মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

‘বন্দুকযুদ্ধে’ হত্যা মামলার আসামি নিহত

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আলোচিত হোমিও চিকিৎসক ডা. সানাউর রহমান সানা হত্যা হামলার অন্যতম আসামি টুলু মোল্লা (৩০) নিহত হয়েছেন। তিনি শহরতলির খাজানগর এলাকার বাসিন্দা। পুলিশের দাবি, ‘টুলু জেএমবির আঞ্চলিক কমান্ডার। রবিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে শহরতলির কবুরহাটে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।’

কুষ্টিয়া ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাব্বিরুল ইসলাম জানান, রাতে শহরতলির কবুরহাটের সোবাহান শেখের ধানের চাতালের পেছনে জেএমবি সদস্যরা গোপন বৈঠক করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযানে যায় পুলিশ। এসময় জেএমবি সদস্যরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়লে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে জেএমবির আঞ্চলিক কমান্ডার টুলু মোল্লাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটা বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, তিনটি রামদা ও গুলির খোসা উদ্ধার করা করেছে। বন্দুকযুদ্ধে এসআই হালিম, এএসআই রশিদ ও আনোয়ারসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।  টুলু মোল্লা কুষ্টিয়ার আলোচিত হোমিও চিকিৎসক ডা. সানাউর হত্যা হামলার অন্যতম আসামি। গত ২০ মে শহরের মজমপুর থেকে দাতব্য চিকিৎসালয়ে যাওয়ার পথে বালিয়াশিশা মাঠে খুন হন ডা. সানাউর।

পুলিশের ডিআইজির প্রেস ব্রিফিং : এদিকে ডা. সানাউর রহমান সানা হত্যা মামলায় জড়িত চার জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্য দিয়ে প্রায় ছয় মাস পর বহুল আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হলো। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন্সের হলরুমে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এম এম মনিরুজ্জামান নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। গত ২০ মে সানাউর সদর উপজেলার বটতৈল এলাকায় তার বাগানবাড়িতে সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে যাওয়ার পথে শিশিরমাঠ নামক স্থানে জঙ্গি হামলায় ঘটনাস্থলেই খুন হন। এ সময় গুরুতর জখম হন তার বন্ধু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুজ্জামান। সে সময় আইএসের পক্ষ থেকে এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেওয়া হয়। ডিআইজি জানান, সানা হত্যাকাণ্ডে মোট আটজন অংশ নেন। এর মধ্যে আজিজুল, সাইফুল, জয়নাল এবং সাইজুদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজিজুল ও সাইজুদ্দিন ইতিমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত টুলু মোল্লা রবিবার দিবাগত রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। ডিআইজি জানান, এদিকে সানা হত্যায় অংশ নেওয়া পলাতক তিন জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ। আটকদের বরাত দিয়ে ডিআইজি আরও জানান, টুলু মোল্লা পাবনায় একটি রাইচ মিলে কাজ করতেন। এক পর্যায়ে জেএমবির অপারেশন বিভাগের সদস্য আবু মুসা, ওরফে রবিন ওরফে তালহার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরে আবু মুসা কুষ্টিয়া শহরের খাজানগর এলাকার একটি মসজিদে আসে। সে সময় টুলু মোল্লার মাধ্যমে জয়নাল, সাইজুদ্দিন, আজিজুল ও সাইফুলের পরিচয় হয় আবু মুসার। এর পরে আবু মুসা মাসে দুএকবার করে ওই মসজিদে আসতেন। তিনি প্রথমে কোরআন, হাদিসের আলোকে কথাবার্তা বলতেন। পরে তিনি জিহাদ, হিজরত, আনসার ও মুজাহিদ সম্পর্কে বয়ান করতেন। সে সময় তিনি সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানের মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও জিহাদের নানা কৌশল সংক্রান্ত ভিডিওচিত্র দেখাতেন। এভাবে তিনি জয়নাল, সাইজুদ্দিন, আজিজুল ও সাইফুলদের জিহাদে উদ্বুদ্ধ করেন। সানা হত্যার এক সপ্তাহ আগে জেএমবির অপারেশন টিমের সদস্য আবু মুসা ও বিকাশ ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় আসেন। তারা জয়নাল, সাইজুদ্দিন, আজিজুল, সাইফুল ও টুলু মোল্লার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ডা. সানাউর রহমান সানাকে হত্যা পরিকল্পনার কথা জানান। পর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আবু মুসা তার সহযোগী বিকাশ, শফিউল ইসলাম ডন ও কবির হাসান ওরফে বাইক হাসানকে সঙ্গে নিয়ে ১৯ মে রাতে খাজানগরে টুলু মোল্লার বাড়ি যান। তারা সেখানেই রাতযাপন করেন। পরদিন ফজরের নামাজের পর আবু মুসা সহযোগী বিকাশ, সফিউল ইসলাম ডন, কবির হাসান ও টুলু মোল্লা অপারেশনের উদ্দেশ্যে বের হন। পরে  আবু মুসার পরামর্শ অনুযায়ী একটি মোটরসাইকেলে কবির হাসান, বিকাশ ও সফিউল ইসলাম ডন ঘটনাস্থলে অবস্থান নেন। ডা. সানাউর রহমান সানা ও তার বন্ধু কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক সাইফুজ্জামান মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র শফিউল ইসলাম ডন ডা. সানার মাথায় কাঠের বাটাম দিয়ে আঘাত করে। এতে তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে গেলে বিকাশ তাদের চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। এতে সানা ঘটনাস্থলেই নিহত হন। গুরুতর আহত হন শিক্ষক সাইফুজ্জামান। ডিআইজি জানান, বিকাশ রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজন রেস্তোরাঁয় অপারেশন চালাতে গিয়ে নিহত হন। আর শফিউল ইসলাম ডন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হামলা চালাতে গিয়ে আটকের পর ক্রসফায়ারে মারা যান। এ ছাড়া কবির হাসান রাজশাহীতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। প্রেস ব্রিফিংয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদিনসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর