বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

গ্যাস লুটে আওয়ামী লীগ বিএনপি ঐক্য

কুমিল্লায় লুটপাট হচ্ছে কোটি টাকার গ্যাস

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

গ্যাস লুটে আওয়ামী লীগ বিএনপি ঐক্য

রাজনীতির মাঠে একে অপরের চরম শত্রু। তবে লোপাটের বেলায় তারা একজন আরেকজনের জানে কা দোস্ত। এমনই প্রমাণ মিলল এবার কুমিল্লায়। এখানে প্রতিমাসে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা মিলে লুট করেছেন বাখরাবাদের শতকোটি টাকার গ্যাস। এ গ্যাস লুট করা হয়েছে সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও অবৈধ আবাসিক সংযোগের মাধ্যমে। বিষয়টি বেরিয়ে আসার পর বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষ ১০টি সিএজি ফিলিং স্টেশনের সংযোগ ও কয়েকটি উপজেলায় বিচ্ছিন্ন করেছে অবৈধ আবাসিক সংযোগ। এই ১০টি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের অধিকাংশের মালিক আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা। এদিকে গ্যাস চুরির সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বড় একটি অংশ জড়িত থাকলেও নামমাত্র দুজনকে বদলি করেই দায় সেরেছে বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষ। বাখরাবাদের বিভিন্ন সূত্র জানায়, জেলায় প্রতিষ্ঠানটির অধীন ৮৯টি সিএনজি পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে অভিযান চালানো হয় ১৭টিতে। আর গ্যাস চুরির আলামত পাওয়া যায় এর ১০টিতে। এই ১০টি পাম্পে গত এক মাসে প্রায় চার কোটি টাকার গ্যাস চুরি হয়েছে। আর এক বছরে চুরি হয়েছে প্রায় ৪৮ কোটি টাকার গ্যাস। তবে যেসব সিএনজি ফিলিং স্টেশনে অভিযান চালানো হয়নি, এর অধিকাংশই দুর্নীতিতে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে বাখরাবাদের আওতাধীন কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় দেওয়া হয়েছে অবৈধ আবাসিক সংযোগ। বেশি অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়েছে মুরাদনগর, দেবিদ্বার, বুড়িচং, সদর, দাউদকান্দি, হোমনা ও লাকসামে। প্রকৌশলী মো. রেজাউল ইসলাম খান বাখরাবাদের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর বেরিয়ে এসেছে এসব থলের বেড়াল। মঙ্গলবার রাতে বাখরাবাদ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. রেজাউল ইসলাম খান বলেন, সিএনজি স্টেশনগুলোর মধ্যে ১৭টিতে অভিযান চালানো হয়েছে। এর ১০টিতে অবৈধ সংযোগ ও টেম্পারিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে এই ১০টি সিএনজি স্টেশনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষ। বাকি সিএনজি স্টেশনগুলোতেও অভিযান চালানো হবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাখরাবাদের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) প্রকৌশলী এহসানুল হক পাটোয়ারী ও উপমহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) প্রকৌশলী আবুল বাশার, কুমিল্লা সিএনজি পাম্প অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি আলী মনসুর ফারুক একজোট হয়ে প্রতি মাসে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আত্মসাৎ করে এসেছেন। অবৈধ গ্যাস সংযোগে জড়িত থাকায় মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) প্রকৌশলী এহসানুল হক পাটোয়ারী ও উপমহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) প্রকৌশলী আবুল বাশারকে এরই মধ্যে বদলি করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জিএম ইউসুফ আলী ও ভিজিলেন্স বিভাগের কর্মকর্তা জাহিদুর রেজাকে নিয়েও সংবাদকর্মীরা অভিন্ন অভিযোগ তোলেন। প্রকৌশলী আবুল বাশার দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সচেতন নাগরিক কমিটি, কুমিল্লার সদস্য। অবৈধ সংযোগ থাকায় যেসব সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এগুলো হচ্ছে—বিশ্বরোডের ঝাগুর-ঝুলির রাহমা সিএনজি ফিলিং স্টেশন, সুয়াগঞ্জ ভূঁইয়া সিএনজি ফিলিং স্টেশন, সৈয়দপুর-ডুবাইচরের নূর অ্যান্ড ব্রাদার্স সিএনজি ফিলিং স্টেশন, আলেখার চর সাবুরিয়া সিএনজি ফিলিং স্টেশন, বুড়িচং কালাকচুয়ার সাকুরা সিএনজি ফিলিং স্টেশন, মিয়াবাজার হাইওয়ে লিংক সিএনজি ফিলিং স্টেশন, চান্দিনার আরএনআর সিএনজি ফিলিং স্টেশন, পদুয়ার বাজার রিভার ভিউ সিএনজি ফিলিং স্টেশন এবং ঝাগুরঝুলির মুক্তি সিএনজি ফিলিং স্টেশন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. রেজাউল ইসলাম খান জানান, সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা সিএনজি স্টেশনগুলো প্রতিদিন যদি ৮০ ভাগ চাপে গ্যাস বিক্রি করে থাকে, তাহলে মাসে তারা তিন কোটি টাকার গ্যাস চুরি করেছে। আর যদি ১০০ ভাগ চাপে গ্যাস বিক্রি করে থাকে, তাহলে চুরি করেছে তিন কোটি ৯০ লাখ টাকার গ্যাস। অভিযোগের বিষয়ে কুমিল্লা সিএনজি পাম্প অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি আলী মনসুর ফারুক বলেন, ‘আক্রোশমূলক আমার পাম্পের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আমার মিটারে ত্রুটি ছিল তা আগেই অফিসকে জানিয়েছি। তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’ তিনি বলেন, ‘আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই। তবে এ ঘটনায় কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারে।’ উপমহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) প্রকৌশলী আবুল বাশার বলেন, ‘ভিজিলেন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ সিএনজি পাম্পের অনিয়মের বিষয়ে ভালো বলতে পারবে। সেলস বিভাগের অনিয়মের সুযোগ নেই। কর্মজীবনে আমি কোনো অনিয়ম করিনি। আমার একার অনিয়ম করার সুযোগ নেই।’ বক্তব্য নিতে একাধিকবার চেষ্টা করেও মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) প্রকৌশলী এহসানুল হক পাটোয়ারীকে পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর