শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

সৈয়দপুরে পাখির অভয়াশ্রম, গাছে গাছে কলসি

আবদুল বারী, নীলফামারী

সৈয়দপুরে পাখির অভয়াশ্রম, গাছে গাছে কলসি

‘এসো পাখির বন্ধু হই, সুন্দর এ পৃথিবীকে বাঁচাই’— পাখি বাঁচানোর এ দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় বিভিন্ন পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তোলার লক্ষ্যে চার বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে ‘সেতুবন্ধন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সৈয়দপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও শহরের গাছে গাছে কলস বেঁধে দিয়ে পাখির নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি করে দিয়েছে এই সংগঠনটি। এসব কলসের ভিতরে বাসা বেঁধেছে দোয়েল, বুলবুলি, শারস, ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। কলসের বাসায় পাখি দিয়েছে ডিম, ফুটিয়েছে বাচ্চা। তাই পাখির কূজনে মুখর হতে শুরু করেছে সৈয়দপুরের বিভিন্ন এলাকা।

গ্রামবাংলার বিলুপ্ত প্রায় পাখিগুলোকে ফিরিয়ে আনার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে প্রায় চার বছর আগে পাখির অভয়াশ্রম তৈরির লক্ষ্যে ‘সেতুবন্ধন’ নামের স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটি গড়ে তোলেন সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের যুবক আলমগীর হোসেন। তার এ উদ্যোগ এখন অনেকটা সফলতা পেয়েছে। প্রথম দিকে তেমন সাড়া না পেলেও এখন সবাই সহযোগিতা করছে তাকে। সৈয়দপুর উপজেলায় প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে  বটগাছ, আমগাছ, কাঁঠালগাছসহ নানা জাতের গাছে বেঁধে রাখা হয়েছে অসংখ্য কলস। দুটি ডালের মাঝখানে কায়দা করে এমনভাবে হাঁড়িগুলো বসানো হয়েছে যেন বৃষ্টির পানি ভিতরে না যেতে পারে, আবার ঝড়-ঝঞ্ঝায় ছিটেফোঁটা পানি ঢুকে গেলেও যাতে পানি জমে না যায় তা নিশ্চিত করতে কলসগুলোতে ছোট ছোট ছিদ্র রয়েছে। আর তাই কালবৈশাখীসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিরাশ্রয়ী পাখিদের অনেকেই দল বেঁধে ছুটে আসছে এই আবাসনে। সেতুবন্ধন সংগঠনের সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, আমি প্রথমে আমার বাড়ির উঠোনে পাখির বাসা করে দেই, দেখি কয়েক দিনে পাখির আনাগোনা বেড়ে যায়। ২০১২ সালে পাখির সংরক্ষণ, প্রজনন ও নিরাপদ বাসস্থান গড়ে তোলার লক্ষ্যে বন্ধুদের নিয়ে ‘সেতুবন্ধন’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলি এবং নিজেদের অর্থায়নে বিভিন্ন গ্রামের সড়কের গাছপালায় কলস বেঁধে দিই। বর্তমানে এ উপজেলায় ছয় হাজার গাছে কলস বেঁধে দিয়েছি। ভবিষ্যতে পুরো জেলাকে এর আওতায় আনা আমাদের লক্ষ্য। সংগঠনের উপদেষ্টা বদরুদ্দোজা জানান, পাখিপ্রেমিক আলমগীর ও সেতুবন্ধনের নিরলস প্রচেষ্টায় সৈয়দপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম এখন পাখির কলকাকলিতে মুখরিত। পরিচিত বিভিন্ন পাখি ছাড়াও বেশ কিছু অপরিচিত পাখিও এখন এ অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে। সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, আলমগীর নিজ উদ্যোগে সৈয়দপুর উপজেলাসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে পাখির জন্য আবাসস্থল তৈরি করেছেন। এটি একটি মহতী উদ্যোগ। আমরাও  প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। সৈয়দপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. মুসা জঙ্গী জানান, পাখির জন্য অভয়াশ্রম সৃষ্টির ব্যক্তিগত উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়, এ বিষয়ে তাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সেতুবন্ধনের এ উদ্যোগটি পর্যায়ক্রমে সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এটি একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এভাবেই সবাই প্রকৃতিকে ভালোবাসলে প্রাকৃতিক সম্পদ আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। এ ব্যাপারে মানুষকে সজাগ করানোর জন্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, উঠান বৈঠক, কৃষকদের স্কুল, সাইকেল র‌্যালি, লিফলেট বিতরণ, সচেনতামূলক ক্যাম্পেইনসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়।

সর্বশেষ খবর