বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
আইসিসিবিতে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

ডিজিটাল নিরাপত্তা বাড়ানো হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিজিটাল নিরাপত্তা বাড়ানো হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড উদ্বোধন করেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কেউ যাতে অপরাধ করতে না পারে সেজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। এজন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, ২০১৬ প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। এজন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, ২০১৬ প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল সিকিউরিটি কাউন্সিলও প্রতিষ্ঠা করা হবে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড, ২০১৬-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের প্রতিপাদ্য ‘ননস্টপ বাংলাদেশ’। অনুষ্ঠানে একটি রোবট প্রধানমন্ত্রীকে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড, ২০১৬-এর উদ্বোধনের অনুরোধ জানায়। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস এবং এটুআই কর্মসূচি যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সাত দেশের সাতজন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইন্টারনেটের ফলে কিছু সাইবার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। তাই এ খাতে নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। কেউ যেন ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহার করে অপরাধ করতে না পারে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে না পারে, নিরাপত্তার তথ্যগুলো যেন পাচার না হয়। হাওয়া ভবনকে ঘিরে যে ঘুষ বাণিজ্যের সৃষ্টি হয়েছিল, আমরা তা বন্ধ করেছি। তেমনি সাইবার অপরাধও বন্ধ করা হবে। তিনি বলেন, গত সাড়ে সাত বছরে আইসিটি খাতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ইতিমধ্যে দেশের সব জেলা থ্রিজি নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। ২০১৭ সালের মধ্যে আমরা ফোরজি নেটওয়ার্ক চালু করব। তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে চলেছি। এ স্বপ্ন পূরণের পথে যেন অনাকাঙ্ক্ষিত বাধা না আসে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্কসহ সারা দেশে ২০টির মতো হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ভিলেজ গড়ে তোলা হয়েছে। যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে এ বছরই পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হবে। কারওয়ান বাজারের জনতা টাওয়ারে শুরু হয়েছে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের কার্যক্রম। ছেলেমেয়েদের হাতে-কলমে কারিগরি শিক্ষা দিতে গড়ে তোলা হয়েছে আইটি ট্রেনিং সেন্টার। দুর্নীতি মোকাবিলায় ডিজিটাল বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি সেবা পেতে এখন আর মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয় না। লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম জমা দিতে হয় না। একসময় হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে ঘুষ বাণিজ্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছিল। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে স্বচ্ছতা এনে আমরা তা বন্ধ করেছি। অনলাইন টেন্ডারের কারণে ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি উপার্জনের পথ সুগম করতে ‘বাড়ি বসে বড়লোক’ কর্মসূচির আওতায় ১৪ হাজার ৭৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৭০ ভাগই নারী। তিনি বলেন, তরুণদের জন্য ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৫৫ হাজার তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ২০ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নারীদের জন্য আরও সহজ করতে ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ প্রকল্পের আওতায় আইসিটি ডিভিশন, রবি ও হুয়াওয়ে যৌথভাবে মোবাইল বাসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেবে। প্রধানমন্ত্রী তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রশংসা করে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে তার তথ্য ও গবেষণা উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ব্যাপক অবদান রাখছেন। আমি নিজেও তার কাছ থেকে আইসিটি সম্পর্কে জানছি, কম্পিউটার শিখছি। গত রাতেও তার কাছ থেকে মোবাইলের ছবি কীভাবে ল্যাপটপে নিতে হয় তা শিখেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে ১৩ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার হচ্ছে, ৬ কোটি ৪০ লাখ লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, ৫ হাজারের বেশি ডিজিটাল সেন্টার থেকে সেবা নিচ্ছে জনগণ। ৪০টিও বেশি দেশে সফটওয়্যার রপ্তানি করা হচ্ছে।

 তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বই ডিজিটাল করা হয়েছে। কোরআন শরিফও অর্থসহ ডিজিটাল করা হয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে বিশ্বমানের করতে সারা দেশে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৮ সালের মধ্যে আরও ১০ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য ইমরান আহমেদ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, অতিরিক্ত সচিব আশরাফুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের মহাপরিচালক কবির বিন আনোয়ার ও প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক, দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাহারা খাতুন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, সংসদ সদস্য ও বিদেশি কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড, ২০১৬-এ প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি মোবাইল বাসের উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে আগামী তিন বছরে আড়াই ল?াখ গ্রামীণ ও সুবিধাবঞ্চিত নারী প্রশিক্ষণ পাবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী মেলাপ্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২১ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে।

সর্বশেষ খবর