শিরোনাম
রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চীনা অর্থায়নে বদলে যাবে চট্টগ্রাম

রাষ্ট্রপতির ২২ ঘণ্টার বাংলাদেশ সফর

রিয়াজ হায়দার, চট্টগ্রাম

চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফর এবং উন্নয়ন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরে কী পেল চট্টগ্রাম? চট্টগ্রামের উন্নয়ন গতিধারা এর ভিত্তিতে কেমন করে অবদান রাখছে জাতীয় অর্থনীতিতে—এমন সব প্রশ্নে আর আশাবাদে মুখর এখন দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগর চট্টগ্রাম। এমনিতে দীর্ঘদিন ধরে ‘কানা ছেলের নাম পদ্মলোচনের’ মতো অবস্থা চাটগাঁর। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোটের সময়কালে চট্টগ্রামকে ‘বাণিজ্যিক রাজধানী’ ও ‘দ্বিতীয় রাজধানী’ হিসেবে সংসদে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও এ অঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বাণিজ্যিক রাজধানীর কার্যকারিতা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সুবিধার অভাব অব্যাহত আছেই।

২০০৮ সালে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠের এক সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানী গড়তে কার্যকর সব উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দেন। নিজ হাতে চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব তুলে নেওয়ারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামের যে এগিয়ে চলা শুরু, চীনের রাষ্ট্রপতির সফরে এখানকার তিনটি মেগা প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে তা যেন নতুন মাত্রা পেয়েছে—এমনটাই মনে করছেন চট্টগ্রামের উন্নয়ন-সহযোগী, উন্নয়ন-বিশ্লেষক, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও সচেতন নাগরিক সমাজ।

স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, ‘জি টু জি’ ভিত্তিতে ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল এবং ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড় আনোয়ারায় চীনের ‘স্পেশাল ইকোনমিক জোন’ এবং বেসরকারি পর্যায়ে বাঁশখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের অনুচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রত্যাশিত তিনটি বিশেষ প্রকল্পের ঠাঁই না থাকায় অনেকের মধ্যে আশাহতের বেদনা ভর করেছে। তবু স্বাক্ষরিত আলোচ্য তিন চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব হলে শুধু চট্টগ্রাম নয়, ‘তা হবে গোটা দেশেরই প্রাপ্তি’—বলেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. অনুপম সেন। চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উপাচার্যের মতো চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলমও মনে করেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন নিরিখে এই নবযাত্রা চট্টগ্রামে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন মনে করেন, কর্ণফুলী টানেলসহ চীনের সহযোগিতার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উন্নয়ন সম্ভব হলে বদলে যাবে চট্টগ্রামের চিত্র। আর এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রামের প্রতি আন্তরিকতা আরও একবার প্রমাণিত হলো। এখন প্রয়োজন উন্নয়ন কাজ সম্পাদনে সবার সহযোগিতা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইখতেখার উদ্দিন চৌধুরী মনে করেন, কর্ণফুলীতে টানেল এবং স্পেশাল ইকোনমি জোন হলে বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চেহারা উন্নয়নের আলোয় আমূল বদলে যাবে। চট্টগ্রামের পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম জানান, টানেলটি সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম শহর হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন পথ উন্মুক্ত হবে, যা ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ উজ্জ্বল করবে। এদিকে সাবেক সিটি মেয়র ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীও চীনের রাষ্ট্রপতির এ সফরে সম্পাদিত চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, চীনের এই চুক্তি এবং ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতির নেপথ্যে কোনো ভূরাজনৈতিক লক্ষ্য রয়েছে কি না তা পরবর্তী সময়ে বোঝা যাবে। তবে বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী টানেলটি হলে অবকাঠামোগত ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে। সাবেক এই মেয়র প্রশ্ন রেখে বলেন, চীনের প্রত্যাশিত ঋণে সম্পাদিতব্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে টেন্ডারে চীন ছাড়া অন্য কোনো পক্ষ অংশ নিতে পারবে কি না, চুক্তির শর্তাবলির নিরিখে এর ওপরও উন্নয়নের গতিধারার অনেকটা নির্ভর করছে। অন্যদিকে উন্নয়নে চীনের এমন এগিয়ে আসাকে চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের একটি বড় রাজনৈতিক বিজয় বলেও মনে করছেন রাজনীতি-সচেতনরা। তাদের মতে, মুক্তিযুদ্ধে যে রাষ্ট্রটি বিরোধিতা করেছিল, সেটিই এখন বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগী হতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, যা নিঃসন্দেহে একটি রাজনৈতিক বিজয়। চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন আন্তর্জাতিক এমন স্বীকৃতি অর্জনের পাশাপাশি চট্টগ্রামের এই প্রাপ্তির পেছনে শতভাগ কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীরই বলে জানান। তিনি বলেন, এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। উল্লেখ্য, ডিসেম্বর থেকে প্রস্তাবিত কর্ণফুলী টানেলটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে এবং ২০২০ সালে তা ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। একইভাবে স্পেশাল ইকোনমিক জোনটি ২০২০ সালের শেষ নাগাদ চালু হবে। ইতিমধ্যে ২০১৪ সালে ১২ কোটি টাকার টানেলের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি শুরু হয়। অন্যদিকে বেসরকারি পর্যায়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্রটির প্রাক্কলন ব্যয় নির্দিষ্ট হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর