বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

১০ টাকার চাল কালোবাজারে জাপা এমপির বিরুদ্ধে মিছিল

প্রতিদিন ডেস্ক

সরকারের হতদরিদ্রবান্ধব ১০ টাকা কেজির চাল নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির আরও খবর পাওয়া গেছে। এ অনিয়মের বিরুদ্ধে গতকাল নীলফামারীতে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সংসদে বিরোধীদলীয় হুইপ শওকত চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঝাড়ুমিছিল করেছেন নারী-পুরুষরা। এ ছাড়া গোপালগঞ্জে কালোবাজারে এ চাল বিক্রির সময় দুজন আটক হয়েছেন। শেরপুরের নালিতাবাড়ীতেও পাচারের সময় ২ হাজার ৮০৫ কেজি চালসহ এক ট্রলিচালক আটক হয়েছেন। নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় সরকারের ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রির ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ঝাড়ুমিছিল করেছেন উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মী ও এলাকার সাধারণ নারী-পুরুষরা। বিক্ষুব্ধরা এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য বিরোধীদলীয় হুইপ জাতীয় পার্টির নীলফামারী জেলা সাধারণ সম্পাদক শওকত চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে ঝাড়ুমিছিলটি বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে কিশোরীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সংলগ্ন উপজেলা জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করা হয়। তাতে বক্তব্য দেন উপজেলা জাতীয় পার্টির দফতর সম্পাদক মো. তুহিন ইসলাম, সদর ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. ইউসুব আলী, নিতাই ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি লেবু মিয়া, উপজেলা যুবসংহতির সভাপতি সাইদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, শ্রমিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস আলী প্রমুখ। বক্তারা বলেন, নীলফামারী-৪ আসনের (সৈয়দপুর-কিশোরীগঞ্জ আংশিক) সংসদ সদস্য মো. শওকত চৌধুরী ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিতরণে দলীয় নেতা-কর্মীদের বঞ্চিত করে সংসদ সদস্যের স্থানীয় প্রতিনিধি রেজাউল ইসলাম ফিলিপের মাধ্যমে মোটা টাকার বিনিময়ে জামায়াত-বিএনপি সমর্থিত লোকজনকে ডিলার নিয়োগের পাঁয়তারা করছেন। এর আগে তিনি টিআর, কাবিখা, কাবিটাও ডিও লেটারের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। কিশোরীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, মাগুড়া দোলাপাড়া দাখিল মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্থের বিনিময়ে অবৈধ প্রক্রিয়ায় জামায়াত-বিএনপির লোকজনকে নিয়োগ প্রদান করেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শওকত চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুনেছি নেতা-কর্মীরা ঝাড়ুমিছিল করেছেন। আমি দেখি নাই। তারা কেন এসব করছেন জানি না। যেখানে ডিলার নিয়োগে ১৬০টি দরখাস্ত পড়েছে, নেওয়া হবে ২৭ জনকে; সেখানে ইউএনওর সভাপতিত্বে একটি কমিটি আছে, ওই কমিটি ডিলার নিয়োগ দেবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার জন্য আমি তাদের লটারির মাধ্যমে ডিলার নিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছি।’ গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ১০ টাকা কেজি দরের চাল কালোবাজারে বিক্রির সময় ৫০ বস্তা চাল জব্দ করেছে মুকসুদপুর থানা পুলিশ। এ সময় দুজনকে তারা আটক করে। মুকসুদপুর উপজেলার টেকেরহাট নৌবন্দর থেকে একটি পিকআপসহ এ চাল জব্দ করা হয়। গতকাল উপজেলা প্রশাসন ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।

ঘটনার ব্যাপারে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে টেকেরহাটে একটি গুদামে চালের বস্তাগুলো নামানোর সময় সিন্দয়াঘাট পুলিশ চালসহ দুজনকে আটক করে। খবর পেয়ে মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নইম মো. মারুফ খান ঘটনাস্থলে গিয়ে সংশ্লিষ্ট গুদামটি সিলগালা করার নির্দেশ দেন। তবে রহস্যজনক কারণে সিলগালার কাজ রাতে না করে গতকাল সকালে করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতের আঁধারে ওই গুদাম থেকে কয়েক শ’ বস্তা চাল সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি জানান, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় মঙ্গলবার রাতে ১০ টাকা কেজি দরের ২ হাজার ৮০৫ কেজি চালসহ ট্রলিচালককে আটক করেছে পুলিশ। চালকের নাম ওয়াহাব আলী (৩০)। তিনি উপজেলার উত্তর নাকশি গ্রামের হাছেন আলীর ছেলে। পুলিশ ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা দরে বিক্রি করা চাল অবৈধভাবে উত্তর নাকশি গ্রামের লিটনচন্দ্র দাস (৩২), মো. শহিদুল্লাহ (২৮), পিপুলেশ্বর গ্রামের আবদুল বারেক (৪৫) কেনেন। পরে তারা উত্তর নাকশি গ্রামের মতিউর রহমানের বাড়ি এসব চাল মজুদ করেন। এরপর মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ৩৩ বস্তা চাল (২ হাজার ৮০৫ কেজি) একটি ট্রলিতে করে শেরপুর জেলা শহরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাত সাড়ে ৯টার দিকে নালিতাবাড়ী-শেরপুর সড়কে গাগলাজানি এলাকায় চালসহ ট্রলি ও চালককে আটক করে। এ সময় ট্রলিতে থাকা শহিদুল্লাহ পালিয়ে যান। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে চালক ওয়াহাব আলী মতিউর রহমানের বাড়ি থেকে চাল বিক্রির উদ্দেশ্যে শেরপুর সদরে নিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানান। রাতে চালসহ ট্রলিচালককে থানায় নিয়ে আসা হয়। গতকাল পুলিশ বাদী হয়ে চালকসহ চারজনের বিরুদ্ধে বিশেষ আইনে মামলা করেছে। দুপুরে ওয়াহাবকে আদালতে পাঠানো হয়।

সর্বশেষ খবর