মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ডলার ডেমোক্রেসি সব মাত্রা ছাড়িয়েছে

-----------শমসের মবিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডলার ডেমোক্রেসি সব মাত্রা ছাড়িয়েছে

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে এবার ডলার ডেমোক্রেসি অতীতের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি বলেন, এবার অর্থের ছড়াছড়ির মাত্রা বেড়ে গেছে। ষাটের দশকে আমরা যখন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম তখনো বলা হতো, যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেসি হচ্ছে ডলার ডেমোক্রেসি। মানে ব্যয়বহুল গণতন্ত্র। মার্কিনিরা নির্বাচনের বিজ্ঞাপনে বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচ করেন। বিজ্ঞাপনও বিশাল ভূমিকা পালন করে নির্বাচনে। অর্থ ব্যয়ে এবার রীতিমতো একটি প্রতিযোগিতা চলছে। নির্বাচনের বিজ্ঞাপনগুলো মার্কিন নির্বাচনে শালীনতার মাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। অশালীন ভাষায় বিজ্ঞাপন তৈরি করা হয়েছে এবার। অশালীনেরও মাত্রা সব ছাড়িয়ে গেছে। আমি বহুদিন ধরে ওদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে আসছি, এ ধরনের অশালীনতা আগে কখনো দেখিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি একসময় ওই দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। অর্থের জোগান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গান্নবি নামে একটি রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন রিপাবলিকানদের সমর্থন দিচ্ছে। অর্থের জোগানও দিচ্ছে। আবার টোব্যাকো লবিও রিপাবলিকানদের পক্ষে অর্থ ব্যয় করছে। অন্যদিকে লেবার ইউনিয়ন গ্রুপ ডেমোক্রেটিক পার্টিকে সমর্থন-অর্থ দুটিই দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থের ছড়াছড়ি বেশি মাত্রায় বেড়ে গেছে। নির্বাচনে সে দেশের গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে বিএনপির সাবেক এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মিডিয়া সম্পূর্ণ স্বাধীন। নিরপেক্ষতাও বজায় রাখছে। সেখানের মিডিয়াও মূলধারার। ব্যতিক্রম হচ্ছে একমাত্র ফক্স নিউজ। তারা অতিমাত্রায় রিপাবলিকানদের পক্ষে কাজ করছে। এবার ট্রাম্প মিডিয়াকে খেপিয়ে দিয়েছেন। খারাপ ভাষায় আক্রমণ করেছেন। উনি একজন রিপোর্টারকে প্রকাশ্যেই ব্যঙ্গ করেছেন। এসব কারণে মিডিয়াও মূলধারার রাজনীতি সাপোর্ট করছে। তবে তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আকার ইঙ্গিতে অবস্থান নিয়েছে। সে দেশের মূলধারার মিডিয়াগুলোর প্রকাশ্যেই কোনো রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে সমর্থন দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। মজার বিষয় হলো, রিপাবলিকান পার্টির বেশকিছু প্রিন্ট মিডিয়া হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন দিয়েছে। গত ১০০ বছরে এটা নজিরবিহীন। এক দলের আদর্শে বিশ্বাসীরা অন্য দলের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। এবার মিডিয়ার ভূমিকা সামনে চলে এসেছে। নতুন প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হিলারি ক্লিনটন নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির তেমন কোনো হেরফের হবে না। আর আমি বিশ্বাস করি, হিলারি ক্লিনটনই নির্বাচিত হবেন। অনেক বড় ভোটের ব্যবধানেই হবেন। যেহেতু তিনি বারাক ওবামার দলের প্রার্থী এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তাই পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন আসবে না। ওবামা প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতাই বজায় থাকবে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক যেভাবে এখন আছে, সেভাবেই থাকবে। তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না। তবে ট্রাম্পের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোনো গোষ্ঠীই প্রস্তুত নয়। তিনি বিজয়ী হলে পররাষ্ট্রনীতি, নিরাপত্তানীতি, প্রতিরক্ষানীতি, অর্থনীতি, অভিবাসননীতি কোনোটাই পরিষ্কার নয়। কেউই জানে না। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বাসীই নন। এমনকি তার দলের নেতারাও জানেন না। সব বিষয়ে হুমকির ভাষা তিনি ব্যবহার করেছেন। ওটাই আশঙ্কার বিষয়। শূন্যতার মধ্যেই ট্রাম্পের অভিযান চলছে। আদৌ কী হবে দলের কেউই জানে না। ট্রানজেশন টিমও আমরা দেখিনি। বাংলাদেশি অভিবাসীদের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে? শমসের মবিন বলেন, ট্রাম্প বলেছেন তিনি বিজয়ী হলে ১০০ দিনের মধ্যেই অবৈধ অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দেবেন। এটা একটা অবাস্তব কথা। কিছুটা হয়তো আশঙ্কায় থাকবেন অভিবাসীরা। পরে কী হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ২০ লাখ অভিবাসীকে তিনি বের করে দেবেন, সেটা মনে হয় সম্ভব নয়। তবে হিলারি বিজয়ী হলে জিএসপি পরিস্থিতি এখনকার মতো থাকবে বলে মনে হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে অনাগ্রহ প্রসঙ্গে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, কোনো দেশে গণতন্ত্র সমাজে শিকড় গেড়ে ফেললে লোকের ভোট দেওয়ার আগ্রহ কম থাকে।

 আশঙ্কার বিষয়, যুক্তরাষ্ট্রে ভোট দেওয়ার আগ্রহ ক্রমাগতই কমে আসছে। এবার বেশি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। অনেকেই এখন অভিমান করে ভোট দিতে রাজি হচ্ছেন না। এটা আশঙ্কার বিষয়। তবে গণতন্ত্র আরও সুসংহত করতে ভোট দেওয়া জরুরি বলে আমি মনে করি।

ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পদ্ধতি নিয়ে তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়া অগণতান্ত্রিক নয়। তাদের কথা হলো, বড় বড় অঙ্গরাজ্যগুলো আছে, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, নিউইয়র্ক, টেক্সাস, শুধু এদের ভোটের ভিত্তিতে কেন একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবেন। ছোট ছোট রাজ্যগুলোরও এই নির্বাচনে ভূমিকা থাকতে পারে। ২০০০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী আল গোর পপুলার ভোট বেশি পেয়েও পরাজিত হয়েছেন। একটা রাজ্য মানে ফ্লোরিডায় তিনি ইলেকটোরাল ভোট পাননি।

শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, মার্কিন নির্বাচন প্রক্রিয়া যদি আমরা পর্যালোচনা করি, সেখানে প্রশাসনের সবাই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেন। সেখান থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ আছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কিছুটা ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও সার্বিকভাবে নির্বাচন সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়। সবাই ফলাফল মেনে নেন। যিনি পরাজিত হন, তিনি কালক্ষেপণ না করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানান। পরাজিত প্রার্থী বলেন, রাষ্ট্রের স্বার্থে আপনাকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এটাই তাদের দীর্ঘদিনের একটি সংস্কৃতি। যদিও এবার একটু ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যেই বলেছেন, যদি নির্বাচনের ফল তার পক্ষে না যায়, তা তিনি মানবেন না। আমি মনে করি, এটা সম্পূর্ণরূপে তার ব্যক্তিগত মতামত। তার দল তার বক্তব্যকে সমর্থন করে না। তিনি হুমকি দিলেও ফলাফল মানতে বাধ্য হবেন বলেই আমি মনে করি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ তা মানবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর