বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাজশাহী মেডিকেলেও রডের বদলে বাঁশ!

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী মেডিকেলেও রডের বদলে বাঁশ!

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নতুন চারতলা একটি ভবনের তৃতীয় তলায় লিফটের পাশ থেকে দুটি বাঁশের বাতা বেরিয়ে এসেছে। রডের পরিবর্তে সেখানে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছিল। সোমবার রাতে টাইলসগুলো সরে গেলে বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।

এরপর বাঁশের ওই বাতার ওপর তড়িঘড়ি করে পত্রিকা বিছিয়ে প্লাস্টার করে দেওয়া হয়। প্লাস্টারের পর জায়গাটি কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। তবে লিফটে রোগী উঠানোর সময় ট্রলির চাকায় পলেস্তারা উঠে গিয়ে আবারও বাঁশ বেরিয়ে আসে। এ সময় বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালে শুরু হয় তোলপাড়। এ ঘটনায় রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ২০০৮ সালে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ করেছে গণপূর্ত অধিদফতর। ২০১২ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক ভবনটির উদ্বোধন করেন। এরই মধ্যে ভবনটির বিভিন্ন স্থানের পলেস্তারা খসে পড়েছে। সোমবার লিফটের পাশ থেকে বেরিয়ে এলো বাঁশের বাতা। গতকাল সকালে সরেজমিন দেখা যায়, বেরিয়ে পড়া বাঁশের বাতাগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন তৃতীয় তলার লিফট ও মূল ভবনের মেঝের মধ্যে প্রায় পাঁচ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা অবস্থায় আছে। লিফটের দরজায় দাঁড়িয়ে উপরের দিকে চোখ রেখে দেখা যায়, সেখানেও বাঁশের বাতার ব্যবহার করা হয়েছে। তবে পুরো ভবনেই রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এদিকে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হলে গতকাল সকালে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার এ এফ এম রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিদ হাসান, মাসুম আল হাসান, আবু হেলাল আনসারী ও নাফিজ মাহমুদ ভবনটি পরিদর্শন করেন। এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফুল ইসলাম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্ক বিল্ডার্সের পক্ষেই সাফাই গান। বলেন, ‘এটি বড় কোনো সমস্যা নয়। মূল ভবনের সঙ্গে লিফট স্থাপনের সময় কিছুটা স্থান ফাঁকা থেকেছে। এই স্থানটিতে পলেস্তারা করে টাইলস বসানোর জন্য বাঁশের বাতা ব্যবহার করা হয়েছে। এতে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না। পুরো ভবনে রডের পরিবর্তে বাঁশের বাতা ব্যবহার করা হয়েছে বিষয়টি এমনও নয়।’ রডের পরিবর্তে বাঁশের বাতা ব্যবহারের যৌক্তিকতা কতটুকু— জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী কোনো মন্তব্য করেননি। তবে সেখানে বাঁশের বাতার পরিবর্তে লোহার অ্যাঙ্গেল বা টিনের প্লেট ব্যবহার করা যেত বলে মন্তব্য করেন তিনি। হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, লিফটের যতটুকু অংশে বাঁশের বাতা ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে প্রতিটি লিফট স্থাপনে ঠিকাদারের সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এত কম পরিমাণ টাকা বাঁচাতেই যদি বাঁশের বাতা ব্যবহার করা হয়, তবে পুরো ভবন নির্মাণে ঠিক কত জায়গায় বাঁশের বাতা ব্যবহার করা হয়েছে এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার এ এফ এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখানে যোগ দেওয়ার আগে ভবনটি নির্মিত হয়েছে। সকালে আমরা সবাই জায়গাটি পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তদন্ত করে দেখা হবে ভবনটি অনিরাপদ কিনা। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে কিনা।’    

সর্বশেষ খবর