রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু

পদ্মা সেতুর সার্ভিস এরিয়ার কাজ সমাপ্তির পথে

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের পদ্মার চরে অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অলিম্পিক ভিলেজের জন্য ১২০০ একর জমি নির্ধারণ করে তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। শুরু হয়েছে দফায় দফায় যাচাই-বাছাই। যৌথ পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, ক্রীড়া সচিব কাজী আখতার উদ্দিন আহমেদ, ক্রীড়া পরিষদ ও সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর খুব কাছে জেলার লৌহজংয়ের ব্রাহ্মণগাঁও, তারাটিয়া, ধানকুনিয়া ও সাইনহাটি মৌজায় পদ্মার চরে আন্তর্জাতিক মানের অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ভিলেজে ক্রিকেট, ফুটবলসহ বেশ কয়েকটি স্টেডিয়াম নির্মাণসহ খেলাধুলার নানা সুযোগ-সুবিধা থাকবে বলে জানা গেছে। এসব জমির অধিকাংশই সরকারি খাসজমি। তবে ব্রাহ্মণগাঁও ও সাইনহাটি মৌজায় প্রায় আড়াই শ’ পরিবার সরকারের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে বসবাস করছে।

এদিকে চলতি মাসে শেষ হতে চলেছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুর সার্ভিস এরিয়া নির্মাণ কাজ। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ এই সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়নের মাইলফলক উন্মোচিত হবে এ সেতুর বাস্তবায়নে। ইতিমধ্যে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নের সেতু আর কিছুদিনের মধ্যেই দৃশ্যমান হয়ে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রকল্প এলাকায় নির্মিত সার্ভিস এরিয়াগুলোর কাজ শেষ হলে এ সেতু অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের পাশাপাশি এখানকার পর্যটন খাতে যোগ করবে নতুন মাত্রা। বিশেষ করে সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হলে এর সুফল পাবেন দেশের পর্যটনপ্রেমীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মাসের মধ্যেই সার্ভিস এরিয়া নির্মাণের কাজ শেষ হবে। পদ্মা সেতু ঘিরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন লালিত হবে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে অন্য জেলাগুলোর যাতায়াতব্যবস্থা অনেক এগিয়ে যাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় সৃষ্টি হবে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার সুযোগ। দেশের অর্থনৈতিক আয় বাড়বে। সেতুর কাজের সুবিধার জন্য মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে গড়ে তোলা হয়েছে তিনটি সার্ভিস এরিয়া। মূল সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ আবদুল কাদের বলেন, এর মধ্যে এক ও দুই নম্বর সার্ভিস এরিয়ায় মূল সেতু, নদীশাসন প্রকল্প ও সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা থাকছেন। তিন নম্বর সার্ভিস এরিয়ায় থাকবেন সেনা কর্মকর্তারা। আপাতত এ তিনটি সার্ভিস এরিয়া দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের আবাসন এবং গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হলেও এগুলোকে ঘিরে পদ্মার দুই পারে গড়ে উঠছে পর্যটন সম্ভাবনা। বিশেষ করে দুই নম্বর সার্ভিস এরিয়াটিকে পুরোপুরি গড়ে তোলা হচ্ছে পর্যটনবান্ধব করে। তিনটি সার্ভিস এরিয়া নির্মাণে সার্বিক তদারক করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেতুর কাজ শেষ হলে ৭৭ হেক্টর এলাকাজুড়ে নির্মিত দুই নম্বর সার্ভিস এরিয়ায় পর্যটকদের জন্য থাকবে আবাসনের পাশাপাশি আধুনিক সব সুবিধা। চলতি মাসের মধ্যেই নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ করে সার্ভিস এরিয়াগুলো সেতু বিভাগের হাতে হস্তান্তর করবে সেনাবাহিনী। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শত শত ট্রাকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিয়ে আসা হয়েছে নানা ধরনের নির্মাণসামগ্রী। আসছে প্রয়োজনীয় ভারী যন্ত্রপাতি। দেশি-বিদেশি হাজার হাজার শ্রমিক আর কর্মকর্তার থাকার জন্য মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে বানানো আছে বড় বড় ঘর। একদিকে মূল সেতুর টেস্ট পাইল বসানো, প্রথম শুরু হওয়া মূল পাইলিংয়ের কাজ এগিয়ে চলছে, অন্যদিকে নদীর মধ্যে চলছে ড্রেজিং ও পিলার পাইলিং। এ সেতুর পাইলগুলোর ১২০ মিটার বা ৪০ তলা ভবনের সমান কাঠামো পানির নিচে থাকবে। সব মিলিয়ে সেতুটির একেকটি পাইলের দৈর্ঘ্য হবে ১৫০ মিটার। পাইলগুলো আকারে হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড়। তেমনি এগুলো যাবে সবচেয়ে বেশি গভীরে। অন্যদিকে এই প্রথম নিজস্ব অর্থায়নে বড় কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, যা ইতিহাস হয়ে থাকবে। এটি নির্মিত হলে সরকারের ইমেজ বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দাতা দেশগুলোর অন্যায় হস্তক্ষেপের প্রবণতা কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মাওয়া পয়েন্টে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়কে থাকা ব্রিজ, সংযোগ সড়কের পাশের সার্ভিস রোড তৈরি, ড্রেজিং ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কাজ শেষের পথে। ভারী ভারী নির্মাণযন্ত্র দিয়ে চলছে পাথর ভাঙা, মাটি কাটা, মাটি ভরাট করা, রাস্তা সমান করার কাজ। ওয়েল্ডিংয়ের আলোর ঝলকানি আর ভারী যন্ত্রপাতির শব্দে কর্মমুখর পদ্মার পাড় ঘেঁষে অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ চলছে পুরোদমে। এদিকে এ সেতুর কাজ পর্যবেক্ষণে উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দল ইতিমধ্যে কর্ম এলাকা পরিদর্শন করেছে। এই বিশেষজ্ঞ প্যানেল সেতুটির কর্ম এলাকায় দুই দিন ধরে বৈঠক করে। জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ বাংলাদেশের পাঁচজন এবং বিদেশি চারজন— মোট নয়জনের এ টিম বৈঠক করে। নতুন গতি পেয়ে পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞে দেশি-বিদেশি প্রায় ২০ হাজার কর্মী নিরন্তর কাজ করছেন। এর মধ্যে ১৮ হাজার বাংলাদেশি আর ২ হাজার বিদেশি কর্মী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫০০ রয়েছেন বিদেশি নারী কর্মী। দেশি-বিদেশি এই শ্রমিকরা রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। এই ২০ হাজারের বাইরে নিরাপত্তায় রয়েছেন দুই পারে ২ হাজার সেনা সদস্য। এ ছাড়া পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন তো রয়েছেই। এর আগে উপজেলার পদ্মা সেতুর প্রকল্পের সার্ভিস এরিয়ায় সভাকক্ষে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘পদ্মা সেতু এখন স্বপ্ন নয়। এটি এখন দৃশ্যমান বাস্তব। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।’ অগ্রগতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ প্রত্যাশিত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এ সেতু বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনৈতিক সাফল্য দেখে বিশ্ব অবাক হবে। আর আমরা পৌঁছব সাফল্যের শীর্ষে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর