সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

টার্কির বাণিজ্যিক খামার ঠাকুরগাঁওয়ে

মো. আবদুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও

টার্কির বাণিজ্যিক খামার ঠাকুরগাঁওয়ে

পোলট্রি শিল্পের লোকসানের মুখে যখন শতাধিক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। ঠিক সে সময় কয়েকজন যুবক পোলট্রি শিল্পকে বাঁচাতে ঠাকুরগাঁওয়ে নতুন মাত্রায় যোগ করেছেন টার্কি নামে এক বড় আকারের গৃহপালিত পাখির খামার। জানা যায়, টার্কির উত্পত্তি উত্তর আমেরিকায়। কিন্তু ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্য তালিকায় অন্যতম উপাদান এর মাংস। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে ওঠার ছয় মাসের মধ্যে টার্কি ডিম দেয়। ছয় মাসের স্ত্রী টার্কির ওজন হয় পাঁচ থেকে ছয় কেজি। আর পুরুষ  টার্কির প্রায় আট কেজি। আমেরিকায় টার্কির রোস্ট অভিজাত খাবার। আমাদের দেশে মুরগির মাংসের মতো করেই টার্কি রান্না করা হয়। রোস্ট ও কাবাব করা যায়। ঠাকুরগাঁওয়ের তরুণ উদ্যোক্তা মিন্টু, স্বরাজ, ফারুকসহ কয়েকজন খামারি এক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে টার্কি চাষ করছেন। তারা সদর উপজেলা সালান্দর তেলিপাড়া এলাকায় টার্কির খামার গড়ে তোলেন। বাংলাদেশে কয়েকটি বাণিজ্যিকভাবে টার্কি খামার গড়ে তোলা হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে এটি প্রথম বাণিজ্যিক খামার। খামার থেকে পাইকাররা টার্কি কিনে নিয়ে দোকানে দোকানে বিক্রি করেন। সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকায় এখনো দাম একটু বেশি। সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে টার্কি খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়নি এখনো। বিশিষ্ট পোলট্রি ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম জানান, মিন্টু, স্বরাজ, ফারুক, মিঠুসহ কয়েকজন বন্ধু এলাকার মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে বাচ্চা নিয়ে অনেকে শৌখিন খামারি ছোট আকারে টার্কি পালন শুরু করেছেন। মুরগির মড়ক ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বেশি হওয়ায় অনেক পোলট্রি খামার বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে মিন্টু, স্বরাজ, ফারুক, মিঠু, রমজান পোলট্রি শিল্পের বিকল্প খুঁজতে থাকেন। ভারতে ভ্রমণের সময় টার্কির খামার দেখে এসেছিলেন। দুই বছর আগে ঢাকার এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ভারত থেকে ১৫টি টার্কির বাচ্চা আমদানি করেন, যার প্রতি জোড়ার দাম পড়ে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এখন খামারে রয়েছে প্রায় শতাধিক টার্কি মোরগ ও মুরগি। মিন্টু ও স্বরাজ বলেন, টার্কির খাবার নিয়ে দুর্ভাবনা কম। এরা ঠাণ্ডা-গরম সব সহ্য করতে পারে। দানাদার খাবারের চেয়ে কলমির শাক, বাঁধাকপি বেশি পছন্দ করে। সম্প্রতি তাদের খামারে গিয়ে দেখা যায়, এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘কুটুম বাড়ি টার্কি ও তিতির খামার’। শুধু টার্কি নয়, তিতির, হরেক রকমের কবুতর ও ফেনসি বার্ডসহ প্রায় কয়েক জাতের পাখিতে বাড়িটি যেন একটি চিড়িয়াখানা। টার্কির ঘরে ঢুকতেই দলবেঁধে একদিকে দৌড়ে পালাচ্ছে। এ সময় ময়ূরের মতো লেজ ফুলিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মোরগ টার্কি। মিন্টু ও স্বরাজ বলেন, তাদের উদ্দেশ্য হলো বাণিজ্যিকভাবে মাংস উৎপাদন ও ব্রিডিং করে এ প্রজাতির বংশ বৃদ্ধি করা। অনেক বেকার এই টার্কি খামার গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে পারেন। ঠাকুরগাঁও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, মাংস উৎপাদনের জন্য টার্কির সাতটি জাত রয়েছে। পাখি জাতীয় মাংসের মধ্যে মুরগি, হাঁস, তিতির, কোয়েলের পর টার্কি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। টার্কির মাংস অন্যান্য পাখির মাংস থেকে কম চর্বিযুক্ত, তাই টার্কির মাংস অধিক পুষ্টিকর।

সর্বশেষ খবর