শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

যমুনার চরে গাইঞ্জা ধান

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

যমুনার চরে গাইঞ্জা ধান

গাইঞ্জা নামের স্থানীয় জাতের ধান চাষ করছে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চাষিরা। আপদকালীন ধান হিসেবে অনেক বছর আগে থেকেই এ ধান চাষ হয়ে থাকে সারিয়াকান্দি উপজেলায়। স্থানীয় চাষিরা এই ধান চাষকে আপদকালীন বললেও কৃষি অফিস বলছে এই ধান চাষ বাড়তি ফলন। যমুনা ও বাঙালি নদীর পানি কমে গেলে জেগে ওঠা চরের অল্প পানিতে এই গাইঞ্জা ধান চাষ করে থাকে কৃষকরা। প্রতি বিঘায় ফলন পাওয়া যায় ৮-৯ মণ করে। সার ও কীটনাশক ছাড়াই এই ধান আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে এ ধানের আবাদ হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। বাড়তি ফলন পাওয়া যাবে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সারিয়াকান্দিতে যমুনা ও বাঙালি নদীর ঢালু চরে ব্যাপক হারে আগাম জাতের গাইঞ্জা ধান চাষ করে আসছে চাষিরা। দীর্ঘদিন ধরে এই ধান চাষ করে থাকে স্থানীয় চাষিরা। মূলত নদীর পানি দিয়ে এ ধান চাষ হয়ে থাকে। বন্যা, অতি বন্যা, শুষ্ক মৌসুমে নদীর জেগে ওঠা চরে এই ধান চাষ করে থাকে। স্থানীয় চাষিরা এই ধান চাষ করে নিজেদের জন্য চাল এবং গরুর জন্য খড়ের ব্যাপক ব্যবহার হয়ে আসছে। নদীর পানি শুকিয়ে গেলে বা কমে গেলে নদীর দুই পাড়ে ফাঁকা জায়গায় এই ধান চাষ হয়ে থাকে। বর্ষাকালে বর্ষালী ধানও চাষ করে। চৈত্র মাসে ফসল ফলাতে কষ্টসাধ্য বলে স্থানীয় চাষিরা আমন ধান কাটার পর আবারী ধান চাষ করে। এই ধানের নাম দিয়েছে গাইঞ্জা ধান। বাড়তি ফলনের আশায় চাষিরা প্রায় সারা বছরই গাইঞ্জা ধান চাষ করে থাকে। এই ধান হতে প্রায় ১০০ দিন সময় লাগে। চাষবাসে খরচ বলতে পানি সেচ ও বীজ। এ ছাড়া কোনো সার দিতে হয় না। আমন বা বোরোর মতো ফলন পাওয়া না গেলেও বিঘা প্রতি ৮ থেকে ৯ মণ ধান পাওয়া যায়। বেশিরভাগ কৃষক এই ধান নিজেদের খাওয়ার জন্য চাষ করে থাকে। এই ধানের চাল সুস্বাদু হয়ে থাকে বলে চাষিরা বর্ষাকালে ও চৈত্র মাসে খাবারের জন্য ব্যবহার করে। কৃষকের বুকভরা আশা জেগে উঠছে সবুজের সমারোহ ভরা গাইঞ্জা ধান দেখে। পানি সংলগ্ন ধান বীজ রোপণ করার কারণে হাতে সেচ দিলেই হয়। প্রথমে গাইঞ্জা ধানের চাষ এবং কাটা হয়। এরপর আবার কালোবরা ধান চাষ শুরু হয়। হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়া গ্রামের চাষি এফাজ উদ্দিন মেম্বার জানান, কবে থেকে এ জাতের ধান চাষ হয়ে আসছে তা জানেন না। এ জাতের ধান চাষে তেমন কোনো খরচ নেই। চৈত্র মাসে কোনো ফসলাদি না থাকায় এ ফসলটি ঘরে এলে দু বেলা খাবার নিয়ে চিন্তা থাকে না। তাছাড়া গরুর খাবারেরও সংকট পড়ে না। সব মিলিয়ে ফসলটি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। চর নয়াপাড়া গ্রামের চাষি ফজলুল করিম শেখ জানান, সময় পেরিয়ে গেলেও চরের উর্বর উঁচু নিচু ঢালু জমি তো ফেলে রাখা যায় না। ফলন যেখানে প্রতি বিঘায় ১২-১৩ মণ পাওয়া যায়। অসময়ে রোপণ করার জন্য সেখানে হয়তো বা ৭-৮ মণ করে ফলন পাওয়া যাবে। এ ছাড়া প্রাপ্ত খড় থেকে গো-খাদ্যের অভাব দূর হবে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আবদুল হালিম বলেন, চরের চাষিরা চাষ, সেচ, সার ও কীটনাশক ছাড়া স্থানীয় জাতের গাইঞ্জা ধানের চাষ করে ভালো ফলন পেয়ে থাকেন। এটি চাষের সময় পার হলেও রোপণের পর যদি বৃষ্টি হয় তাহলে ভালো ফলন হয়। সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহাদৎ জামান জানান, স্থানীয় চাষিরা গাইঞ্জা ধানকে আপদকালীন ফসল বলে থাকে। কিন্তু কৃষি অফিস বলছে এটি বাড়তি ফলন। অন্যান্য ফসলও চাষ হয়। পতিত জমিতে চাষ হয়ে থাকে বলে বাড়তি ফলন বলা হচ্ছে। গত বছর প্রতিবিঘায় কমপক্ষে ৮-৯ মণ ধান পাওয়া গেছে। এবারও এমনটি আশা করা হচ্ছে। গাইঞ্জা ধান ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে। এর বিপরীতে ফলন ধরা হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার মেট্রিক টন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর