রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কার্যালয়ে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন চাকরিপ্রার্থী ও বেসরকারি শিক্ষকরা। বিভিন্ন সেবা পেতে গিয়েও তাদের পদে পদে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সমস্যা নিয়ে শিক্ষকরা কার্যালয়টিতে কথা বলতে এলেও বেশির ভাগ সময় তাদের অফিস কক্ষে ঢুকতেই দেওয়া হচ্ছে না। অফিসের গেট থেকেই ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। বেশির ভাগ সময়ই এনটিআরসিএর প্রধান ফটক তালাবদ্ধ রাখা হয়। সম্প্রতি কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে এসব অভিযোগের সত্যতা মেলে। ভবনের ষষ্ঠ তলায় এনটিআরসিএ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, লিফটের সঙ্গেই কলাপসিবল গেট বসিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। নিবন্ধন পরীক্ষার ফল প্রকাশের তারিখ জানতে কুড়িগ্রাম থেকে এসেছেন চাকরিপ্রার্থী রফিকুল ইসলাম। বরিশাল থেকে আফসানা এসেছেন নিবন্ধন সনদের নাম সংশোধন করতে। কিন্তু কার্যালয়ের হেল্পডেস্ক পর্যন্তও পৌঁছাতে পারেননি তারা। ইসরাত জাহান নামে একজন অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রভাষক পদে আবেদন করার পরে আমার বিয়ে হয়েছে। আবেদন সংশোধন করে স্বামীর ঠিকানা দেওয়া যাবে কি না তা জানতে এসেছিলাম। অনেক অনুরোধ করেও অফিসের ভিতর ঢুকতে পারিনি। অথচ পিএসসিতে বিসিএসের আবেদন সংশোধনের মাধ্যমে ঠিকানা পরিবর্তনের সুযোগ আছে। কিন্তু এখানে সমস্যা সমাধান তো দূরের কথা, ভিতরেই ঢুকতে পারলাম না।’ এনটিআরসিএর নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে বাংলাদেশ প্রতিদিন ছাড়াও এ সময় কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হন দেশের পাঁচটি জাতীয় দৈনিকের সংবাদকর্মীরা। তারা পরিচয় দিয়ে ভিজিটিং কার্ড ভিতরে পাঠালেও চেয়ারম্যান এ এম এম আজহার ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেননি। সংবাদকর্মীরা কার্যালয়ের তথ্যকেন্দ্রে (হেল্পডেস্ক) যেতে চাইলেও তাদের কলাপসিবল গেট পার হতে দেওয়া হয়নি। তারা চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে গেটে দাঁড়িয়ে থাকা দারোয়ান নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘অফিসের লোক ছাড়া ভিতরে প্রবেশ নিষেধ। চেয়ারম্যান স্যার দেড় বছর ধরে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।’ এখান থেকে চলে না গেলে চেয়ারম্যান পুলিশে অবহিত করবেন বলে হুমকি দেন তিনি। এরপর নিউমার্কেট থানার এক উপ-পরিদর্শক এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের চলে যেতে বলেন। চলে না গেলে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি। কার্যালয়ে ঢুকতে না পেরে বা চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ঘণ্টাখানেক অবস্থানের পর বেলা দেড়টায় সংবাদকর্মীরা এনটিআরসিএ কার্যালয় ত্যাগ করেন। এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে হতবাক হয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা চাকরিপ্রার্থীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিআরসিএর এক পরিচালক বলেন, একতরফাভাবে স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় এনটিআরসিএ চালাচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান। সেবা নিতে আসা চাকরিপ্রার্থীরা বলেন, শিক্ষকদের নিয়োগ নিয়ে এনটিআরসিএ কাজ করলেও শিক্ষকরা বা শিক্ষকতার চাকরিপ্রার্থীরা তাদের কাছে সেবা পান না। শরীয়তপুর থেকে গতকাল এসেছিলেন শরীফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এক মাস আগে নদীভাঙনে আমাদের বাড়ি-ঘর পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এখন এলাকা ছেড়ে ফরিদপুর বসবাস করছি। শরীয়তপুরের একটি কলেজে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছি। নিয়ম অনুযায়ী নিজ উপজেলার প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। নদীভাঙনের কারণে ঠিকানা পরিবর্তন করা যাবে কি না তা জানতে এসেছিলাম। দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে অনেক অনুরোধ করেও অফিসের ভিতরে প্রবেশ করতে পারিনি।’ অভিযোগ রয়েছে, নিবন্ধন পরীক্ষার ভুয়া সনদ প্রদানের মাধ্যমে প্রতিবছরই মোটা অঙ্কের বাণিজ্য করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির একটি সংঘবদ্ধ চক্র। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর নিবন্ধন পরীক্ষার প্রায় দেড় হাজার জাল সনদের তথ্য সংগ্রহ মাঠে নেমেছে। মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, জাল সনদপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ব্যাপারে বারবার তথ্য চাইলেও তথ্য দিচ্ছে না এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এনটিআরসিএর সিস্টেম অ্যানালিস্টসহ একটি চক্র জাল সনদের বাণিজ্য চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও চেয়ারম্যানের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চেয়ারম্যান এ এম এম আজহারের মুঠোফোনে কয়েক দফা কল করে এবং খুদেবার্তা (মেসেজ) পাঠিয়েও তিনি তা রিসিভ করেননি। চাকরিপ্রার্থীদের সেবা পেতে ভোগান্তি এবং এনটিআরসিএ কার্যালয়ের ভিতরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলব।’