শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ম্যানেজ করে ফের ফুটপাথে হকাররা

পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি বৈঠক ডেকেছেন মেয়র

নিজস্ব প্রতিবেদক

ম্যানেজ করে ফের ফুটপাথে হকাররা

গুলিস্তানে উচ্ছেদের প্রতিবাদে গতকাল বিক্ষোভ করে হকাররা —জয়ীতা রায়

গুলিস্তানে ঢাকা ট্রেড সেন্টার মার্কেটের আশপাশে উচ্ছেদের পর আবারও ফুটপাথে ব্যবসা নিয়ে বসেছেন হকাররা। জানতে চাইলে কয়েকজন হকার জানান, তারা নেতাদের ম্যানেজ করেই ব্যবসা নিয়ে বসেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, সরকারি ছুটির দিন থাকায় বসতে কোনো সমস্যা হয়নি। অথচ সেখানে বৃহস্পতিবার ছাড়া আগেও একাধিকবার অভিযান চালিয়ে মুক্ত করার চেষ্টা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে আজ কাউন্সিলরদের নিয়ে এক জরুরি সভা ডেকেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। গতকাল সকাল থেকে গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকার ফুটপাথগুলো পরিপূর্ণ হয়ে যায় হকারদের দোকানে। তবে তাদের ফুটপাথ দখলের পেছনে প্রভাবশালী বিভিন্ন মহলের মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু রাজনৈতিক কোনো ব্যক্তি ফুটপাথের নিয়ন্ত্রণ বা চাঁদাবাজিতে নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। তবে এতে পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা থাকতে পারেন বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা।

ইউসুফ নামের এক ফুটপাথ ব্যবসায়ী বলেন, ‘হঠাৎ উচ্ছেদ শুরু হলে আমর দোকানপাট নিয়ে চলে যাই। গতকাল সব দিক ম্যানেজ করে সবাই বসেছে।’ ইসমাইল হোসেন নামে আরেকজন জানান, সব দিকে তো উচ্ছেদ অভিযান চালায়নি। আর ছুটির দিনে লোকজন দোকান নিয়ে বসার একটু সুযোগ পেয়েছে।

জানা যায়, শুধু ট্রেড সেন্টার নয়; বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বায়তুল মোকাররম ও গুলিস্তান স্পোর্টস মার্কেটের চারপাশ এবং এর আশপাশের ফুটপাথ দখল করে প্রায় দুই হাজার হকার দোকান  দিয়ে বসেন। আর তাদের কাছ থেকে দৈনিক ২০০-৩০০ টাকা হারে চাঁদা তোলেন প্রভাবশালী মহলের কিছু লোক। এর ভাগ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, হকার্স লীগ ও পুলিশ কর্মকর্তারা পান বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। জানা গেছে, উচ্ছেদ অভিযানকালে বৃহস্পতিবার গুলিস্তানে হকারদের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কর্মচারীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পাতাল মার্কেটের সামনে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় এর সূত্রপাত হয়। পরে হকাররা উচ্ছেদের বিরুদ্ধে অস্ত্রের মহড়াও দেয়। অভিযানের শুরুতেই হকারদের বাধার মুখে পড়েন ডিএসসিসি কর্মীরা। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় বেশ কয়েকজনকে গুলি করতে দেখা গেছে। গুলিস্তান ট্রেড মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, যে দলই ক্ষমতায় আসুক, সেই দলের ছত্রচ্ছায়ায় হকাররা থাকে। তবে কোনো ঝামেলা হলে তাদের কেউ খুঁজে পায় না। আর তাদের কারণে প্রতিনিয়ত মার্কেটে ঠিকমতো ব্যবসা করা যায় না। এসব হকার উচ্ছেদের জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সকালে অভিযান চালানো হলেও বিকালে তারা আবার দোকান দিয়ে বসেন। জানা গেছে, ৯ ও ১০ জুন ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা করা নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় হকার ও ট্রেড সেন্টারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এ সময় পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনারসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। ঢাকা ট্রেড সেন্টার (দক্ষিণ) দোকান মালিক সমিতির সদস্য মোশাররফ হোসেন জানান, রমজান মাসে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু পরে স্থানীয় কাউন্সিলর ঈদের কথা বলে তাদের ফুটপাথে আবারও বসান। সেই থেকে তারা সেখানেই আছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, এখানকার ফুটপাথ নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি ভাগ আছে। প্রতিটি ভাগের নেতা আলাদা। আর এদের মদদ দেওয়ার পেছনে কাউন্সিলরসহ স্থানীয় যুবলীগের নেতা আজাদ, বাবুসহ আরও অনেকে জড়িত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীরা জানান, অবৈধভাবে খাম্বা থেকে বিদ্যুতের লাইন সংগ্রহ, পুলিশ ও প্রশাসন ম্যানেজ করতে রাজনৈতিক বিভিন্ন নেতা তাদের হয়ে কাজ করেন। জানা গেছে, ফুটপাথ ও রাস্তায় ভাসমান দোকান এবং স্থাপনা স্থায়ীভাবে উচ্ছেদের লক্ষ্যে এগুলোয় ব্যবহূত অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করতে জুনে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে (ডিপিডিসি) অনুরোধ জানায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মীর রেজাউল আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ডিপিডিসিকে জানানো হয়, রাস্তা ও ফুটপাথের হকাররা আশপাশের বিদ্যুতের উৎস থেকে অবৈধভাবে বিদ্যুতে সংযোগ নিয়ে সন্ধ্যার পর ব্যবসা করে আসছেন। তবে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ডিপিডিসি। ডিএমপি ও ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, উচ্ছেদের পর কয়েক দিনের মধ্যেই হকাররা আবারও ফুটপাথ ও রাস্তার একাংশ দখল করে নেয়। বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ব্যবহার করে তারা ঠিকই ব্যবসা চালিয়ে যায়। পুলিশের মতিঝিল বিভাগের এডিসি মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, ‘আমার জানা মতে যে অংশে উচ্ছেদ হয়েছে সেখানে হকাররা বসেনি।’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে শনিবার (আজ) কাউন্সিলরদের নিয়ে এক জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। সেখানেই হকারদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর