদেশ অমান্য করে এ মামলার বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত করছেন, যা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে। তাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনয়ন করে বিষয়টি কেন হাইকোর্ট বিভাগের গোচরীভূত করা হবে না, সে মর্মে আগামী ২৪ নভেম্বর ব্যক্তিগতভাবে হাজির হয়ে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া গেল। এ আদেশের কপি বিশেষ বাহক মারফত স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হোক। মামলায় অভিযোগ করা হয়, সিরাজগঞ্জের কয়েলগাতী থানার জগত্গাতী এলাকার মৃত দুলাল মণ্ডলের মেয়ে লাইলী খাতুন ডলিকে নিয়ে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বসবাস করতেন স্বামী সোহেল রানা। ডলিকে হত্যা করে ২০০১ সালের ২০ অক্টোবর বক্সবন্দী (কফিন) অবস্থায় সিরাজগঞ্জের চন্দ্রকোনায় এনে হঠাৎ নিহতের স্বজনদের মৃত্যু সংবাদ দেন। ডলির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ও কপালে কাটা এবং রক্ত, জখম দেখে তার ভাই আবদুর রশীদ ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিরাজগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন। পরে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত মেডিকেল অফিসার ডা. মো. শাহজাহান আলী ময়নাতদন্ত করে হত্যার প্রমাণ পান। এ ঘটনায় তেজগাঁও থানায় মামলা হয়। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শওকত আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশেষ দায়রা নম্বর-১৭৩/১৬ মামলায় বর্তমানে ছয়জন সাক্ষীকে আদালত পরীক্ষা করলেও ময়নাতদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যের অভাবে মামলাটি ঝুলে আছে। তাই সাক্ষী হাজির না হওয়ার অপরাধে প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৭৪ ধারা অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী আদালতের আদেশ মানতে বাধ্য। যদি কোনো কর্মচারী সমন কিংবা গ্রেফতারি পরোয়ানা অনুযায়ী আদালতে হাজির না হন, তবে তার দুই মাসের কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।

সর্বশেষ খবর