মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

৪৬১ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য খুঁজছে সরকার

সমুদ্রপথে মানব পাচার

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজার থেকে সমুদ্রপথে মানব পাচারে জড়িতদের অর্থের উৎস জানতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ৪৬১ জনের একটি তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রদান করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিট কক্সবাজারের সব ব্যাংকের শাখায় চিঠি পাঠিয়ে ইতিমধ্যে এদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন-সংক্রান্ত তথ্য নিয়েছে। আর এ তথ্যের ভিত্তিতে এদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণ পেলেই মামলা করতে পারে দুদক। মানব পাচারে ফেঁসে যেতে পারেন অনেকেই।

সূত্র জানিয়েছে, সমুদ্রপথে মানব পাচার ঝুঁকিপূর্ণ। যার প্রধান রুট কক্সবাজার উপকূল। এই এলাকা হয়ে মানব পাচারের একের পর এক রোমহর্ষক খবর গেল বছর বেশ নাড়া দেয় গোটা দেশকে। এরপর টনক নড়ে প্রশাসনের। বাড়ে সব সংস্থার তত্পরতা। অভিযোগ আছে, এ অবৈধ কর্মকাণ্ড ঘিরে লেনদেন হয় বিপুল অর্থের। তাই চিহ্নিত মানব পাচারকারীদের অর্থ লেনদেনের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট। এ জন্য তারা ৪৬১ সন্দেহভাজনের একটি তালিকা পাঠায় কক্সবাজার অঞ্চলের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয়। এসব ব্যক্তির নামে ব্যাংক হিসাব থাকলে তাতে সন্দেহজনক বা অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রতি বিশেষ নজর রাখার নির্দেশনা  দেওয়া হয়। তালিকাভুক্ত সবার বাড়িই কক্সবাজার জেলায়। এর মধ্যে ৩৫৯ জনই টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দা। এ ছাড়া সন্দেহভাজনদের ৪২ জন মিয়ানমারের নাগরিক। আর পাঁচজনের অবস্থান মালয়েশিয়ায়। তালিকাভুক্তদের ১০০ জন আবার বিভিন্ন মানব পাচার মামলার আসামি। এর মধ্যে উখিয়া-টেকনাফ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ভাই ও ভাগিনার নামও রয়েছে। আছেন কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ও তাদের স্বজন। তবে এমন তালিকা পাঠানোর কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পাচার রোধে সোচ্চার কক্সবাজারের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। এ প্রসঙ্গে মানব পাচারবিরোধী জেলা টাস্কফোর্সের সদস্য আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা জানান, মানব পাচারকারীদের অর্থের লেনদেন অনুসন্ধানের দাবি দীর্ঘদিনের। এখন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। মানব পাচারের মতো জঘন্য অপরাধে জড়িতদের আইনের আওতায় নেওয়া না হলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট অরূপ বড়ুয়া তপু জানান, মানি লন্ডারিং আইন ২০১২ এর ধারার বিভিন্ন উপ-ধারায় দেখা যায় মানব পাচারে জড়িত ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেন থাকলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে। এ ছাড়া সরকার চাইলেই এসব ব্যক্তির টাকা ক্রোক ও ফ্রিজ করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আসা ৪৬১ জনের তালিকায় রয়েছে— বহুল সমালোচিত কারান্তরীণ টেকনাফের স্থানীয় এমপি আবদুর রহমান বদির ছোট ভাই মৌলভী মুজিবুর রহমান, ভাগিনা ও সাবরাং পুরানপাড়ার আবদুর রহমান প্রকাশ, আবদুর রহমানের পুত্র সাহেদুর রহমান নিপু, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের পুত্র দিদার আহমদ, টেকনাফের শামলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ, টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আলম, রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ, রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম ওরফে কালাম মেম্বার। এ ছাড়াও তালিকায় বর্তমান ও সাবেক ইউপি সদস্য রয়েছেন বেশ কয়েকজন।

সর্বশেষ খবর