সোমবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জট খুলল ঢাকা আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের

শিমুল মাহমুদ

চীনের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে চার বছরের জটিলতা কাটল। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ১৩৯ কোটি ডলার বিনিয়োগ সহায়তা পাওয়া যাবে চীনের কাছ থেকে। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের ২৮ প্রকল্পে চীনের অর্থায়ন করার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পও রয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিমানবন্দরের সঙ্গে সাভার শিল্পাঞ্চল, ঢাকা ইপিজেড, সাভারের নবীনগর ও গাজীপুরের চন্দ্রার যোগাযোগে স্বাচ্ছন্দ্য আসবে। পাশাপাশি এটি বিমানবন্দরে বর্তমানে নির্মাণাধীন ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ তৈরি করবে। সাভার স্মৃতিসৌধ থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করা যাবে এক ঘণ্টারও কম সময়ে। আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের গার্মেন্ট পণ্য দ্রুততম সময়ে পৌঁছে যেতে পারবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। উত্তরাঞ্চলের ২৬ জেলার প্রায় ৪ কোটি মানুষের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ সহজ হবে। পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের সব আমদানিপণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রাজধানীর ওপর দিয়ে যানজট এড়িয়ে চলে যেতে পারবে গন্তব্যে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। সেতু ভবনের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল বলেছেন, প্রকল্পটি প্রাক্কলনের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন পর্যায়ে এর ব্যয় আরও বাড়তে পারে। তবে শুক্রবার চীনের প্রতিশ্রুতিতে প্রায় সমপরিমাণ বিনিয়োগ ধরা হয়েছে। এদিকে পুরোদমে এগিয়ে চলছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক ও রেললাইন ঘেঁষে বিমানবন্দর থেকে কুড়িল ফ্লাইওভার হয়ে বনানী পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা জুড়ে এগিয়ে চলেছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ। ভারী নির্মাণ সরঞ্জাম নিয়ে দিনরাত কাজ করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। বিমানবন্দর এলাকা থেকে কুড়িল ফ্লাইওভার হয়ে ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশন পর্যন্ত অধিকাংশ এলাকায় মাটি ভরাটের কাজ শেষ পর্যায়ে। কোনো কোনো জায়গায় পাইল বসানোর কাজ চলছে। রাজধানীর সড়ক যোগাযোগের বড় অবকাঠামো হিসেবে ২০১৮ সালে নির্মাণ সম্পন্নের লক্ষ্য রেখে ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ উড়ালসড়কের কাজ চলছে। এটি সম্পন্ন হলে বিমানবন্দর থেকে মাত্র ২০ মিনিটে যাওয়া যাবে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালীতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) আওতায় নির্মাণাধীন প্রকল্পটির কাজের ১৫ শতাংশেরও বেশি অগ্রগতি হয়েছে বলে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তারা জানান, নির্ধারিত সময়েই এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ করা যাবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আগের মেয়াদে ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের প্রথম চুক্তি হয় এবং একই বছরের ৪ এপ্রিল এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। তবে জমি অধিগ্রহণ, নকশা পরিবর্তন ও মূল্যস্ফীতির কারণে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বেড়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর ইতাল-থাইয়ের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি হয় সেতু বিভাগের। এরপর গত বছরের ১৬ আগস্ট প্রথম ধাপে মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এয়ারপোর্ট রোডের কাওলা থেকে শুরু করে বনানী পর্যন্ত এখন কাজ চলছে। কুড়িল ফ্লাইওভারের পূর্বাচলমুখী লুপের ওপর দিয়ে বনানী পর্যন্ত নির্মাণ হবে এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম ধাপের ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটারের কাজ। তিন ধাপের নির্মাণকাজের দ্বিতীয় পর্যায়ে বনানী থেকে মগবাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার এবং শেষ পর্যায়ে মগবাজার থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ৬ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে মহাখালী-মগবাজার পর্যন্ত বেশির ভাগ অংশই রেললাইনের ওপরে থাকছে। প্রায় ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ উড়ালসড়কে ৩১টি র‍্যাম্প ও সংযোগ সড়কসহ মোট দৈর্ঘ্য হবে ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। পিপিপির এ প্রকল্পে শুরুতে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও সংযোগ সড়কসহ ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের নির্মাণ ব্যয় হবে ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে থাইল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লি.।

সর্বশেষ খবর