শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

কালের সাক্ষী কমলা রানীর দীঘি

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার

কালের সাক্ষী কমলা রানীর দীঘি

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে রাজা রাজন্যের বসবাস ছিল বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। রাজ পরিবারের মধ্যে শেষ বংশধর হিসেবে রাজা সুবিদ নারায়ণের কীর্তি এখনো কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। রাজা সুবিদ নারায়ণ রেখে জাননি রাজ প্রাসাদ অথবা রাজবাড়ি। তবে রেখে গেছেন ঐতিহাসিক এক দীঘি। কেউ বলেন সাগর দীঘি আবার কেউ বা বলেন কমলারানীর দীঘি। সুবিদ নারায়ণের স্ত্রী কমলারানীর নামেই দীঘিটি সমধিক প্রচারিত আছে, প্রজা হিতৈষী রাজা সুবিদ নারায়ণ শুষ্ক মৌসুমে জনসাধারণের প্রাণী ও জলের সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি দীঘি নির্মাণের পরিকল্পনা নেন। ১৫০ বিঘা জমি নিয়ে বিস্তৃত এই দীঘি খনন করা হয়। তৈরি হয় শান বাঁধানো ঘাট। জনশ্রুতি আছে দীঘিতে পানি উঠছিল না রহস্যজনক ভাবে। জনশ্রুতি মতে, ঘুমের ঘোরে একদিন রাজা স্বপ্নাদিষ্ট হলেন যে, তার প্রিয়তমা স্ত্রী কমলারানী যদি স্নান উপলক্ষে দীঘিতে নেমে পূজা করেন তাহলে পানিতে দীঘিটি টইটম্বুর হয়ে উঠবে। রাজা তার স্বপ্ন স্ত্রীকে অবহিত করলে কমলারানী পূজা দিতে আগ্রহী হয়ে উঠলেন। রাজার আদেশে পূজার ব্যবস্থা হলো। শান বাঁধানো ঘাট দিয়ে রানী দীঘিতে নেমে মন্ত্রপাঠ শেষে দীঘির বিরাণ জমিতে সাষ্টাঙ্গের প্রণাম জানানোর পরই মাটি ভেদ করে জলের উদগিরণ শুরু হয়। দীঘিতে কোমর সমান পানি হলে রানী সেই জলে স্নান করেন। এরপর মধ্য দীঘি থেকে ঘাটে আসার আগেই অথৈ জলে কমলারানী ডুবে যান। এই বিয়োগান্তক প্রেক্ষাপটে এলাকায় শোকের পাশাপাশি বহুবিধ কল্পকাহিনী ডানা মেলে। অন্য দিকে রাজা সুবিদ নারায়ণ স্ত্রী শোকে নির্বাক হয়ে যান। ওই দিন রাতেই কমলারানী স্বপ্নে রাজার সম্মুখে হাজির হয়ে বললেন, তোমার ঘরে ফেরা আমার জন্য অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। আমার দুগ্ধ পোষ্য সন্তানকে প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলায় দীঘির পশ্চিম পাশে রেখে দিও। আঁধার নামলেই আমি এসে তাকে দুধ পান করিয়ে চলে যাব। খবরদার—আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করবে না। আমি হয়তো এক সময় তোমার কাছে ফিরে আসব। যদি স্পর্শ কর তাহলে চিরদিনের জন্য আমার আশা ছেড়ে দাও। রানীর কথা অনুযায়ী রাতের আঁধারে শিশু পুত্রকে দীঘির কিনারে উঠে রানী দুধ পান করান। এদিকে স্ত্রী বিরহে মত্ত রাজা আড়ালে বসে শিশুকে দুগ্ধ পানরত অবস্থায় রানীকে ঝাপটে ধরলেন। রানী তখন দীঘিতে ঝাঁপ দিয়ে ডুবে যান। রাজার হাতে শুধু রয়েগেল রানীর এক গুচ্ছ কেশ। আর কোনো দিন রানী শিশু পুত্রকে দুগ্ধ দানের জন্য ডাঙ্গায় উঠেননি। এটি ডালপালা মেলে লোকালয়ে এখনো বর্তে আছে আপন মহিমা নিয়ে।

রাজা নেই তার সঙ্গে রাজ্যও নেই। বিলীন হয়ে গেছে রাজ ভিটা। কিন্তু এখনো সেই দীঘিটি রয়েছে। দীঘির জলে আগে যেমন ঢেউ ছিল এখনো তেমনি আছে। তবে বদলে গেছে অনেক কিছু। বিশাল এ দীঘিটি রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই। রাজার দীঘি চলে গেছে ব্যক্তি মালিকানায়।

সর্বশেষ খবর