শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ

কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে ৮৫৭ কোটি ঋণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ৮৫৭ কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান পর্যায়ে ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ ওয়াহিদুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন—দুদক। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন ও উপপরিচালক সামসুল আলমের নেতৃত্বে সংস্থার একটি দল জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। টানা বেলা আড়াইটা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেন তারা। দুদক সূত্র জানায়, জনতা ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সহায়তায় এম এইচ গোল্ডেন জুট মিলস লিমিটেডসহ আটটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ব্যাংকটির ৮৫৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া যায়। চলতি বছরের জুনে অভিযোগটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে উপপরিচালক সামসুল আলমকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। সূত্রমতে, আত্মসাৎ ঘটনায় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের শীর্ষ একজন ব্যক্তি, একজন মহাব্যবস্থাপক, একজন ঋণখেলাপিসহ ১৪ জনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য রয়েছে দুদকের হাতে। দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের শীর্ষ এক কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ৮৫৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে এম এইচ গোল্ডেন জুট মিলস লিমিটেডসহ আটটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ওই শীর্ষ কর্মকর্তার একাধিক বেনামি কাগুজে প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেড, সুপ্রভ স্পিনিং মিলস লিমিটেড, জারা লেবেল অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, মেসার্স এননটেক্স লিমিটেড, শবমেহের স্পিনিং মিলস লিমিটেড, সুপ্রভ রোটর স্পিনিং লিমিটেড ও শাইনিং নিটটেক্স লিমিটেড। জনতা ব্যাংকের করপোরেট শাখার গ্রাহক মেসার্স এম এইচ গোল্ডেন জুট মিলস লিমিটেড। মোহাম্মদ ইউছুফ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পরিচালক হিসেবে রয়েছেন হুমায়ুন কবির চৌধুরী। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ৭ জানুয়ারি এ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৭০ কোটি টাকা হাইপো ঋণ মঞ্জুর করেন ব্যাংকটির ওই শীর্ষ কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান স্থিতি ৮৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বন্ধকী সম্পত্তির অতিমূল্যায়ন দেখিয়ে ঋণের নামে ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে এ টাকা। সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন ও পরিচালক মো. আবু তালহা। ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর ১৮০ কোটি টাকা ‘সিসি হাইপো ও ১৮০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করা হয় জনতা ব্যাংকের করপোরেট শাখা থেকে। বর্তমানে এর স্থিতি ১৯৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। নামমাত্র সম্পত্তি বন্ধক রেখে এ টাকাও আত্মসাৎ করা হয়। সুপ্রভ স্পিনিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জালালউদ্দিন ও পরিচালক এম আবদুল্লাহ সিদ্দিক। ২০১৪ সালের ১১ মে প্রতিষ্ঠানটির নামে প্রকল্প ঋণ মঞ্জুর হয় ১১৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। জনতা ব্যাংক করপোরেট শাখা থেকে নেওয়া এ ঋণের বর্তমান স্থিতি ১৪২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। জারা লেবেল অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের নামে একই বছর ২২ জানুয়ারি প্রকল্প ঋণ মঞ্জুর হয় ৫৩ কোটি ২ লাখ টাকা। বর্তমানে এর স্থিতি ৬২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। কোনো কিস্তি পরিশোধ না করে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করা হয়। এননটেক্স লিমিটেডের নামে ২০১৪ সালের ১৮ এপ্রিল ৯২ কোটি ৯ লাখ টাকা প্রকল্প ঋণ মঞ্জুর হয়। এর স্থিতি ৯৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। মেসার্স শবমেহের স্পিনিং মিলসের নামে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ৯১ কোটি ৪৩ লাখ। সুপ্রভ রোটর স্পিনিংয়ের নামে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ১৮০ কোটি টাকা। মেসার্স শাইনিং নিট টেক্সের প্রকল্প ঋণের নামে হাতিয়ে নেওয়া হয় ৮৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

সর্বশেষ খবর