সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ শুরু ডিসেম্বরে

ব্যয় হবে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা

নিজামুল হক বিপুল

কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ শুরু ডিসেম্বরে

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর মোহনায় কাফকো-পতেঙ্গা পয়েন্টে দেশের প্রথম টানেল নির্মিত হতে যাচ্ছে। বৃহৎ এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে আসছে ডিসেম্বরে। চীনের অর্থায়নে কর্ণফুলীর তলদেশে এ টানেল নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা দেবে চীন সরকার। বাকি অর্থ সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। এ প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দেবে চায়না এক্সিম ব্যাংক। টানেল নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। এর পরপরই সেতু বিভাগ ১৯ অক্টোবর চুক্তি স্বাক্ষর করেছে প্রকল্প নির্মাণে সুপারভিশন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

মহাজোট সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই অংশ হিসেবে ২০১৩ সালে টানেলটি নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই  করে সিসিসিসি ও হংকংয়ের ওভিই অরূপ অ্যান্ড পার্টনারস। সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন অনুযায়ী কর্ণফুলীর মোহনায় কাফকো-পতেঙ্গা পয়েন্টে টানেলটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। এটি নদীর পশ্চিম পাশে সি-বিচের নেভাল গেট পয়েন্ট থেকে নদীর ১৫০ ফুট নিচ দিয়ে অন্য পাশে গিয়ে উঠবে। দক্ষিণ পার থেকে সংযোগ সড়ক দিয়ে বাঁশখালী সড়কে গিয়ে মিলবে এটি। প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের টানেলটির পূর্ব প্রান্তে প্রায় ৫ কিলোমিটার ও পশ্চিম প্রান্তে ৭৪০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর থেকেই টানেলটি নির্মাণে আগ্রহ দেখায় সিসিসিসি। জিটুজি ভিত্তিতে এতে অর্থায়নে আগ্রহ দেখায় চীন সরকার। ২০১৪ সালের ৯ জুন চীন সরকারের সঙ্গে এবং ২২ ডিসেম্বর সিসিসিসির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যিক প্রস্তাব দেয় সিসিসিসি। একই সঙ্গে ঋণে চীনের এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থায়নের প্রস্তাব দেয়। টানেল নির্মাণে সিসিসিসি ব্যয় প্রাক্কলন করেছে ৭০ কোটি ৫৯ লাখ ডলার বা ৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। এ অর্থ ঋণ হিসেবে দেবে চায়না এক্সিম ব্যাংক। ২০১৫ সালের ৩০ জুন সিসিসিসির সঙ্গে কমার্শিয়াল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর আগে গত বছর ২৩ জুন প্রকল্পটি নির্মাণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়। সর্বশেষ ১৪ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফরের সময় টানেল নির্মাণের অর্থায়ন বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর আগে প্রকল্পটির ডিপিপি গত বছর ২৪ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদনের পর টানেলের বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন ও প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়। ইতিমধ্যে চীনের অর্থায়ন চূড়ান্ত হওয়ায় আগামী ডিসেম্বরেই প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, টানেল নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বাবদ ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে বলে মনে করছে সেতু কর্তৃপক্ষ। ফলে সব মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়াবে ৮ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা জোগান দেওয়ার কথা রয়েছে চীন সরকারের। বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে। ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। টানেলটি হবে বাংলাদেশে এশিয়ান হাইওয়ের রুটের অংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রথম এই টানেল নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হবে ২ হাজার ৪৯০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। টানেল নির্মাণে দুই দফায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। টানেল নির্মাণে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে উন্নয়ন প্রকল্প ছক চূড়ান্ত করার সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৬০০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পরে দুই দফায় ব্যয় বাড়ানো হয় প্রায় ২ হাজার ৮৪৬ কোটি ৬৩ টাকা । প্রথম দফায় ব্যয় বৃদ্ধি করা হয় ২ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। প্রকল্প সূত্র জানা গেছে, সর্বশেষ ৬৪১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে এ প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে সর্বমোট ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

সর্বশেষ খবর