মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিপর্যস্ত জামায়াত নতুন কৌশলে

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ পাঁচ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর এবং এক নেতার আমৃত্যু কারাদণ্ডে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে দলটি। একই অপরাধে দলের আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিচারকার্য চলছে। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, ক্যাডারভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াত-শিবির কী চুপ থাকবে নাকি রাজপথে আবার জঙ্গি রূপ নেবে। তবে দলটির বর্তমান নেতৃত্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কৌশল নিয়েছে বলে দলীয় উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে। দলের দায়িত্বশীল নেতাদের     সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামায়াতে ইসলামী চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত নতুন নামে দল গঠনের কোনো সম্ভাবনা নেই। সরকার তাদের মাঠে নামার সুযোগ না দিলেও দল হিসেবে নিষিদ্ধ করবে না বলে নেতাদের ধারণা। দলের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই মকবুল আহমাদ ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সম্প্রতি তিনি জামায়াতের আমির নির্বাচিত হয়েছেন।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক এক সভাপতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জামায়াতের নতুন নামে দল গঠনের মতো অনুকূল পরিবেশ পাওয়া যাবে না। একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়ে নতুন করে দল শুরুর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অসম্ভব। যারা দল নিয়ন্ত্রণ করছেন তারাও এতে রাজি নন। তাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মতে, দলীয় রাজনৈতিক ইতিহাসের বর্তমানে সবচেয়ে করুণ ও দুঃসময় পার করছে দলটি। নির্বাচন কমিশনে দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। যে কোনো সময় দল নিষিদ্ধ হতে পারে। সংকটাপন্ন এ পরিস্থিতিতে দলীয় ভবিষ্যৎ ও কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে অন্ধকারে নেতা-কর্মীরা। দলীয় নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত দলে কোনো জটিলতা না থাকলেও দল নিষিদ্ধ হলে পরবর্তী কর্মপন্থার ব্যাপারে এখনই ভাবতে নারাজ দলীয় নীতিনির্ধারকেরা। ফলে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া আপাতত কোনো তত্পরতা নেই জামায়াতের। দলের ঢাকা মহানগরীর কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের নেতা মনে করেন, আওয়ামী লীগের নেতারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার কথা বললেও কার্যত সরকার বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখবে। সহসা জামায়াত নিষিদ্ধ হবে বলে তারা মনে করেন না। তবে কোনো কোনো নেতার মতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বর্তমান সরকারও এমনটা করতে পারে। তবে সরকার নির্বাহী আদেশে না করে আইনি প্রক্রিয়াতেই নিষিদ্ধকরণ সম্পন্ন করবে বলে তাদের ধারণা। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর জামায়াতের নেতা আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকার সবকিছুই করতে পারে। নিষিদ্ধ তো হয়েই আছে। ইসিতে নিবন্ধন নেই। বৈঠক করা যায় না। গোপনে বিবাহ অনুষ্ঠানেও  যোগ দেওয়া যায় না। জানাজার নামাজ পড়া যায় না। কয়েকদিন অপেক্ষা করেন, এরপর দেখবেন, নামাজ থেকে ধরে জেলে ঢুকাবে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই।’  খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কর্মী সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয় হলেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া পাঁচ নেতা ছিলেন দলে সবচেয়ে প্রভাবশালী। তাদের মনোনীত ভারপ্রাপ্ত আমির ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এখনো দায়িত্ব পালন করছেন। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও শেষ পর্যন্ত তারাই পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পাবেন। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে প্রকাশ্য রাজনীতিতে নেই জামায়াত। যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধের দাবিতে হরতালে সহিংসতার কারণে দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়েছে দলটি। পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী নিহত হলেও সাধারণ মানুষের সহানুভূতি পায়নি তারা। দলের অনেক নেতার অভিমত, সরকার জামায়াতকে ‘দমন’ করলেও যুদ্ধাপরাধের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুর কারণেই কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। তাই যুদ্ধাপরাধের শেষ দেখে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে মকবুলের নেতৃত্বাধীন জামায়াত।

সর্বশেষ খবর