আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিভাগও ডিসেম্বরের শেষ দিকে এ নির্বাচন চাইছে বলে জানিয়েছে ইসি সচিবালয়। সরকারের এমন গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ তথা ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রাথমিক তারিখ নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন। আর নভেম্বরের মাঝামাঝিতে ঘোষণা হতে পারে তফসিল। এজন্য নির্বাচনের আচরণবিধি এবং বিধিমালাও চূড়ান্ত করেছে ইসি। এদিকে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরাই শুধু এ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। আর প্রার্থীর প্রস্তাবক-সমর্থক হতে হবে তাদেরই। জেলা পরিষদ নির্বাচনের বিধিমালায় এমন বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদে ভোটের আয়োজন করার ক্ষেত্রে সরকারের গ্রিন সিগন্যালও পেয়েছে ইসি। নভেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করে ২৮ ডিসেম্বরে ভোট করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন একজন নির্বাচন কমিশনার। এদিকে নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আচরণবিধিসহ প্রয়োজনীয় বিধিবিধান চূড়ান্ত হয়েছে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম?্যান ও সদস?্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সরাসরি নেওয়ার পাশাপাশি অনলাইনেও জমা নেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। সংসদে জেলা পরিষদ নির্বাচন বিল পাসের দুই সপ্তাহ পর নির্বাচনবিধি ও আচরণবিধি চূড়ান্তে ইসির বৈঠকে প্রার্থীদের জন্য নতুন এ সুযোগ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় বাধার অভিযোগ করেছিল বিএনপিসহ অনেক দল। সে ধরনের ঝুঁকি এড়াতেই এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ইসির কর্মকর্তারা বলেন, অনেকেই অভিযোগ করেন প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাধায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন না। তাদের কথা চিন্তা করে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে সরাসরি জমার পাশাপাশি অনলাইনেও মনোনয়নপত্র জমার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। তবে বাছাইয়ের সময় প্রার্থীকে অবশ্যই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্রের ‘হার্ড কপি’ জমা দিতে হবে। এ ছাড়া উপজেলাগুলোয় ওয়ার্ডভিত্তিক ভোট কেন্দ্র রাখা হবে। স্বল্পসংখ?্যক ভোটারের জন?্য জেলাকে ১৫টি ওয়ার্ডে ভাগ করে উপজেলাপ্রতি দুটি করে কেন্দ্র রাখা হতে পারে।
সংসদের গত অধিবেশনে পাস হওয়া ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল, ২০১৬’ অনুযায়ী এবার থেকে স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচিত হবেন। প্রতিটি জেলায় ১৫ জন সাধারণ ও ৫ জন সংরক্ষিত (মহিলা) সদস্য থাকবেন। এর আগে ১৯৮৮ সালে স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে সরকারের নিয়োগ দেওয়ার বিধান ছিল। ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনে নতুন আইন করে। কিন্তু এক দশকেও এ-সম্পর্কিত বিধিবিধান তৈরি না হওয়ায় ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে ‘অনির্বাচিত’ প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। তাদের মেয়াদপূর্তিতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচন করতে যাচ্ছে ইসি। এখনকার আইন অনুযায়ী, জেলা পরিষদ নির্বাচনে ২৫ বছর বয়সী যে কোনো ভোটার প্রার্থী হতে পারবেন, যদিও ভোট দিতে পারবেন না। ভোটাধিকার থাকবে কেবল জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের। এ হিসাবে স্থানীয় সরকারের চার ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৭ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি এ নির্বাচনে ভোট দেবেন বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।