সবার গন্তব্য যেন লালনধাম, কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি। যেখানে মিলন ঘটেছে নানা ধর্ম ও বর্ণের মানুষের। তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সাঁইজির অমর বাণী— ‘সর্ব সাধন সিদ্ধ হয় তার, ভবে মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার।’ কিংবা ধ্বনিত হচ্ছে— ‘মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।’ কুষ্টিয়া শহর থেকে মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা ছেঁউড়িয়া। এখন সে রাস্তায় যেতে সময় লাগছে ১ ঘণ্টার উপরে। সাঁইজির টানে এ ধামে বাউল ছাড়াও সাধারণ দর্শনার্থীর ভিড় জমেছে। গতকাল থেকে আখড়াবাড়িতে শুরু হয়েছে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১২৬তম মৃত্যুবার্ষিকীর তিন দিনের উৎসব ও মেলা। সন্ধ্যায় এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। লালনের অনুসারীরা প্রতি বছর ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ দিনটিকে পালন করে আসছেন। তবে লালন একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর এ আয়োজনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনের অনুষ্ঠান। এই উৎসবের কোনো দাওয়াত নেই, পত্র নেই— তবুও এক উদাসী টানে মানুষ ছুটে এসেছে দলে দলে, হাজারে হাজারে। যেখানে মিলন ঘটেছে নানা ধর্ম, নানা বর্ণের মানুষের। কেউ এসেছেন ধবধবে সাদা পোশাকে, আবার কেউ গেরুয়া বসনে। সাঁইজির টানে এ ধামে বাউল ছাড়াও সাধারণ দর্শনার্থীর ভিড় জমেছে। ‘বাড়ির পাশে আরশী নগর’, ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’, ‘সত্য বল সুপথে চল’, ‘এলাহি আলামিন গো আলা বাদশা আলমপনা তুমি’— এ রকম অসংখ্য লালন সংগীতের সুরের মূর্ছনায় তারা মাতিয়ে তুলেছেন বাউলধাম। লালন মাজারের আশপাশে ও মরা কালী নদীর তীর ধরে বাউলেরা ছোট ছোট আস্তানা গেড়ে সাঁইজিকে স্মরণ করছেন গানে গানে। একতারা-দোতারা, ঢোল-খোল, বাঁশি, প্রেমজুড়ি, চাকতি, খমক হাতে ক্ষণে ক্ষণেই খণ্ড খণ্ড মজমা থেকে নৃত্যসঙ্গীতের তালে তালে ছলকে উঠছে ভাববাদী ঢেউ। আখড়ার একটি দল থামছে তো অন্যটি জমিয়ে রাখছে চারপাশ।