সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দুই সন্তানকে নিয়ে মায়ের বিষপান একজনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বাড্ডায় দুই শিশু সন্তানকে বিষ খাইয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এক মা। বিষক্রিয়ায় আরিয়ান নামে দেড় বছর বয়সী এক সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। চার বছর বয়সী অপর সন্তান আগমনীও মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। মা শাহানা বেগমের অবস্থাও সংকটাপন্ন। তাদের দুজনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা বলছেন, আগমনীর জ্ঞান ফিরেছে। সে মাঝে মাঝে কান্নাকাটি করছে আর বলছে, মায়ের কাছে যাব। শাহানাও একবার তাকিয়েছিল। তবে মা-মেয়ের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত তা বলা যাচ্ছে না।

পুলিশ জানায়, গত শনিবার রাতে উত্তর বাড্ডার চ-৪৯/২ নম্বর পঞ্চকুঞ্জ বাড়ির চতুর্থতলায় এ ঘটনা ঘটে। এটি রহস্যজনক ঘটনা। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে মা তার দুই সন্তানকে বিষাক্ত কিছু খাইয়ে হত্যার চেষ্টা করে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ঘটনার পর থেকে শাহানার স্বামী আমজাদ হোসেন পলাতক। এদিকে, গতকাল বিকালে ঢামেক মর্গ কর্তৃপক্ষ শিশু আরিয়ানের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে চাচা নূর ইসলামের কাছে হস্তান্তর করেন। ওই বাড়ির মালিক হাবিবুর রহমান শিকদার জানান, তিন বছর ধরে আমজাদ পরিবার নিয়ে চতুর্থতলার ওই ফ্ল্যাটে থাকছেন। তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখিনি। কিন্তু শনিবার সকালে ওই দম্পতির মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। পরে আমজাদ অফিসে চলে যান। রাত ১টার দিকে অফিস থেকে বাসায় ফিরে দরজা বন্ধ পান। পরে অনেক ডাকাডাকি করেন। একপর্যায়ে দরজা না খুললে আমজাদ অন্য এক স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে ওই স্বজন তাদের বিরোধ মেটাতে চতুর্থতলার ওই ফ্ল্যাটে আসেন। ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছিলেন না। বিষয়টি রহস্যজনক মনে হলে ওই ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করি। শাহানাসহ তার দুই সন্তানকে বিছানায় অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। দ্রুত তাদের বাড্ডা জেনারেল হাসপাতাল এবং পরে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত সোয়া ৪টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু আরিয়ানকে মৃত ঘোষণা করেন। শিশু আরিয়ানের চাচা আনোয়ারুল হক বলেন, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে শাহানাকে বিয়ে করেন আমজাদ। ওই দম্পতির দুই সন্তান ছিল। তাদের বাড়ি কুড়িগ্রামের রৌমারী থানার শৌলমারি গ্রামে। আমজাদ বনানীতে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ঘটনার সময় তিনি বাসায় ছিলেন না। ওই দম্পতির মধ্যে পারিবারিক কোনো কলহ ছিল না। ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন ভবনের ৫০২ নম্বর ওয়ার্ডের ৩২/এ নম্বর বেডে ভর্তি শাহানা বেগম। তিনি অচেতন অবস্থায় রয়েছেন। স্যালাইন চলছে। পুরনো ভবনের ২১০ নম্বর ওয়ার্ডের ৮ নম্বর বেডে ভর্তি শাহানার মেয়ে আগমনী। সেও অচেতন অবস্থায় রয়েছে। তারও স্যালাইন চলছে। দুজনের বেডের পাশেই স্বজনরা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তবে ঘটনা সম্পর্কে তারা কেউ কিছু বলতে পারেনি। এ ঘটনায় তারা হতবাক। আবাসিক চিকিৎসক ডা. সারোয়ার হোসেন বলেন, আগমনীর অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, দুই সন্তানকে বিষ খাওয়ানোর পর শাহানা নিজেও বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ওই ফ্ল্যাটে ফ্লোর ক্লিনার ও বেসিন পরিষ্কার করার পাউডার পাওয়া গেছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে শাহানার স্বামী আমজাদ পলাতক।

সর্বশেষ খবর