বহুল প্রত্যাশিত নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ চালু হবে ২০২২ সালের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন, যেদিন পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে সেদিনই রেলসংযোগ চালু করতে হবে। এ লক্ষ্যে তিনি সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে বলেছেন।
সেতু বিভাগ জানিয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে। এ প্রকল্পে রেলসংযোগ স্থাপন কাজের মেয়াদ ধরা হয়েছে ১ জানুয়ারি, ২০১৬ থেকে ৩০ জুন, ২০২২ পর্যন্ত। প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ স্থাপনের জন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড—সিআরইসির সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। সম্প্রতি এ প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
বাংলাদেশ সরকার ও সিআরইসির চুক্তিপত্রের তথ্যানুযায়ী, এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ১ জানুয়ারি, ২০১৬ থেকে ৩০ জুন, ২০২২ পর্যন্ত। এতে ব্যয় হবে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যা পদ্মা সেতুর ব্যয়ের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে ২৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দেবে চীন সরকার এবং বাকি ১০ হাজার কোটি টাকার জোগান দেওয়া হবে বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি চার ধাপে সম্পন্ন হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপ ২০১৮ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে চীন ও বাংলাদেশ সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিআরইসির সঙ্গে চুক্তির পর রেলের পাত, বগিসহ নানা ধরনের যন্ত্রাংশ এরই মধ্যে প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছে চীন। এসব যন্ত্রাংশ সরাসরি চীন থেকে এনে লাইনে স্থাপন করা হবে। লাইন স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, সহায়তা ও সুপারভিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে।সংস্থাটি তাদের প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিয়েছে। মাওয়া থেকে জাজিরা পয়েন্টের যে এলাকা দিয়ে রেললাইন স্থাপন করা হবে, তার একটি জরিপ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই ওই এলাকার ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে। রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারের পরিকল্পনা ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী চীনা প্রতিষ্ঠান সিআরইসির সঙ্গে দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২২ সালের আগেই এ প্রকল্প সমাপ্ত হবে এবং আগামী বছরের মাঝামাঝিতে এর কাজ দৃশ্যমান হবে। এদিকে সেতু বিভাগ বলছে, প্রধানন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। সেদিনই সেতুতে রেল চলাচল ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তা সম্পন্ন হবে কিনা, এখনই বলা যাচ্ছে না। সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইকবাল জানান, যেহেতু ওই কাজটি অন্য একটি মন্ত্রণালয় দেখাশোনা করছে এবং অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের চুক্তি করা হয়েছে সেহেতু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানই বলতে পারবে ২০২২ সালের আগে রেলসংযোগ চালু হবে কিনা। এদিকে একনেক সভায় এ প্রকল্প অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনোভাবেই এ প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানো যাবে না। একই দিনে পদ্মা সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচের অংশ দিয়ে রেল চলাচল করবে। এটা একটি দর্শনীয় প্রকল্প হবে দেশবাসীর কাছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ডাবল ডেকার সিস্টেমের পদ্মা সেতু দেখতে আসবে সাধারণ মানুষ। সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে নতুন রেলওয়ে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে একনেক সভায়। প্রকল্পের আওতায় রাজধানী থেকে পদ্মা বহুমুখী সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত নতুন ব্রড-গেজ রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে ১৬৯ কিলোমিটার। লুপ সাইডিংস, ডাবল লাইনসহ মোট ট্র্যাক হবে ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার। প্রকল্পে চীনা ঋণ সহায়তা থেকে ব্যয় করা হবে ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি ৫ লাখ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী চীনকে ঋণের জন্য ২ শতাংশ হারে সুদ দেবে বাংলাদেশ। টোল আদায়ের মাধ্যমে ২০ বছরে চীনকে সব টাকা পরিশোধ করা হবে। সেতু ও রেললাইন ব্যবহারকারী যানবাহনের কাছ থেকে টিকিট বিক্রির মাধ্যমে টোলের টাকা কেটে নেওয়া হবে।