সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

কুণ্ডুবাড়ীর মেলা মাদারীপুরে

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

কুণ্ডুবাড়ীর মেলা  মাদারীপুরে

মাদারীপুরের কালকিনি পৌর এলাকার দক্ষিণ গোপালপুর গ্রামের কুণ্ডুবাড়ীতে প্রতি বছরের মতো এবারও কালীপূজা ও দীপাবলি উপলক্ষে মেলা বসেছে। কয়েক শ বছর ধরে দক্ষিণবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী এ মেলাটি ‘কুণ্ডুবাড়ীর মেলা’ নামে পরিচিত। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাঠের আসবাবপত্রের সমারোহ ঘটে এ মেলায়। এতে মাদারীপুর ও আশপাশের জেলা থেকে হাজার হাজার লোকের ঢল নামে। মূল মেলা তিন দিন হলেও চলে সপ্তাহব্যাপী। মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা বাঁশ, বেত ও কাঠের আসবাবপত্র; খেলনা, প্রসাধনীসহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে এসেছেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা এসেছেন পণ্যসামগ্রী কিনতে। শুক্রবার শুরু হওয়া এ মেলা চলবে সপ্তাহব্যাপী। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি উপজেলার গোপালপুরের কুণ্ডুবাড়ীতে আঠারো শতকের শেষের দিকে দীপাবলি ও কালীপূজা উপলক্ষে দীননাথ কুণ্ডু ও মহেশ কুণ্ডু এ মেলার প্রবর্তন করেন। তাই কুণ্ডুদের বংশের নামানুসারে মেলার নাম হয় কুণ্ডুবাড়ীর মেলা। প্রথম দিকে বাদাম, বুট, খেলনা নিয়ে অল্প কয়েকজন ব্যবসায়ী বসতেন। প্রতি বছর ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এ সময় দীপাবলির পরদিন এ অঞ্চলের বিভিন্ন কালী প্রতিমা জড় করা হতো। এর মধ্যে যাদের প্রতিমা সুন্দর হতো তাদের পুরস্কার প্রদান করা হতো। তৎকালে চিত্তবিনোদনের জন্য পুতুলনাচ, জারিগান, পালাগান, নৌকাবাইচের আয়োজন করা হতো। কালের বিবর্তনে পালাগান, জারিগান, নৌকাবাইচ বন্ধ হয়ে গেছে। বংশপরম্পরায় প্রতি বছর এ মেলার আয়োজন করা হয়। বর্তমানে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মেলা বসে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে দোকানিরা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন। কাঠের বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্রের জন্য এ মেলা বিখ্যাত। মেলায় মাদারীপুর ছাড়াও বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, যশোর, নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা তাদের মাটির, বাঁশের ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন মাল ট্রাকযোগে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। এবারের মেলায় শিশুদের খেলনা বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। মেলায় আগত দর্শনার্থী মামুন, জয়া, সাব্বির, নিশিসহ কয়েকজন জানান, ‘আমরা প্রতি বছরই মেলায় আসি। অনেক ভালো লাগে। বাচ্চাদের জন্য খেলনা কিনেছি। ঘুরে ঘুরে দেখছি।’ যশোর থেকে আসা খেলনা ব্যবসায়ী আসাদ উল্যাহ জানান, ‘আমি পাঁচ বছর ধরে এখানে খেলনা বিক্রি করতে আসি। প্রচুর লাভ হয়। কোনো ঝামেলাও নেই।’ প্রতি বছরের তুলনায় এবার কাঠের ফার্নিচারের চাহিদা কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে দু-এক দিন পরে মেলা জমে উঠলে বিক্রি বাড়বে। বগুড়া থেকে আসা সবুজ নামে এক দোকানি বলেন, ‘আমরা ১২ বছর ধরে এ মেলায় আসবাবপত্র বিক্রি করছি।’ মেলা কমিটির সদস্য স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষরা মাত্র চার একর জমির ওপর এ মেলার আয়োজন করতেন। ধীরে ধীরে এ মেলা বিস্তৃত হয়ে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি বছর মোলায় কমপক্ষে ৭-৮ কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রি হয়।’

সর্বশেষ খবর