বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
জেলা পরিষদ নির্বাচন

আওয়ামী লীগের হ্যাঁ বিএনপির না

মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ নেতাদের দৌড়ঝাঁপ

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগের হ্যাঁ বিএনপির না

জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। মনোনয়নের দৌড়ে জেলা পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি রয়েছেন কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও। মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা নেতারা এখন ঢাকামুখী। গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে তারা দলীয় প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি দলের সিনিয়র নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব বেড়ে গেছে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের কাছে। তারা বিভিন্ন উপজেলা-ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, কাউন্সিলর ও মেম্বারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আগামী ২৮ ডিসেম্বর দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তিন ক্যাটাগরিতে মূল্যায়ন করা হবে। প্রথমত জেলায় সর্বজনগ্রহণযোগ্যতা, দ্বিতীয় কর্মীবান্ধব ও তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন কিন্তু নানা কারণে এমপি-মন্ত্রী হতে পারেননি বা তাদের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। জানা গেছে, প্রার্থী বাছাইয়ে বর্তমান প্রশাসকদের অগ্রাধিকার দিয়ে বিকল্প তালিকাও প্রস্তুত করছে দলটি।

এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদ প্রশাসক পদে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে তিনটি বিষয় মাথায় রেখেই প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়, কর্মীবান্ধব-ত্যাগী এবং দলের জন্য নিবেদিত কিন্তু তেমন মূল্যায়ন পাননি এমন ব্যক্তিকেই এবার বেছে নেবেন দলীয় প্রধান। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জেলা পরিষদ প্রশাসক নির্বাচনকে বেশ গুরুত্বসহকারে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ভোটার নির্দিষ্ট হলেও এ নির্বাচনে সম্পৃক্ত সবাই সচেতন জনপ্রতিনিধি এবং এর রেশ সাধারণ মানুষের মাঝেও পড়বে। প্রার্থী বাছাইয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে দলীয় নেতাদের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া কঠোর হস্তে দমন করা হবে। দলীয় সূত্রমতে, উপজেলা, ইউনিয়ন ও পৌরসভায় অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। তাই জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, তার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে কারণে দলীয় মনোনয়ন পেতে জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জোর লবিং-তদবির করছেন। জেলা নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও এ পদে আসতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, জেলা পরিষদ ব্রিটিশ আমল থেকেই চালু ছিল। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে এই জেলা পরিষদ কাঠামোকে অনেক বেশি কার্যকর করে জেলা গভর্নর পদ্ধতি চালু করেন। কিন্তু তা কার্যকর হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। এরপর জিয়াউর রহমান আবার জেলা পরিষদ গঠন করেন। ওই সময়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে সরকারের মনোনীত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হতো। জেলা পরিষদের মাধ্যমে তখন মূলত উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হতো। জেনারেল এরশাদের আমলেও জেলা পরিষদ কার্যকর ছিল। ১৯৮৮ সালে ঠিক হয় সরকার মনোনীত ব্যক্তি নন, সংসদ সদস্যরা হবেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। কিন্তু ১৯৯১ সালে গঠিত বিএনপি সরকারের সময় জেলা পরিষদ অকার্যকর হয়ে পড়ে। ওই সময় উপজেলা পরিষদও বিলুপ্ত করা হয়। মূলত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোনো নির্বাচন না দেওয়ায় জেলা পরিষদ অকার্যকর হয়ে পড়ে। সরকারের উপসচিব পদমর্যাদার একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়ে এ পরিষদ পরিচালনা শুরু হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জেলা পরিষদ কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর আগে ২০১২ সালের ১৫ অক্টোবর দেশের তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলা পরিষদে প্রশাসক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব প্রশাসকের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সারির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতা। নির্বাচন কমিশনের নীতিমালায় বলা হয়েছে : অন্য নির্বাচনের মতো এখানে সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন না। প্রার্থী বাছাইও অন্যসব নির্বাচনের মতো নয়। সরকারের সুবিধাভোগী নন এমন যে কেউ এ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। আর ভোটার হবেন স্থানীয় সরকারের চার স্তরের জনপ্রতিনিধিরা। এ নির্বাচনের ভোটার হচ্ছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর (পুরুষ-মহিলা) ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর এবং ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার। বর্তমানে উপজেলা, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, কাউন্সিলর ও মেম্বার অধিকাংশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। তাই জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রশাসকদের জয় হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ বলে মনে করেন মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা।

সর্বশেষ খবর