বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চাল নিয়ে চালবাজি অব্যাহত

আওয়ামী লীগ নেতার তালিকায় শ্যালকসহ ধনীদের নাম, বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ

প্রতিদিন ডেস্ক

ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণের অনিয়ম নিয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে মাগুরা সদর উপজেলার ৩ নং কুছুন্দী ইউনিয়নের ভুক্তভোগীরা। এদিকে, লালমনিরহাটে চাল বিক্রির কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জেলার ৪৫টি ইউনিয়নেই সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা একতরফা তালিকা তৈরি করায় বঞ্চিত হয়েছে ভূমিহীন, দিনমজুর ও হতদরিদ্র পরিবারগুলো। গতকাল আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ি ইউনিয়নের কার্ড বঞ্চিতরা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং তালিকা নতুন করে তৈরি করে প্রকৃত হতদরিদ্রদের নাম অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- মাগুরা : বড়লোক শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে প্রাধান্য দিয়ে সাজানো তালিকায় কমপক্ষে ৫০ ভাগ ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণের অনিয়ম নিয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ৩ নং কুছুন্দী ইউনিয়নের ভুক্তভোগীরা। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য থেকে শুরু করে সরকার দলীয় নেতারাও এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কুছুন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান ও ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান, রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাসসহ অনেকে জানান, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম মোল্যা হতদরিদ্রদের জন্যে চাল বিতরণের যে তালিকা করেছেন তার মধ্যে ৫০ শতাংশই ধনী ব্যক্তি ও ভুয়া নাম ঠিকানা অন্তর্ভুক্ত। চেয়ারম্যানের ২৩৫ জনের তালিকার ৬৮,৬৯,৭৫,৭৬ ক্রমিক নম্বরে তার বড়লোক চাচাতো শ্যালক রিয়াজুল ইসলাম, তার স্ত্রী সাদিয়া পারভিন অপর শ্যালক রানা, তার স্ত্রী পলি বেগমসহ কমপক্ষে ৬০ জন আত্মীয়-স্বজনের নাম আছে। তালিকার বিষয়ে মিঠুন মজুমদার, আবদুল মান্নানসহ কুছুন্দি ইউনিয়নের ১২ সদস্যের কেউই জানেন না বলে জানিয়েছেন। এটি চেয়ারম্যান এককভাবে করেছেন বলে তারা দাবি করেন। তালিকায় ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কৃষ্ণপুর গ্রামের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ ভাদুড়ী ছাড়া আর কারও নাম নেই। একই অবস্থা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের। সেখানে শৈলডুবি ও খর্দ কুছুন্দী গ্রামের কোনো হতদরিদ্রের নাম নেই। অথচ ইউনিয়নের বাইরে পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত লক্ষ্মীকান্দর ও বারাশিয়া গ্রামের ১০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব ভুয়া তালিকাভুক্ত নামধারীর চাল চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের ছেলে আবদুল্লাহ আল ফয়সাল হিমন কালোবাজারে বিক্রি করছে। নির্ধারিত ডিলার আবদুর রহিম বলেন,  যে তালিকা দেওয়া হয়েছে সে অনুযায়ী চাল বিতরণ করছি। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার ছেলে আবদুল্লাহ আল ফয়সাল হিমন বলেন,‘ তালিকা নিয়ে একটু সমস্যা ছিল। পরে সেটি সমাধান করা হয়েছে’। সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আনোয়ারুল করিম বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে হতদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা  কেজির চাল বিক্রির কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জেলার ৪৫টি ইউনিয়নেই সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা একতরফা তালিকা তৈরি করায় বঞ্চিত হয়েছে ভূমিহীন, দিনমজুর ও হতদরিদ্র পরিবারগুলো। গতকাল দুপুরে চালের দাবিতে আদিতমারি উপজেলার কমলাবাড়ি ইউনিয়নের কার্ড বঞ্চিত হতদরিদ্ররা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বিক্ষোভ করে এবং তালিকা নতুন করে তৈরি করে হতদরিদ্রদের নাম অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান। মরতুজা (৭০), আনোয়ারা(৩০), আয়েশা বেওয়া (৬৭) ও কাঞ্চন বেওয়া(৬০) জানান, প্রথম তালিকাতে তাদের নাম থাকলেও চাল পাননি, খোঁজ নিয়ে দেখেন তাদের চাল অন্যরা তুলে নিয়েছে। টাকার বিনিময়ে কার্ড বিক্রি করা হয়েছে। তাই তারা কার্ডের চালের দাবিতে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। টাকা দিতে না পারায় তাদের নামে কার্ড না হয়ে যারা সচ্ছল তাদের নামে হয়েছে কার্ড। এই ইউনিয়নে দুই বছর আগে মারা গেছেন অথচ তার নামেও চাল উত্তোলন করা হয়েছে। অনিয়ম নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেও সুফল পাননি উল্লেখ করে কমলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আলাল জানান, তার ইউনিয়নে সরকারিদলীয় নেতা-কর্মীরা চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সহযোগিতা ছাড়াই তালিকা তৈরি করেছে। যেখানে ৫০ ভাগই স্বচ্ছল ব্যক্তি এ খাদ্যবান্ধব কার্ড পান। আদিতমারির উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহিনুর  রহমান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, এতে আমাদের হাত নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর