বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সমস্যায় জর্জরিত শিল্পপুলিশ

নেই পর্যাপ্ত থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হতাশ অনেকেই

আলী আজম

সমস্যার অন্ত নেই শিল্পপুলিশে। থাকা, খাওয়া, যানবাহন, নিজস্ব জায়গাসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত পুলিশের এ বিভাগটি। বাংলাদেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় শিল্পপুলিশ খুঁড়িয়ে চললেও এর সদস্যরা দিনে ১৭-১৮ ঘণ্টা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। অথচ ছয় বছরেও পাস হয়নি ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ অ্যাক্ট’। এ অবস্থায় কাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ছেন শিল্পপুলিশ সদস্যরা। মালিক-শ্রমিক মেলবন্ধন তৈরির কারিগর শিল্পপুলিশের সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় অনেকের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। তবে শিল্পপুলিশের মহাপরিচালক (ডিআইজি) আবদুস সালাম পুলিশের সমস্যা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।

শিল্পপুলিশ বলছে, শিল্প কারখানার যে কোনো ঝামেলা তারা মোকাবিলা করলেও সেই ঘটনার তদন্ত ক্ষমতা তাদের দেওয়া হয় না। এসব সমস্যার তদন্ত করে থানা পুলিশ। ফলে তারা কাজ করতে গিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষকে চাপ দিতে পারে না। যদি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ অ্যাক্ট পাস করে শিল্প কারখানার সমস্যাজনিত মামলাগুলো শিল্পপুলিশকে তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয় তাহলে এই সেক্টরের সমস্যা অনেকাংশে কমে আসবে। এ ছাড়া থাকা-খাওয়া, যানবাহন ও নিজস্ব জায়গা না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন শিল্পপুলিশের সদস্যারা। শিল্পপুলিশ-৪ (নারায়ণগঞ্জ) সূত্রে জানা গেছে, শিল্পপুলিশ-৪-এর অধীন নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও মুন্সীগঞ্জে ২ হাজার ১৮৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২১০টি রেডি মেড গার্মেন্টস (আরএমজি) ও নন-আরএমজি ৯৭৮টি। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সোয়েটার ফ্যাক্টরি ৫৭টি, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ১৪টি, জুট মিল ২১টি, ওষুধ ফ্যাক্টরি ১৮টি রয়েছে। কাঁচপুর ও ফতুল্লায় বেসিক শিল্পনগরী রয়েছে। স্টিল ও রি-রোলিং মিলের দিক দিয়ে চট্টগ্রামের পরই নারায়ণগঞ্জের অবস্থান। আদমজী ইপিজেডে ৫১টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সূত্র বলছে, শিল্পপুলিশ-৪-এর অধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ৮৫০-এর অধিক বিদেশি নাগরিকসহ চার লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। এদের নিরাপত্তায় কাজ করছেন শিল্পপুলিশের ৬৪৮ জন সদস্য। শিল্পপুলিশ-৪-এর সদর দফতর নারায়ণগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের ভিতরে। এর অধীন রয়েছে কাঁচপুর ও নরসিংদী ইউনিট। অনুমোদন থাকলেও সিভিল স্টাফ নেই। তিন জেলার শিল্প এলাকায় গাড়িস্বল্পতার কারণে টহল ও সার্বিক দেখাশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে। আদমজী ইপিজেডের ভিতর বিজিএমসির পরিত্যক্ত জায়গায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনসাপেক্ষে অবস্থান করছে শিল্পপুলিশ-৪। তাদের নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। যানবাহন বলতে পিকআপ দুটি ও ট্রাক আটটি। শিল্পপুলিশের সাড়ে ৫০০ পুরুষ সদস্য একসঙ্গে একটি ব্যারাকে থাকছেন। পাশেই আরেকটি ব্যারাকে রয়েছেন ৬০ জন নারী সদস্য। দুটি ব্যারাকে জায়গাস্বল্পতার কারণে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। রয়েছে খাওয়া ও বিনোদন সমস্যা। সব মিলিয়ে একরকম মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। শিল্পপুলিশ-৪, নারায়ণগঞ্জের পরিচালক (এসপি) সানা শামীমুর রহমান বলেন, ২০১১ সালের ১৭ মে গঠিত হওয়া শিল্পপুলিশ-৪-এর তত্পরতার কারণে দুই ঈদসহ বড় বড় অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে শ্রমিক অবরোধের ফলে যানজট লেগে থাকছে না। গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে গার্মেন্টের সম্ভাব্য সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধান করা হচ্ছে। সদস্যদের থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, নিজস্ব জায়গাসহ অন্য সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা চলছে। শিল্পপুলিশ-১, ঢাকার পরিচালক (এসপি) মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সব মিলিয়ে যানবাহন রয়েছে ১৫টি, যা যথেষ্ট নয়। কাজের গতি বৃদ্ধিতে যানবাহন আরও বাড়ানো প্রয়োজন। শিল্প কারখানার মালিক-শ্রমিক ও পুলিশের দূরত্ব কমিয়ে এনে শিল্পবান্ধব পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্যই শিল্পপুলিশ কাজ করছে জানিয়ে শিল্পপুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, শিল্পপুলিশ-১ ও ২-এর নিজস্ব জায়গা থাকলেও অন্য দুটির নেই। যানবাহনস্বল্পতা রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ অ্যাক্ট পাস না হওয়ায় কাজ করতে গিয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, শিল্প খাত থেকে ২০১৫ সালে ৩৩ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। ভিশন-৪১-এ এ খাত থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার আয়ের চিন্তা করছে সরকার। জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে শিল্প কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরন্তর চেষ্টা করা হচ্ছে। শিল্পপুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর শিল্পপুলিশ গঠিত হয়। এর সদর দফতর ঢাকার উত্তরায়। শিল্পপুলিশের চারটি ইউনিট রয়েছে। জনবল রয়েছে ২ হাজার ৭১১ জন। এর মধ্যে শিল্পপুলিশ-১, সাভারে; শিল্পপুলিশ-২, গাজীপুরে, শিল্পপুলিশ-৩, চট্টগ্রামে এবং শিল্পপুলিশ-৪, নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত।

সর্বশেষ খবর