বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পরিবেশবান্ধব বাঁশ ও মাটির ঘর

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

পরিবেশবান্ধব বাঁশ ও মাটির ঘর

অল্প খরচে মজবুত ও টেকসই ঘর। তবে পাকা দালানকোঠা নয়। গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া বাঁশ ও মাটির ঘর। এই মাটির ঘরই এখন ভূমিকম্প নিরোধ পরিবেশবান্ধব। ভূমিকম্প, প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে আবাসনের নিরাপত্তা নিয়ে যখন চিন্তিত, তখন সাধারণ মানুষের মাঝে এই মাটির বাড়ি আশা জাগিয়েছে। বিশেষ করে বস্তি এলাকায় মানুষের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে। পরিবেশবান্ধব টেকসই ও মজবুত এ বাঁশ, মাটির ঘর যা বন্যা, জলোচ্ছ্বাস এবং বৃষ্টির পানিতে কোনোরকম ক্ষতির সম্ভাবনা কম। অল্প খরচে মজবুত ও টেকসই ঘর বাঁশ-মাটি দিয়ে নির্মাণ করছেন দিনাজপুর শহরের বড়বন্দরের যোগেনবাবুর মাঠে অবস্থিত ১২টি এবং সুন্দরবন গ্রামে মডেল ৮টি এবং ৩০টি তৈরিতে লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে নির্মিত ঘর। ১৯৯৬ সাল থেকে এই ঘর নিয়ে গবেষণা করেন অজিত রায়। অজিত রায় দীর্ঘ ১৪ বছর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে মাটি ও বাঁশের ঘরই উত্তম। দিনাজপুর সদর উপজেলার সুন্দরবন ইউপির হরিপদ রায়ের পুত্র অজিত রায়। ২০১০ সাল থেকে এ ঘরগুলো নির্মাণ শুরু করা হয়েছে। তার গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, মাটি, বাঁশ, ৫% সিমেন্ট দিয়ে নির্মিত করা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব টেকসই মজবুত মাটির ঘর যা বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, বৃষ্টির পানিতে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। এসব বাড়িতে বাঁশগুলোকে বরাক-বরাক (বরিক পাউডার ও বরাক সার সমন্বয়ে) দিয়ে টেকসই করা হয় অথবা বাঁশগুলোকে তিন মাস পানিতে ভিজিয়ে তারপর শুকনা করে নেওয়া হয় যাতে ঘুণে না ধরে। অজিত রায় জানান, দেশি-বিদেশি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান কিঞ্চিৎ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তা দিয়েই দিনাজপুর শহরের যোগেনবাবুর মাঠে বাঁশ দিয়ে নির্মিত করা হচ্ছে দ্বিতল ঘর। বস্তিবাসীর সামাজিক উন্নয়নে এসব কাজ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। বাড়িগুলো তৈরিতে খরচ হয়েছে মডেল প্রতি বাড়ি ৮০-৯০ হাজার এবং বাকিগুলোর ৩৫-৪০ হাজার টাকা। যারা বাড়িটির মালিক তারা শুধু ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন বাকিটা নিরাপদ বাংলাদেশ সংস্থা দিয়েছে। দিনাজপুর শহরের যোগেনবাবুর মাঠ এলাকার অটোচালক মাসুদ রানা জানান, ২০১৩ সালে আমার ২২/৯ ফুট জায়গায় এই বাঁশ-মাটি দিয়ে তৈরি দ্বিতল বাড়ি। দোতলা ছোট বারান্দায় পেয়ারা, বরই, কমলাসহ ১৭টি টবে ফুল-ফলের বাগান করেছি। এ বাড়িটা করতে ৮০ হাজার টাকার অধিক লেগেছে। তবে আমি মাত্র ২০ হাজার টাকা খরচ করেছি বাকিটা নিরাপদ বাংলাদেশের ব্যয় বহন করেছে। আমাদের এ এলাকার বস্তিতে ১২টি বাড়ি ও একটি কমিউনিটি সেন্টার করে দিয়েছে তারা।

এ মাটির ঘরের গবেষক ও নিরাপদ বাংলাদেশ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক অজিত রায় জানান, টেকসই বাড়ি তৈরিতে মাটি, ৫% সিমেন্ট, বাঁশ, কাঠ ও টিন ব্যবহার করা হয়। তবে বাড়ির দেয়ালে ব্যবহারের জন্য (১০ x ১০ x ৬) বর্গ ব্লক তৈরি করা হয়। সাড়ে ১৮ x সাড়ে ১২ ফুট ঘরে খরচ পড়ে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। অথচ এ মাপের ইট-সিমেন্টের বাড়ি করতে দ্বিগুণ খরচ পড়বে। এসব বাড়ি ৬০ থেকে ৭০ বছর টেকসই থাকবে। তিনি জানা, এসব ব্যবহার করে আমার অফিসসহ বিভিন্ন দরিদ্র মানুষের ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। একতলা বা দ্বিতল বাড়ি তৈরিতে অনেকে শ্রমসহ সামান্য অর্থ নিয়ে এলে আমরা বাকিটা সাপোর্ট দিয়েছি। এসব বাড়ি দেখতে ও তৈরিতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার বিভাগের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়েছেন।

 

সর্বশেষ খবর