বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

গতি পেয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্প

সেবা সংস্থার লাইন অপসারণ শুরু

বিশেষ প্রতিনিধি

গতি পেয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্প

রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল লাইন-৬-এর বাস্তবায়ন কাজ গতি পেয়েছে। মঙ্গলবার মেট্রোরেল রুটের মাটির নিচে থাকা বিভিন্ন সেবা সংস্থার পাইপলাইন ও কেবল অপসারণ ও বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে প্রায় এক বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি করে সার্ভিস লাইন চিহ্নিত করে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য দিয়ে ঢাকাবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেল প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। প্রথম ধাপে আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত মেট্রোরেলের নির্মিতব্য স্থাপনার (লাইনের স্তম্ভ ও স্টেশন) অংশের লাইনগুলো সরানো হবে। প্রথমে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন সরানো হচ্ছে। এজন্য সড়কের পূর্ব পাশের একটি লেন বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে সড়কের পূর্ব পাশের মাঝখানের লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। এ অবস্থা চলবে প্রায় আড়াই মাস। ব্যস্ত এ সড়কটিতে জনদুর্ভোগ কমাতে রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত এ অপসারণ কাজ চলবে। ২০০ মিটার করে ধাপে ধাপে লাইন সরানো হবে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের এক তথ্যবিবরণীতে এসব তথ্য জানিয়ে যানজট এড়াতে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দা, বিশেষ করে ব্যক্তিগত গাড়িগুলোকে বিকল্প পথ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রম চলাকালে যানজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্র জানায়, আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত মাটির নিচে পিজিসিবির  বিদ্যুতের যে লাইন রয়েছে, তা মেট্রোরেলের লাইনের মাঝখানে পড়েছে। পিজিসিবি জানিয়েছে, তাদের পুরনো তার আর সরানো যাবে না। নতুন গর্ত করে আরেকবার তার বসাতে হবে। এ কাজই মঙ্গলবার রাতে আগারগাঁও থেকে শুরু হয়েছে। আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত ছয় লেনের সড়কের মাঝখানে রয়েছে সড়ক বিভাজক। পিজিসিবি নতুন তার বসানোর জন্য সড়কের পূর্বাংশে মাঝখানের লেনে চার ফুট চওড়া গর্ত করবে। এ কাজের জন্য মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এলাকায় যানজটসহ জনদুর্ভোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পল্লবী থেকে ৭৫০টি বাস-মিনিবাস রাজধানীর একাধিক গন্তব্যে চলাচল করে। এগুলো দিনে কয়েকটি ট্রিপ দেয়। এসব বাসযাত্রী মিরপুরের মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হবে। এজন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন জানান, বিভিন্ন সেবা সংস্থার সার্ভিস লাইনগুলো সরিয়ে ফেলা এখন মূল চ্যালেঞ্জ। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে সেভাবেই চলছে মেট্রোরেলের কাজ। লাইন সরানো ও নির্মাণকালে মানুষের কিছুটা কষ্ট হবে। তবে এ কষ্ট সাময়িক।

তিনি বলেন, আশার বিষয় হচ্ছে, মেট্রোরেল ঢাকাবাসীর জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে। প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে পল্লবী, আগারগাঁও, ফার্মগেট ও জাতীয় প্রেসক্লাব হয়ে মতিঝিল যাবে। পথে ১৬টি স্থানে স্টেশন হবে। ইতিমধ্যে উত্তরায় এর ডিপো উন্নয়নের কাজ চলছে। ট্রেনের ইঞ্জিন-বগি ক্রয়, লাইন নির্মাণ ও বিদ্যুৎ-ব্যবস্থার দরপত্রের প্রক্রিয়া চলছে। এর আগে সেবা সংস্থার সব লাইন সরাতে হচ্ছে। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের সিংহভাগই বহন করবে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা। ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, মেট্রোরেলের পথে ওয়াসা, তিতাস, পিজিসিবি, টিঅ্যান্ডটিসহ ১২টি সেবা সংস্থার লাইন রয়েছে। প্রায় এক বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি করে সেবা সংস্থার লাইনগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এখনো শাহবাগ থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের কিছু কিছু স্থানে লাইন চিহ্নিত করা বাকি। তবে সব সংস্থার লাইন সব স্থানে নেই। বেশির ভাগ পথেই একসঙ্গে তিন-চারটি সংস্থার লাইন আছে। ১৬টি স্টেশনের স্থানে প্রায় সব সংস্থার লাইনই সরাতে হবে। মেট্রোরেলের সমীক্ষা কার্যক্রমে রাজধানীর প্রতিটি সেবা সংস্থার প্রতিনিধি রয়েছেন। আলাপকালে তারা বলেছেন, অধিকাংশ পুরনো লাইন মাটির নিচে অকেজো ঘোষণা করে নতুন করে বসাতে হবে। নিয়মানুযায়ী, সেবা সংস্থার লাইন সরানোর খরচ বহন করবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ, আর সরানোর কাজ করবে নিজ নিজ সংস্থা।

মেট্রোরেল প্রকল্পের এক কর্মকর্তা বলেন, সব সংস্থা একসঙ্গে খোঁড়াখুঁড়ি করলে যান চলাচলের পথ একেবারে কমে যাবে। আর নির্মাণকাজ শুরু হলে দুর্ভোগ অনেক বাড়বে। তাই সমন্বিতভাবে লাইন সরানোর কাজ করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সহায়তা চাওয়া হবে। এক গর্তেই যাতে সব লাইন ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, সেই চিন্তা আছে কর্তৃপক্ষের। তবে লাইন সরানোর সময় গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে না। শুধু পুরনো লাইন বাতিল করে নতুন লাইনে সংযোগ দেওয়ার সময় একবার সমস্যা হতে পারে। এমন করা হলে জনদুর্ভোগ কম হবে।

সর্বশেষ খবর