শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

স্মার্টকার্ড নিয়ে তালগোল

গোলাম রাব্বানী

স্মার্টকার্ড নিয়ে তালগোল

স্মার্টকার্ড বিতরণে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে পাওয়া সমস্যা না মিটিয়েই ঢাকা মহানগরীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আরও সাত ওয়ার্ডে শুরু হচ্ছে বিতরণ। এতে নাগরিকদের ভোগান্তি যেমন বাড়ছে, তেমন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা। তারা সমস্যা সমাধানে সাধারণ নাগরিকদের কোনো পরামর্শও দিতে পারছেন না। সব মিলে স্মার্টকার্ড নিয়ে নির্বাচন কমিশন তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতা ও দুর্বল প্রচার নিয়ে মাঠপর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তারা বলছেন, প্রচারণাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য কোনো বরাদ্দ এখনো ছাড় হয়নি। নিজেদের উদ্যোগে প্রচার চালাতে হচ্ছে। যাদের কার্ড সংশোধন করতে হবে, যারা কেন্দ্রে এসেও কার্ড পাননি এবং যারা কেন্দ্রে আসেননি— এই তিন ধরনের বিপুলসংখ্যক ভোটারকে কবে, কীভাবে কার্ড দেওয়া যাবে সে উত্তরও তারা নাগরিকদের দিতে পারছেন না।

ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৫ অক্টোবর ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে। আর আজ শুরু হচ্ছে ঢাকা দক্ষিণের লালবাগ থানার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে লালবাগের ২৮ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড, কোতোয়ালি থানার ৩৩ ও ৩২ এবং ঢাকা উত্তরের গুলশান থানার ২০ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিতরণ করা হবে স্মার্টকার্ড। ২৫ অক্টোবর শুরু হয়ে এ কাজ চলবে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়ার পর ৩ অক্টোবর সাধারণ ভোটারদের মধ্যে উন্নতমানের এই জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা মহানগরীতে চারটি ওয়ার্ডে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হয়, যা শেষ হয়েছে। বিতরণ কেন্দ্রে নাগরিকদের অনুপস্থিতিসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে অর্ধেক কার্ডও বিতরণ করতে পারেনি ইসি। ইসির কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা উত্তরে উত্তরার ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৩ এবং ঢাকা দক্ষিণে ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডে গড়ে ৪২ শতাংশ কার্ড বিতরণ হয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘খুব তাড়াহুড়ার মধ্যে এ বিতরণ কাজ চলছে। এ কারণে শুরুতে কিছুটা ভুলভ্রান্তি হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে বরাদ্দ ছাড় পেতে বিলম্ব হচ্ছে। আশা করি সমস্যাগুলো শিগগিরই কেটে যাবে।’ ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, নানা জটিলতার মধ্যে মহানগরীতে তিনটি ওয়ার্ডের লক্ষাধিক ভোটারের মধ্যে প্রায় অর্ধলক্ষ স্মার্টকার্ড বিতরণ হয়েছে। পরীক্ষামূলক এ কার্যক্রমে যত সমস্যা চিহ্নিত হচ্ছে, তা শনাক্ত করে পরবর্তী কাজে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। তিনি জানান, কার্ড বিতরণে ‘পদ্ধতিগত’ কিছু সমস্যা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়সহ সব জায়গায় প্রচার বাড়ানো হয়েছে।

এখন তিন সমস্যা : মূলত তিনটি সমস্যা নিয়ে মাঠ কর্মকর্তারা এখনো ইসির নির্দেশনা না পাওয়ায় নাগরিকদের কোনো তথ্য জানাতে পারছেন না। তারা আশা করছেন, অক্টোবরে পরীক্ষামূলক কাজ শেষে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত আসতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, যারা স্মার্টকার্ড নিচ্ছেন, তারা তথ্য সংশোধন করতে গেলে শিগগিরই ডুপ্লিকেট স্মার্টকার্ড পাবেন না। কবে নাগাদ পাবেন তাও বলা যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন অফিসে কেউ সংশোধনের আবেদন করলে তথ্য সংশোধন হবে ডাটাবেজে। প্রয়োজনে ল্যামিনেটেড সংশোধিত কার্ড নিতে হতে পারে। ২০১৪ সালে যারা ভোটার হয়েছেন তারা সরাসরি স্মার্টকার্ড পাচ্ছেন এখন। তাদের হাতে ১৩ ডিজিটের কিংবা ১৭ ডিজিটের ল্যামিনেটেড এনআইডি নেই। সে ক্ষেত্রে ১০ ডিজিটের স্মার্টকার্ড সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করলে তা যাচাইয়ে কারিগরি সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। একজন নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, ‘গড়ে ৩০-৪০ শতাংশ লোক অনুপস্থিত। এদের কার্ড উপজেলা নির্বাচন অফিসে নিয়ে ম্যানেজ করা মুশকিল হবে। তাদের কবে থানা অফিসে আসতে বলব সে নির্দেশনাও পাইনি।’ এসব সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন ইসির কর্মকর্তরা। তারা বলেছেন, উত্তরায় সাড়ে ৬৩ হাজারের বেশি ভোটারের মধ্যে ৩৩ হাজারেরও বেশি নাগরিক স্মার্টকার্ড পেয়েছেন। ৪ হাজারের বেশি নাগরিক নানা অসংগতির কারণে কার্ড নিতে পারেননি। বাকিরা আসেননি বিতরণ কেন্দ্রে। রমনা থানার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ২৫ হাজার ৫১০ ভোটারের মধ্যে ১০ হাজার ৭০১ জন কার্ড নিয়েছেন। নিতে পারেননি ১ হাজার ২৩৩ জন। বাকিরা অনুপস্থিত ছিলেন। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডেও ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ নাগরিক বিতরণ কেন্দ্রে যাননি। নির্বাচন কর্মকর্তারা বলেন, যারা বিতরণ কেন্দ্রে যাননি বা যাদের কার্ড সংশোধন করতে হবে, তাদের বিষয়ে ইসির নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন তারা। বিতরণ-সংশ্লিষ্টরা জানান, ভাসমান ও স্থানান্তরিত ভোটারের কারণে বিতরণ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম। আর পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়ায় প্রচার হয়েছে কম। সব মিলিয়ে সমন্বয়হীনতাও ছিল।

সর্বশেষ খবর