শিরোনাম
বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রূপগঞ্জে ‘মোশা বাহিনী’র গুলিতে ইউপি চেয়ারম্যানকে হত্যার চেষ্টা

পূজামণ্ডপে পিটুনিতে আহত ১২

নিজস্ব প্রতিবেদক

রূপগঞ্জে ‘মোশা বাহিনী’র গুলিতে ইউপি চেয়ারম্যানকে হত্যার চেষ্টা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে ‘মোশাবাহিনী’ সোমবার রাতে নাওড়া পূর্বপাড়া পূজামণ্ডপে হামলা চালায়। এ সময় তারা কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ রফিকুল ইসলাম রফিককে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করে। সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে ও পিটিয়ে ১২ ব্যক্তিকে জখম করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জানা গেছে, মোশারফের চাঁদাবাজিতে বাধা দেওয়ায় এ হামলা।

পূর্বপাড়া পূজা কমিটির সদস্য ললিত চান, রিপন, হরিপদ, প্রাণেশ্বর ও অজিত জানান, দুর্গোৎসব শুরু হওয়ার আগে স্থানীয় সন্ত্রাসী মোশারফ পূজা আয়োজকদের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। পূজা কমিটি বিষয়টি কায়েতপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান রফিককে জানায়। তিনি মোশারফকে সাবধান করে দেন। সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় স্থানীয় এমপি গাজী গোলাম দস্তগীর বীরপ্রতীক ও ইউপি চেয়ারম্যান রফিক এবং অন্য নেতা-কর্মীরা মণ্ডপ পরিদর্শনে আসেন। এ সময় রফিককে পূজামণ্ডপে প্রবেশে বাধা দেয় মোশারফ ও তার বাহিনী। একপর্যায়ে মোশাবাহিনী গুলি চালায়। এমপি পুলিশ পাহারায় মণ্ডপ ত্যাগ করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, জেলার ডিবি ওসি মাহমুদুল ইসলাম, রূপগঞ্জ থানার ওসি ইসমাইল হোসেন, তদন্ত (ওসি) জসিম উদ্দিন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বর্তমানে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক এ ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। রূপগঞ্জ থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, নাওড়ায় গত কয়েক বছরে জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় মোশারফ নিরীহ মানুষের জমি দখল শুরু করে। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তখন ভোল পাল্টিয়ে ওই দলের কর্মী বনে যায় এই সন্ত্রাসী। বর্তমান সরকারের আমলে সেই যুবলীগ নেতা নাম ধারণ করে অবৈধ উপায়ে বহু জমি জবরদখল করে কোটিপতি বনে গেছে বলে অভিযোগ। তার মোশাবাহিনীতে ৩০০ সন্ত্রাসী আছে বলে রটনা। মোশারফের সন্ত্রাসী বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করে মোশারফের ভাই আলী আজগর। তার সঙ্গে রয়েছে বদিউজ্জামান বদি, সাখাওয়াতুল্লাহ ওরফে ইয়াবা সাখাওয়াত, আনোয়ার হোসেন ওরফে ধলকুর আনোয়ার। এ বাহিনী এলাকায় চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্মেও লিপ্ত। মোশারফের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাসহ বিভিন্ন থানায় দেড় ডজন মামলা রয়েছে। সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করতে এ বাহিনী কয়েক দিন পরপর এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। গজারিয়ার এক ব্যক্তি জানান, মোশারফ ও তার বাহিনী তাদের ৯৮ শতাংশ জমি জাল দলিল করে বালু ভরাট করে দখল করেছে। এলাকার অন্য এক কৃষক জানান, মোশারফবাহিনী তাদের ৮০ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, একসময়ের ছিঁচকে চোর মোশারফ ছিনতাই, ডাকাতি করে হাত পাকিয়ে এখন সন্ত্রাসীদের গডফাদার হয়েছে। তার নির্দেশ ছাড়া এলাকার কোথাও কোনো অপকর্ম ঘটে না।

মোশারফবাহিনীর অপকর্ম : কয়েক বছর আগে মোশাবাহিনীর হামলায় গুরুতর আহত হন রূপগঞ্জের নাওড়া এলাকার কালীপ্রসাদ ও সুশীল। ২ লাখ টাকা চাঁদার জন্য মোশাবাহিনী তাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। পরে প্রাণভয়ে তারা অজ্ঞাতবাসে চলে যান। দুই বছর আগে মোশাবাহিনীর মোতালিব, বদিউল, সাখাওয়াত, আনোয়ার, মজিবরসহ আরও ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী পিস্তল, রামদা, বল্লমসজ্জিত হয়ে নাওড়ার মোক্তার হোসেনের বাসায় ঢুকে ২ লাখ টাকা চাঁদা চায়। চাঁদা না পেয়ে তারা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। সন্ত্রাসীরা মোক্তারের চাচাতো ভাই নবী হোসেনের ঘরে ঢুকেও ভাঙচুর চালায়। সেখান থেকে তারা নগদ ৭০ হাজার টাকা, সোনার অলঙ্কারসহ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার মালপত্র লুটে নেয়। ২০১২ সালের ৬ মে বড় বেরাইদে নাজিম উদ্দিন তার নিজের জমিতে ড্রেজার দিয়ে মাটি ভরাটের সময় বাধা দেয় মোশাবাহিনী। এ সময় চাঁদার দাবিতে তারা একটি ড্রেজারে আগুন ধরিয়ে দেয়।

সর্বশেষ খবর