রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

শিকলবন্দী মা ছেলের জীবন!

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

শিকলবন্দী মা ছেলের জীবন!

১৩ বছরের কিশোর ছেলে আওলাদের মাথায় সমস্যা। এ জন্য সে হারিয়ে যেতে পারে এমন ভয়ে শিকল দিয়ে ছেলেকে বেঁধে রেখেছেন নিজের সঙ্গে। মা যেখানে যাচ্ছেন, ছেলেও যাচ্ছে সেখানে। সর্বক্ষণ মা-ছেলে একটি লোহার শিকলে বাঁধা অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। মা সালমা আক্তার ছেলে আওলাদকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করছেন। শিকলে বাঁধা  মা-ছেলের জীবন। সন্তানকে শিকলে আটকে দোকানে দোকানে ভিক্ষা করছে আওলাদের দুঃখিনী মা। ছেলে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, যদি হারিয়ে যায় কলিজা ছেঁড়া সোনার মানিক। সে ভয়েই মা সালমা আক্তার বাধ্য হয়ে প্রিয় সন্তানকে লোহার শক্ত শিকল দিয়ে নিজের হাতের সঙ্গে বেঁধে রেখেছেন। মা সালমা আক্তার জানান, স্বামী সন্তান নিয়ে সুখের সংসার ছিল তার। জন্মের সময় খুব সুন্দর লাতুস-লুতুস হয়েছিল আওলাদ। তার বাবারও স্বপ্ন ছিল ছেলেকে লেখাপড়া করিয়ে বিদ্যান বানাবে। কিন্তু বাদ সাধে একটি সড়ক দুর্ঘটনা। সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে পড়ে রইল পিচঢালা সড়কে। স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। তখন ছেলে আওলাদের বয়স মাত্র দুই বছর। সালমা আক্তার জানান, কিশোরগঞ্জ শহরে ছিল তাদের বসবাস। তার স্বামী আল আমীন ছিলেন ট্রাক চালক। ভালো কামাই ছিল তার স্বামীর। ছেলে হয়েছে এ খুশিতে প্রায়ই ট্রাকে করে বেড়াতে যেত তারা। একদিন সকালে বেড়াতে গিয়ে ট্রাক দুর্ঘটনায় পড়ে। এ সময় স্বামী আল আমীন গুরুতর আহত হয়। আওলাদও মাথায় গুরুতর আঘাত পায়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই দিন পর স্বামী আল আমীন মারা যান। ছেলে আওলাদ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথার সমস্যা দেখা দেয়। অনেক ডাক্তার কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসায় ভালো হয়নি আওলাদ। কান্না জড়িত কণ্ঠে সালমা আক্তার বলেন, দুনিয়াতে আমার আর কী আছে। দুনিয়া বলতেই আমার কলিজার টুকরা আওলাদ। মাঝে মাঝে সে যখন আমাকে জড়িয়ে আদর করে তখন আমার সব কষ্ট হারিয়ে যায় আকাশে। সে হারিয়ে যাবে এ ভয়েই মা-ছেলে একই শিকলে বাঁধা পড়েছি। এখন শ্রীপুরের দক্ষিণ ভাঙনাহাটি এলাকার কেরানি স্কুলের পাশে নুরু মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছি। ওখানেই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছি। শ্রীপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাজ উদ্দিন জানান, মা-ছেলের এমন অসহায়ত্ব দেখে নুরু মিয়া তাদের থাকতে দিয়েছেন। শিশুটির মা সারাদিন ছেলেকে শিকলে বেঁধে এলাকায়, বাজারে ভিক্ষা করে সংসার চালান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর