বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আতঙ্ক

ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতার এত দাপট!

কুমিল্লা প্রতিনিধি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সদ্য সাবেক শিক্ষার্থী, বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াস হোসেন সবুজের চোটপাটে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী সবাই অস্থির। ছাত্রলীগের আজীবন বহিষ্কৃত এই নেতার বিরুদ্ধে শিক্ষকের ওপর হামলা, ছাত্রী লাঞ্ছনা, প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। তার কারণে ১ আগস্ট ছাত্রলীগ নেতা খালিদ সাইফুল্লাহ নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ইলিয়াস। সূত্র জানায়, ২০০৬-০৭ প্রথম শিক্ষাবর্ষে স্নাতকে (সম্মান) ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হন ইলিয়াস। এরপর তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে খেলোয়াড় কোটায় লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি করে। অভিযোগ রয়েছে, সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো খেলোয়াড় কোটাই ছিল না। ভর্তির পর তিনি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইলিয়াস ভোল পাল্টিয়ে ছাত্রলীগের নেতা হয়ে যান। শিক্ষার্থীরা জানান, ২০০৯ সালে মার্কেটিং বিভাগের এক শিক্ষকের বোনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে তাকে লাঞ্ছিত করেন ইলিয়াস। ২০১০ সালের অক্টোবরে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে নম্বর কম দেওয়ার অভিযোগ এনে নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান শামীমা নাসরিনের কক্ষে গিয়ে তাকে হুমকি দেন। একই অভিযোগ এনে ২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারি নিজের বিভাগের শিক্ষক মো. মশিউর রহমানকে লাঞ্ছিত এবং তার বাসার দরজা-জানালা ভাঙচুর করেন ইলিয়াস। এরপর ৩ ফেব্রুয়ারি তাকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকার একটি পিকনিক স্পট থেকে একটি বিদেশি রিভলবারসহ তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ওইদিনই তাকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যপদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। তিন মাস পর ইলিয়াস জামিনে মুক্তি পান। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহী বলেন, ‘ইলিয়াস ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। আমরা তার গ্রেফতার দাবি করছি।’ খালিদ হত্যার দায় অস্বীকার করে ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ১ আগস্ট তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে মোমবাতি প্রজ্বালন করতে গিয়েছিলেন। তার প্রতিপক্ষ আলিফ গ্রুপের বিপ্লব গুলি করেন। এতে তার গ্রুপের খালিদ মারা যান। বিপ্লবকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে এ বিষয়ে নাজমুল হাসান আলিফ বলেন, ‘পুরো বিষয়টিতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন ইলিয়াস। তিনি তো বহিষ্কৃত নেতা। মোমবাতি প্রজ্বালনের অনুষ্ঠানে তার থাকার প্রশ্নই ওঠে না। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরই তার নেতৃত্বে হামলা হয়েছিল। যদি তার কর্মীই হয়ে থাকেন তাহলে গুলিবিদ্ধ খালিদকে ফেলে কেন পালালেন ইলিয়াস? বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে, ঘটনার দিন ইলিয়াসের হল থেকে বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও ইলিয়াসের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, সাধারণ ছাত্র-শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ ইলিয়াস তার কাছের বান্ধবীকে দিয়ে ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ইভ টিজিংয়ের মিথ্যা মামলা দায়ের করান। খালিদ সাইফুল্লাহর নিহতের ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কুমিল্লা ডিবি পুলিশের এসআই শাহ কামাল আকন্দ বলেন, ওইদিন ছাত্রলীগ সভাপতি আলিফ ও ইলিয়াস গ্রুপ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে খালিদ নিহত হন। কে দোষী তা বের করতে তদন্ত চলছে। তবে একাধিক গণমাধ্যমে তার বরাতে এ ঘটনায় ইলিয়াসের জড়িত থাকার কথা প্রকাশ পেলেও তিনি তা এড়িয়ে যান।

সর্বশেষ খবর