বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে প্রাণী

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে প্রাণী

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ছলিমপুর এলাকার পাহাড় থেকে খাবারের সন্ধানে প্রায় লোকালয়ে আসত একটি অজগর। বিভিন্ন সময় ছাগল মুরগি খেয়ে ফের পাহাড়ে ফেরত যেত অজগরটি। তাই স্থানীয় লোকজন অজগরটি ধরতে পাহারা বসায়। গত ৩০ অক্টোবর ক্ষুধার তাড়নায় পাহাড় থেকে নেমে এসে খেয়ে ফেলেন একটি বড় আকৃতির ছাগল। খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে প্রায় ১৫ ফুট দৈর্ঘ্যের অজগরটি। পরে স্থানীয় লোকজন অজগরটি ধরে পাঠিয়ে দেয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। সোমবার ভোরে চিড়িয়াখানায় মারা যায় সাপটি। এছাড়া ১৭ অক্টোবর চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে খাবারের সন্ধানে এসে তাণ্ডব চালিয়েছে একদল বন্যহাতি। এ সময় হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা যান মো. হোসেন নামে এক ব্যক্তি এবং আহত হয়েছে আরও কয়েকজন। ৫ অক্টোবর রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের থলিবাড়ি এলাকায় ধরা পড়ে প্রায় ১৫ ফুট লম্বা অজগর। পরে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ সাপটি উদ্ধার করে ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে অবমুক্ত করে। ১৭ এপ্রিল সীতাকুণ্ডের কুমিরা এলাকায় বন থেকে ছুটে লোকালয়ে আসে একটি হরিণ। পরে স্থানীয় লোকজন হরিণটি উদ্ধার করে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে।  শুধু ওই অজগর, হাতি, হরিণই নয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন বন-জঞ্জল থেকে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে আসছে নানান বন্যপ্রাণী। এভাবে লোকালয়ে এসে অনেক প্রাণীই মারা পড়ছে মানুষের হাতে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত-মানুষের নির্বিচারে বন জঞ্জল নিধন এবং বন্য প্রাণীদের খাদ্য ধ্বংসের কারণে অরণ্য প্রাণীদের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই খাদ্য ও নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে অরণ্য ছেড়ে লোকালয়ে ছুটে আসছে বন্যপ্রাণীগুলো। এ ধারা চলতে থাকলে অচিরেই বিলুপ্ত হবে অনেক প্রাণী। এতে করে ঘটতে পারে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণী বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী এসএম আসমত বলেন, ‘মানুষ নির্বিচারে পাহাড়, বন-জঙ্গল উজাড় করে দেয়ার ফলে পাহাড়ে প্রাণীদের বসবাসের অনুপযোগী এবং চরম খাদ্য সংকট দেয়া দিয়েছে। তাই বন্যপ্রাণীগুলো নিরাপদ আশ্রয় এবং খাদ্যের জন্য লোকালয়ে ছুটে আসছে। লোকালয়ে ছুটে আসা বেশির ভাগ প্রাণী হত্যার শিকার হয়। এভাবে চলতে থাকলে বিলুপ্ত হবে অনেক বন্যপ্রাণী। এতে করে দেখা দিতে পারে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়।’ চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ) গোলাম মওলা বলেন, বন্যপ্রাণী লোকালয়ে এলে যাতে মানুষের হাতে আক্রমণের শিকার না হয় এ জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করছে বন বিভাগ। এরই মধ্যে বেশকিছু বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে বিভিন্ন জায়গায় ফের অবমুক্ত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, মানুষ দ্বারা নির্বিচারে বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থল এবং খাদ্য ভাণ্ডার ধ্বংসের ফলে পাহাড়ে প্রাণীদের জন্য চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে প্রাণীগুলো আশ্রয়স্থল ও খাদ্যের জন্য দিক দিগন্তে ছুটে লোকালয়ে চলে আসছে। এভাবে চলতে থাকলে নষ্ট হবে পরিবেশের ভারসাম্য। নষ্ট হবে প্রাণীদের আন্তঃসম্পর্ক। বিলুপ্ত হবে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী। যা জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের বিষয়ে অধ্যাপক ড. গাজী এসএম আসমত বলেন, দেশকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে হলে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। তবে পরিবেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর