বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দেবী বিসর্জনে শেষ হলো দুর্গোৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেবী বিসর্জনে শেষ হলো দুর্গোৎসব

ঢাকের বাদ্য আর আবির খেলায় দেবী বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হলো বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় পার্বণ শারদীয় দুর্গোৎসবের। লাখো ভক্ত কণ্ঠের আকুল আকুতির মধ্যে বিদায় হলো দুর্গতিনাশিনী দুর্গা। পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের শেষ দিনে গতকাল মণ্ডপে মণ্ডপে দশমীর বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে ঘটে সমাপ্তি। অতঃপর দেবীর বিসর্জন আর শান্তিজল গ্রহণ। গত বুধবার বোধনে ‘অরুণ আলোর অঞ্জলি নিয়ে আনন্দময়ী মা উমাদেবীর আগমন ঘটে মর্ত্যে। হিন্দু বিশ্বাসে টানা পাঁচ দিন মৃন্ময়ীরূপে মণ্ডপে মণ্ডপে থেকে গতকাল দেবী ফিরে গেছেন কৈলাসে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে। এবার ঘোড়ায় চড়ে আসা দেবী ফিরেছেনও একই বাহনে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে সাগর সৈকতে। একইভাবে সারা দেশে বিভিন্ন নদী ও জলাশয়ে বিসর্জন পর্ব সম্পন্ন হয়। সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভুজা দেবী। বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব। এবার প্রতিমা বিসর্জনের কর্মসূচি মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশ ছাড়াও র‌্যাব, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছিল সার্বক্ষণিক সতর্ক প্রহরায়। রাজধানীতে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বিজয়া শোভাযাত্রা শেষে বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। রাজধানীসহ সারা দেশে ২৯ হাজারের বেশি মণ্ডপে দুর্গা প্রতিমা হয়েছে এবার। মণ্ডপে মণ্ডপে ছিল ভক্তদের ঢল। ঢাক আর শঙ্খধ্বনি। ঢাকের বাদ্য, সিঁদুর খেলা। মুখরিত মণ্ডপ প্রাঙ্গণ। একদিকে বিদায়ের সুর। অন্যদিকে উৎসবের আমেজ। ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, তাঁতীবাজার, শাঁখারিবাজার, স্বামীবাগসহ বিভিন্ন মণ্ডপে চলে বিষাদে-আনন্দে বিদায় উৎসব।সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, অসুর শক্তি বিনাশকারী দেবী বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে সব অপশক্তির বিনাশ হয়। বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনে অংশ নিতে দুপুর গড়িয়ে যেতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পূজামণ্ডপ থেকে ভক্তরা ট্রাক ও ঠেলাগাড়িতে করে প্রতিমা নিয়ে সমবেত হতে শুরু করে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে। শোভাযাত্রার পূর্বে নারীরা দেবীদুর্গার ললাটের সিঁদুর আপন ললাটে এঁকে নেয়। পুরুষরা অশুভ শক্তির বিনাশ কামনা করেন। সবার অন্তরের কামনা আগামী শরতে আবার বাঙালি হিন্দুর ঘরে ঘরে ফিরে আসবেন মা ‘উমা’। মন্দির ও শোভাযাত্রার পথে বিপুল সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছিল র‌্যাব সদস্যদেরও। ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে শতাধিক প্রতিমা নিয়ে বের হয় বর্ণাঢ্য বিজয়া শোভাযাত্রা। ট্রাকবাহী প্রতিমাসহ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা, নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর পায়ে হেঁটে এবং বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে করে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। বিচিত্র সাজপোশাকে সজ্জিত হয়ে ভক্তরা ঢাক-ঢোল, করতাল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রসহ শোভাযাত্রায় যোগ দেয়। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়ানো হিন্দু নারীদের উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারদিক। পলাশী-কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে নবাবপুর রোড, সদরঘাট পেরিয়ে ওয়াইজঘাটে বুড়িগঙ্গা তীরে শেষ হয় শোভাযাত্রা। প্রতিমা ঘাটে নিয়ে আসার পর ভক্তকুল শেষবারের মতো ধুপধুনো নিয়ে আরতিতে মেতে ওঠে। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্যদিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেওয়া হয়। নদীপাড়ে ধর্মীয় রীতি মেনে অপরাজিতা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিমা বিসর্জন শেষে ‘শান্তি জল’ নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যায় মণ্ডপে চলে ‘আশীর্বাদ প্রদান’।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর